ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধানের অভিমত

মানসিকভাবে দুর্বল তরুণরাই জঙ্গীবাদে ঝুঁকছে

প্রকাশিত: ১১:১১, ২০ অক্টোবর ২০১৯

মানসিকভাবে দুর্বল তরুণরাই জঙ্গীবাদে ঝুঁকছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, মানসিকভাবে দুর্বল তরুণরাই জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকছে। তিনি জানান, সমসাময়িক সময়ে ইন্টারনেট জগতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ প্রস্তাবে এরা জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা পিস টক’ শীর্ষক কর্মসূচীর উদ্বোধনী উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব একথা বলেন। উগ্রবাদ নির্মূলে সেন্টার ফর সোশ্যাল এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিসার্ফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচীতে সার্বিক সহযোগিতা করবে সিটিটিসি এবং অর্থায়ন করছে ইউএসএআইডি। মনিরুল ইসলাম জানান, সারাবিশ্বই এখন সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ঝুঁকির মাত্রা অত্যন্ত কম। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর অনেক তরুণের ঘর থেকে পালিয়ে জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়। জঙ্গীবাদ নির্মূলে কাজ চললেও ঝুঁকি এখনও রয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূলে অনেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন। পরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই মনে করছেন, এই বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু এই বিপদ কেটে যায়নি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, জঙ্গীবাদের যারা রিক্রুটার, মটিভেটর তারা ইন্টারনেটে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে। যাদের ভেতরে এ্যান্টি বডি কম, মানসিকভাবে দুর্বল ও দেশপ্রেম নেই, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ নেই, মতাদর্শিক জায়গায় ধারণা নেই, টলারেন্স নেই, জীবনের বাস্তবতা মেনে নিতে না পেরে যারা শর্টকাট পথ খুঁজছে তারাই উগ্রবাদে জড়াচ্ছে। তিনি জানান, ইন্টারনেটে আকর্ষণীয় প্যাকেজ দেখে মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধহীন তরুণরাই জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এটা ১৫ থেকে ৩০ বছরের (বয়সসীমার) মধ্যে বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, হলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গীবাদবিরোধী কাজ বেশি হচ্ছে যা আগে খুব একটা ছিল না। আমাদের এটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের একটি জঙ্গীবাদবিরোধী এ্যান্টিবডি তৈরির কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সিসার্ফের নির্বাহী পরিচালক শবনম আজিম জানান, ধর্মীয় জঙ্গীবাদ বিষয়টিকে সামনে রেখে সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করাই তাদের কর্মসূচীর লক্ষ্য। তিনি জানান, তরুণরাই বেশি সহিংস উগ্রবাদে ঝুঁকে। আর ক্ষতি পুরো জাতির। কোন শিক্ষার্থী যাতে উগ্রবাদে না জড়ায়, সেজন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। এরপর সামাজিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্রবাদ ও মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিসার্ফ সচেতনতামূলক কাজটিই করতে চায়। যে কাজগুলো মানুষকে জঙ্গীবাদে নিয়ে যায় সিসার্ফ ‘ঢাকা পিস টক’ এর মাধ্যমে সেগুলো শনাক্ত করবে ও সমাধানের পথও দেখাবে। শবনম আজিম জানান, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দক্ষ সাংবাদিকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিসার্ফ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি কৌশলগত চিন্তক, একাডেমিকদের প্ল্যাটফর্ম। তিনি জানান, বিভিন্ন পেশার ৩৬ জনকে নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করে ঢাকায় ১২টি রাউন্ড টেবিল বৈঠক করব। এর সঙ্গে ১২টি আলাদা আলাদা গবেষণাও হবে। এরপর ১২টি ইস্যুতে অনুষ্ঠেয় ডায়ালগে অংশগ্রহণ করবেন অভিভাবক, শিক্ষক, বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, সরকারী প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক এনজিও, থিংক ট্যাংক, নারী নেত্রী, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, আদিবাসী গ্রুপ, তরুণসমাজ, লেখক, ব্লগারসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিরা। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক জানান, উগ্রবাদের নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। কেননা একেক পরিস্থিতিতে এককভাবে উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোন ছকেই এই উগ্রবাদকে সরলীকরণ করা যাবে না। সহিংস উগ্রবাদ বা এর ঘনীভূত রূপ সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদী জটিল কাজ কোন সুনির্দিষ্ট বাহিনী, সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব না। এজন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সিসার্ফের নির্বাহী পরিচালক শবনম আজিম আরও জানান, শুধু যে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে সহিংস উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু নয়। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মূল্যবোধ এরকম নানান বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। কী কারণে আমাদের তরুণরা সহিংস উগ্রবাদের কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কেউ যেন উগ্র জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে, সে লক্ষ্যটাই থাকবে আমাদের।
×