ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার উৎখাতে উস্কানি দিচ্ছে ;###;দেয়ালে লাগাচ্ছে পোস্টার ;###;জঙ্গীবাদী নিজস্ব সংবিধান বিতরণ করছে

হিযবুত ফের সংগঠিত হচ্ছে ॥ আইএসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হিযবুত ফের সংগঠিত হচ্ছে ॥ আইএসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জেএমবি আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের মতো জঙ্গী সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকারের তৎপরতার মধ্যেই নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙ্গে খিলাফত রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে সংগঠিত হচ্ছে হিযবুত। রাজধানীসহ দেশের বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজগুলো টার্গেট করে প্রকাশ্যে লাগানো হচ্ছে সরকার উৎখাতের আহ্বান সংবলিত পোস্টার। যেখানে জঙ্গী সংগঠনটি তাদের মতাদর্শের সরকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারকে উৎখাতে সশস্ত্র বাহিনীকে উস্কানি দিচ্ছে। কর্মী সংগ্রহে কৌশলে বিতরণ করা হচ্ছে সংগঠনটির জঙ্গীবাদী নিজম্ব সংবিধান। এদিকে আদালত থেকে একের পর এক জামিন নিয়েও জঙ্গীবাদে সক্রিয় হচ্ছে হিযবুত জঙ্গীরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ জঙ্গী সংগঠনটির গোপন তৎপরতা নিয়ে জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক সব চিত্র। জঙ্গী সংগঠনের এমন তৎপরতায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা হিযবুত তাহরীরকে চরম উদ্বেগের কারন হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। যারাই সংগঠনটির সদস্যদের মদদ দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। আর আদালত থেকে যাতে জঙ্গীরা জামিন নিতে না পারে সেজন্য মামলা পরিচালনা, তদন্তসহ সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপগুলো সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। কেন জামিন পাচ্ছে? জামিন পেয়ে আবার জঙ্গীবাদে কিভাবে জড়িয়ে পড়ছে তা খতিয়ে দেখে এ্যাকশন নিতে হবে। হিযবুত তাহরীর নিয়ে উদ্বেগের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকে এই সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। আছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকও। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বাংলাদেশে হুজি বা জেএমবির মতো নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্য জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের কার্যক্রম শহরাঞ্চলের বাইরে অনেক বিস্তৃত। এছাড়া এসব সংগঠনে অশিক্ষিত ও তুলনামূলকভাবে দরিদ্র পরিবারের লোজনও আছেন। তবে হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী। অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান। হিযবুত তাহরীরের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ শিক্ষার্থী কিংবা পেশাজীবী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষকদের মধ্যে হিযবুত তাহরীরের প্রভাব অনেক বেশি। এখানে সংগঠনটির অর্থনৈতিক যোগানদাতা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকরাও আছেন। তবে এ সংগঠনটির নেটওয়ার্ক কেবল বাংলাদেশে বিস্তৃত নয়। হিযবুত তাহরীরকে বলা হয় এই মুহূর্তে বিশে^র সবচেয়ে বেশি সদস্য নির্ভর জঙ্গী সংগঠন। নিষিদ্ধ এই সংগঠন বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরদারির মধ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে তৎপরতা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী কাউন্টার টেররিজম একচেঞ্জ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় হিযবুত তাহরীরের উপস্থিতি মাথাব্যথারও কারণ হয়ে উঠতে পারে। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস যখন উন্মত্ততা ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বর্বর নৃশংসতায় ব্যস্ত, তখন হিযবুত তাহরীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের বৈশ্বিক কাঠামো গড়ে তোলায় বিশেষ মনোযোগী। কট্টর ইসলামপন্থায় বিশ্বাসী তরুণ ও আরব বিশ্বের গভীর সমর্থনের ওপর নির্ভর করে এ কাঠামো তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে সংগঠনটি। নজরদারি এড়িয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে মতাদর্শ প্রচার করছে সংগঠনটি এবং এরই মধ্যে ৫০টি দেশে তাদের সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে। বাংলাদেশসহ বিশে^র ২৩টি দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ। বিশ্বজুড়ে হিযবুত তাহরীরের সদস্য সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। আইএসের সদস্য সংখ্যাও এত বেশি নয়। হিযবুত তাহরীরের একটি সামরিক শাখা রয়েছে। এর নাম হরকত-উল-মুহোজিরিনফি ব্রিটানিয়া। এর সদস্যদের রাসায়নিক, জীবাণুনির্ভর ও জীববিজ্ঞানভিত্তিক যুদ্ধশাস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ কারণে আইএসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আশঙ্কা হিযবুত তাহরীরের রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৫২ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত এ দলটির সদর দফতর লন্ডনে। মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর শাখা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংগঠনটির বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। মার্কিন সাময়িকী কাউন্টার টেররিজম একচেঞ্জ বলছে, আইএস ও হিযবুত তাহরীরের মধ্যে মতাদর্শগতভাবে বিশেষ তফাৎ নেই। যারা আইএসকে সমর্থন করেন, তারা হিযবুত তাহরীরকেও সমর্থন করেন। তবে আইএসের সঙ্গে তাদের কৌশলগত পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের চেয়ে তরুণদের আকৃষ্ট ও দীক্ষিত করতেই তারা বেশি আগ্রহী। এর মাধ্যমে তারা সামাজিক মূলধন বাড়িয়ে চলছে। অথচ এমন একটি জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা দমনে দেশে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষভাবে তৎপর এ সংগঠনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দফতরগুলোর কোন পদক্ষেপই নেই। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য জঙ্গী সংগঠনের বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়ে কাজ করলেও গত কয়েক বছরে এ সংগঠনের বিষয়ে সেভাবে নজর দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে জঙ্গীদের একের পর এক জামিন নিয়ে আবার জঙ্গীবাদে সক্রিয় হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞসহ খোদ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এজন্য র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ একাধিকবার আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, টাকা দিলেই জঙ্গীদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানো যাবে না, জঙ্গীবাদকে আইনী সহায়তা দিলে বিষয়টি হবে আত্মঘাতী। হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর থেকে ৫১২ জন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ জন জামিনে আছে, যাদের অধিকাংশই পলাতক আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর কিছুদিন চুপচাপ ছিল হিজবুত তাহরীর। এরপর বিভিন্ন সময় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় খুব একটা সফল হয়নি। যদিও কার্যক্রম কখনোই থেমে থাকেনি বলেও জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে গত এক বছরে হিযবুত তাহরীর নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে উল্লেখ করে তারা বলছেন, এই সময়ে অনলাইনে হিযবুত সক্রিয় থেকেছে সবচেয়ে বেশি। রীতিমতো অনলাইনে সম্মেলনও তারা করেছে। মালয়েশিয়া থেকে অনলাইনে সম্মেলনও করেছে সংগঠনটির সদস্যরা। হিযবুত জঙ্গীদের নিয়ে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কর্মকর্তারা বলছেন, এ জঙ্গী সংগঠনটির সাম্প্রতিক তৎপরতা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। গত ৫ বছরের ঢাকাসহ সারাদেশে আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্ত হয়েছে হিযবুতের অন্তত সাড়ে চারশ সক্রিয় সদস্য। মুক্ত হয়েই তারা পালিয়ে গেছে অনায়াসে। শতাধিক হিযবুত সদস্য বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সংগঠনকে সক্রিয় করছে বলেও তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ক্রমেই হিযবুত তাহরীরের তৎপরতা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। তাদের এ উদ্বেগকে সত্য প্রমাণ করেই যেন নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে হিযবুত। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে খিলাফত রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে সংগঠিত হচ্ছে হিযবুত। প্রকাশ্যে লাগানো হচ্ছে সরকার উৎখাতের আহবান সংবলিত পোস্টার। কর্মী সংগ্রহে কৌশলে বিতরণ করা হচ্ছে সংগঠনটির জঙ্গীবাদী নিজস্ব সংবিধান। যেসব কাজে সংগঠনটি তাদের মতাদর্শের সরকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারকে উৎখাতে সশস্ত্র বাহিনীকে উস্কানি দিচ্ছে। অন্তত দুই বছর আগে এক অভিযানে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার দুই হিযবুত জঙ্গীর কাছে ৪০ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা পেয়েছিল পুলিশ, যার ওপর লেখা রয়েছে ‘খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান’। এরপর কৌশলগত কারনে সংগঠনটি তাদের এ উগ্রবাদী সংবিধান প্রচার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছিল। গত ছয় মাস ধরে সংগঠনটির কর্মী সংগ্রহসহ কার্যক্রম বিস্তৃত করতে যে প্রচারাভিযান চলছে তার মধ্যে আছে এ সংবিধান বিতরণ ও সরকারবিরোধী পোস্টার, লিফলেটসহ ছোট পুস্তিকা বিতরণ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাড়া মহল্লা ও মসজিদে ৫ থেকে ৮ জনের দলে ভাগ হয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের চেহারা লুকাতে নিজেদের একটি ‘রাজনৈতিক দল’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন হিযবুতের সদস্যরা। এ সংবিধানের ওপর লেখা রয়েছে ‘খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান’। যেখানে বাঙালির রাষ্ট্রভাষা বদলে দেয়ার পাশাপাশি দেশের সব নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। হিযবুতের পরিকল্পিত রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো, বিচার বিভাগ এবং নাগরিকদের কর্মকা- কেমন হবে তা বলা হয়েছে কথিত এ সংবিধানে। বলা হয়েছে, ইসলামের ভাষা হচ্ছে আরবি। একমাত্র আরবী ভাষাই রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা হবে এককেন্দ্রিক। শাসক কিংবা রাষ্ট্রের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। শাসকদের জন্য চারটি পদ নির্ধারিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- খলিফা, মুওয়াউয়িন তাফউয়িদ (প্রতিনিধিত্বকারী সহকারী), ওয়ালী (গবর্নর) ও আ’মীল (মেয়র)। বাকি সব পদ হবে কর্মচারীর। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সব মুসলমান নাগরিকের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ১৫ বা তদুর্ধ সব পুরুষের ‘জিহাদের’ প্রস্তুতিমূলক সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ‘ফরজ’। খিলাফত রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী হবে একটি একক বাহিনী, পুলিশ হবে তার শাখা বিশেষ। সশস্ত্র বাহিনীকে ইসলামী সেনাবাহিনী হিসেবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় যুদ্ধ উপকরণ ও সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ সংবিধান অনুসারে বিচার ব্যবস্থায় কোন রায়ের বিরুদ্ধে আপীল কিংবা রায় খারিজের কোন বিধান রাখা হয়নি, প্রতিটি রায়ই চূড়ান্ত। ঘোষিত রায় তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারী কলেজ থেকে শুরু করে বড় বড় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাতের আঁধারে কখনও দিনের বেলায় দেয়ালে লাগানো হচ্ছে সরকারবিরোধী উস্কানিমূলক উগ্রবাদী পোস্টার। কৌশলে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের কথিত সংবিধান। এছাড় পোস্টার ও প্রচারপত্রে ‘খিলাফত রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীকেও উস্কানি দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর এবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সময় রাতের আঁধারে মধুর ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন ভবনে নির্বাচনবিরোধী পোস্টার লাগিয়েছিল হিযবুত তাহরীর। তখন এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির মধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাশের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের সেই পোস্টার অপসারণ করা হয়েছিল। তবে এখন নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের আশপাশের এলাকা নিলক্ষেত, পলাশীতে বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে হিযবুত তাহরীর পোস্টার দেখা গেছে। এবার পোস্টারে কাশ্মীর ইস্যুকে পুঁজি করে সরকার বিরোধী উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অপর পোস্টারে ‘আসন্ন খিলাফত মুক্তির একমাত্র পথ’ শিরোনামে সরকারবিরোধী বিভিন্ন কথা লেখা রয়েছে। পোস্টারে ‘নির্বাচন জুলুমের শাসন’ উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, এতে জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আনবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলছিলেন, শিক্ষাঙ্গনে কোন মৌলবাদী জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর কোন স্থান হবে না। শিক্ষাঙ্গন প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার স্থান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই যুদ্ধে আমরা আছি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় হোক কিংবা তার আশপাশেই হোক হিযবুত তাহরীরসহ কোন জঙ্গী সংগঠনের স্থান হবে না। কোন জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী তৎপরতা চালাতে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। তবে আমি মনে করি বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির সুযোগেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলো পোস্টার লাগানোর পেয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ যে কোন মৌলবাদী জঙ্গীবাদী সংগঠনকে প্রতিহত করার জন্য সচেষ্ট আছে, থাকবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। বুয়েটের বিভিন্ন ভবনে লাগানো হয়েছে সরকারবিরোধী উস্কানিমূলক পোস্টার। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। বুয়েটের রেজিস্ট্রার ড. এস এম হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের এখানে পোস্টার লাগানো হয়েছে এমন স্থানে যেন সহজে কেউ না দেখে। তবে আমরা এ ধরনের কিছুৃ হলেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি দ্রুত। বুয়েট প্রশাসন যে কোন অনাকাঙ্খিত তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের এভাবে সক্রিয় হওয়া অবশ্যই উদ্বেগের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়টিতে নজর দেয়া জরুরী। জানা গেছে, এবার পোস্টার লাগানোর পরপরই বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়ে তা তুলে ফেলার উদ্যোগ নেয় বুয়েট ছাত্রলীগ। বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী উস সানী বলছিলেন, একটি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের এমন তৎপরতা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন এলাকা থেকেও আমরা খবর পাচ্ছি সেখানে সরকারবিরোধী এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে। পলাশী, নিলক্ষেত ধানম-িসহ অনেক এলাকাতেই এটা হচ্ছে। যেখানে লাগানো হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এটা তাদের নিজস্ব কর্মী ও সদস্যরা নিজেরাই এ কাজে সক্রিয়। শিক্ষাঙ্গনে যে কোন জঙ্গীবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সক্রিয় থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রগতী বিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী যে কোন অপতৎপরতা মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত আছে। কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়। রাজধানীর ধানম-ি, ফার্মগেট, জাতীয় সংসদ ভবনের আশপাশে শুক্রাবাদ, মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হিযবুত তাহরীরকে পোস্টার লাগানো ছাড়াও লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে। ধানম-ির একটি মসজিদে সম্প্রতি লিফলেট বিতরণ করা হয়।
×