ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বললেন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ডেনমার্কে জন্ম নেয়া এই মিডফিল্ডার, অচিরেই আমরা ভারতকে ছাড়িয়ে যাব

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো পাল্টে গেছে বাংলাদেশের ফুটবল। ইংলিশ কোচ জেমি ডে ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া চোখ ধাঁধানো এই সাফল্যের রূপকার। ২০১৬ সালের অক্টেবর মাসে ভুটানের কাছে হারের পর নির্বাসনে চলে যায় লাল-সবুজের ফুটবল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ থেকে। ১৭ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে থাকার পর বাংলাদেশের ফুটবলে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন যে কোন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে জানেন বেঙ্গল টাইগার্সরা। এমনই জানালেন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। বর্তমানে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল খেলতে তিনি অবস্থান করছেন চট্টগ্রামে। সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুরে হোটেল আগ্রাবাদে ২৯ বছর বয়সী জামাল শুনিয়েছেন নানা অজানা কথা। প্রশ্ন ॥ টানা খেলার কারণে কী আপনি ক্লান্ত? জামাল ভুঁইয়া ॥ হ্যাঁ কিছুটা ক্লান্ত। গতকালের (বুধবার) ম্যাচের সময় ক্লান্ত ছিলাম। আসলে পুরো মাসটাই খুব ব্যস্ততায় কাটছে। অনুশীলন, বিশ্বকাপর ম্যাচ, এখনকার ম্যাচ, ট্যুর। খুব লম্বা একটা মাস বলা যায়। এজন্য ক্লান্ত বলা যায়। ইয়ং এলিফ্যান্টের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খুব কঠিন ছিল। ওরা ইয়াং টিম, এ কারণে আমাদের দৌড়াতে হয়েছে বেশি। প্রশ্ন ॥ এই যে টানা খেলছেন এতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য ঝুঁকি কিনা? জামাল ॥ ‘হ্যাঁ ঝুঁকি তো অবশ্যই আছে। এজন্য মারুফ স্যার (মারুফুল হক, কোচ চট্টগ্রাম আবাহনী) সবসময় বলছে ঠিক থাকার, ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য। এজন্য ভাল খেতে, স্ট্র্যাচিং করতে আইস বাথ নিতে বলে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলেছেন ভাল ঘুম।’ প্রশ্ন ॥ সামনে আরও বেশি ব্যস্ততা। এসএ গেমস, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, ওমানের বিরুদ্ধে ম্যাচ। আপনার ভাবনা কী? জামাল ॥ হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ তো দেশের জন্য ভাল। যত বেশি খেলা হবে তত বেশি মানুষ ফুটবলের সঙ্গে জড়িত থাকবে। মানুষ আনন্দ পাবে। এটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য ভাল। গত বছর তো পাঁচটা মাস গেছে কোন ম্যাচ ছিল না, ট্রেনিং ছিল না। মানুষ এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে। এবার অন্তত মানুষ অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না। তারা খেলার সঙ্গে থাকতে পারবে। সবমিলিয়ে আমি খুশি। প্রশ্ন ॥ বাংলাদেশ ১৭ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল ভাল খেলছে। এটার রহস্য কী? জামাল ॥ এই জার্নিটা শুরু হয়েছে এ্যান্ড্রু অডকে (বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ) দিয়ে। আমি তখন জাতীয় দলে ছিলাম না। জাতীয় দল তখন খারাপ অবস্থায় ছিল। এ্যান্ড্র্র্রু যখন আসে তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল তুমি জাতীয় দলে খেল না কেন। আমি বলেছি, আমাকে তো ডাকে না; আমি খেলব কেন। তারা আমাকে ডাকলে আমি কেন খেলব না। কথাবার্তা বলার পর এ্যান্ড্রু আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সে এখানে থাকেনি। এরপর জেমি ডে আসল। ও আসার আগেই আমাকে ম্যাসেজ করেছিল। বলেছিল তোমার ওপর আমি আস্থা রাখি। যা হওয়ার হয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। তুমি অধিনায়কত্ব করবা। আশাকরি এক সঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য ভাল কিছু হবে। সে আমার ওপর আস্থা রাখছে। আমিও চেষ্টা করছি সেটার প্রতিদান দিতে। এই জার্নিটা জেমি ডে’র সময় বেশ ভালই বলা যায়। আমরা বেশ ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি। আমার মনে হয়, মানুষও বেশ বিস্মিত হয়েছে। তারা আমাদের খেলা দেখছে। আমরা গোল অনেক কম হজম করছি। হয়তো অনেক বেশি গোল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি, সযোগ কাজে লাগানো যায়নি। এটা আবার সবাই জানে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে যারা খেলে সবাই বিদেশী স্ট্রাইকার। ওরাই গোল করে। লীগের এই একটাই নেতিবাচক দিক, যার প্রভাব জাতীয় দলে পড়ে। প্রশ্ন ॥ ইয়ং এলিফ্যান্টের সঙ্গে বাংলাদেশ টিমের কোন মিল পেয়েছেন? জামাল ॥ হ্যাঁ কিছু বিষয়ে মিল আছে। জাতীয় দল হিসেবে আমরা সবসময় আমাদের চেয়ে বড় দলের বিরুদ্ধে খেলেছি। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছি ঠিক এভাবে আমরা খেলতে পারিনি। ছোট দলগুলোকে সবসময় কাউন্টার এ্যাটাক নির্ভর খেলতে হয়। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এলিফ্যান্টের মতো একটা দুইটা গোল যদি কোনমতে পাওয়া যায়। এটা ধরে রাখার চেষ্টা থাকে। সুযোগ বুঝে আরও এ্যাটাক করতে হয়। এটা আসলে কৌশলগত মিল। প্রশ্ন ॥ আপনি কোন্ পজিশনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? জামাল ॥ কোচ যেভাবে খেলাতে চায় আমি সেভাবে খেলি। যা বলে তাই করি। রাইটে বললে রাইটে খেলি; লেফটে বললে লেফটে খেলি। তবে আমার পছন্দের পজিশন সেন্ট্রাল মিডফিল্ড। প্রশ্ন ॥ আপনি তো বাংলাদেশের ফুটবলের সুপারস্টার। এই বিষয়টা কেমন উপভোগ করছেন? জামাল ॥ হ্যাঁ ভাল লাগছে, ভাল খেলছি। তবে বিষয়টা একেবারে সহজও না। কারণ যে কোন কিছু যে কোন সময় বদলে যেতে পারে। এজন্য সবসময় নিজের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। আমি জানি মানুষের আমার ওপর প্রত্যাশা অনেক। আমিও তদের প্রত্যাশা মেটাতে চাই। আমাকে অন্তত আগেরদিনের চেয়ে পরেরদিন ভাল করতে হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের ফুটবল এখন ওপরের দিকে যাচ্ছে। আমি এটার অংশ হয়ে থাকতে চাই। এই মুহূর্তে আমি সময়টা উপভোগ করছি। প্রশ্ন ॥ সতীর্থদের কাছে আপনি কেমন অধিনায়ক? জামাল ॥ ওরা (সতীর্থ) জানে আমি সিরিয়াস থাকি। ওদের সঙ্গে কথা বলি ওরা শোনে। আবার ওরা বললে আমিও শুনি। টিমের বন্ধনটা খুব দরকারি জিনিস। ম্যাচের মধ্যে দলের জন্য, সতীর্থের জন্য সেরাটাই দিতে হয়। সফলতার জন্য আসলে এই বন্ধনটা খুব জরুরী। আর অধিনায়ক হিসেবে আমারও দায়িত্ব সবাইকে বলা যে, কোচ কি চায়। আমি ওদের বলি যে, তোমরা যদি কথা ঠিকমতো না শোন শাস্তি পেতে হবে। প্রশ্ন ॥ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে জেমি ডে কেমন? জামাল ॥ জেমি ইয়াং কোচ। আগে ও ফুটবল খেলেছে। সে জানে খেলোয়াড়রা আসলে কি অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায় বা কি হতে পারে। সে আমাদের খেলোয়াড়দের অনেক সহযোগিতা করে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে জোরালো ভাষায় কথা বলে। সব খেলোয়াড়দেরও তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। প্রশ্ন ॥ শেখ কামাল ফুটবলে আগামীকাল (আজ) মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলবেন। ওদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? জামাল ॥ ভিডিও এ্যানালাইসিস করব আজ (গতকাল)। দেখব ওরা কেমন খেলে। অবশ্যই ওদের হারিয়ে আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আমি চাই ভারতীয় টিমকে ছিটকে দিতে। এটা আমার জন্য এক ধরনের অনুুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে যে ভারতীয় টিমকে হারাতে হবে। আর যারা এখনও খেলার সুযোগ পায়নি তারা খেলতে মুখিয়ে আছে। নিজেদের প্রমাণ করতে চাই। কোচও তাদের ওপর আস্থা রাখবে আশাকরি। প্রশ্ন ॥ ভারতীয় ক্লাবকে ছিটকে দিতে চাওয়ার কারণ কী? জামাল ॥ এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত একটা চাওয়া। ভারত সবসময় মনে করে যে, ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এই ম্যাচটা (আজ চট্টগ্রাম আবাহনী-মোহনবাগান ম্যাচ) আমাদের জন্য সুযোগ যে, না তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে না। এটা প্রমাণ করার সুযোগ। আমরাও দেখাতে চাই যে আমরা খেলতে পারি। এটাকে ঠিক দম্ভ করে বলছি না। মানুষও দেখবে যে ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে না। ধারণাটি যেন ভুল প্রমাণ করতে পারি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা যে ওদের থেকে ভাল এটা বুঝিয়ে দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ।
×