ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসনের ভাবমূর্তি উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৯ আগস্ট ২০১৯

প্রশাসনের ভাবমূর্তি উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে সরকার

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকার ওয়ারীর ডিসি ইব্রাহিম খানের দুর্নীতি ও জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের অনৈতিক কার্যকলাপ ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সরকারের ভেতরের প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে এ ধরনের কর্মকর্তারা। প্রশাসনের এসব দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মাদকসেবী, অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রশাসনে এ ধরনের আরও যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নজরদারি হচ্ছে দুর্নীতিবাজ, কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অসৎ কর্মচারীর কর্মকা-ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীর তার নিজ জেলায় প্রশাসন কার্যালয়ের ভেতরে বিশ্রাম কক্ষে তারই অধীন অফিস সহায়ক (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনাটি ইমেজ সঙ্কটে ফেলেছে সিভিল প্রশাসনকে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ঢাকার ওয়ারীর ডিসি ইব্রাহিম খানকে বরখাস্তের ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনের ওপর বজ্রাঘাতের মতো এসে লাগে। প্রশাসনের জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ দুই শীর্ষ কর্মকর্তার এ ধরনের ঘটনার পর ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে এ ধরনের আরও অনেক কর্মকর্তা আছে যাদের অভিযোগ আছে, অথচ প্রমাণিত হয়নি, তাদের তালিকা তৈরি করছে সরকার। সূত্র মতে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সামসুল হক খানের বীরত্বের জন্য তার মা মাসুদা খানকে ঢাকার নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে চার কাঠার একটি প্লট ইজারা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ দেয়া ওই প্লটটির জমির দখল বজায় রাখতে ব্যর্থতা, দখলদারদের সহযোগিতা, উৎকোচ গ্রহণ, দায়িত্বে অবহেলা ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাকে মিথ্যা তথ্য দেন তৎকালীন লালবাগের ডিসি ইব্রাহিম খান। লালবাগ জোন থেকে ওয়ারী জোনে বদলি হয়ে আসার পর তাকে বরখাস্তের ঘটনাটি বোমা ফোটার মতো আঘাত করে পুলিশ প্রশাসনকে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্তের ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে, যখন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের অনৈতিক কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ওএসডি করা হয়। এ ঘটনায় জামালপুরের ডিসি রাতের অন্ধকারে সরকারী বাসভবন ছেড়েছেন। ওএসডি হয়েছেন, গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি, এমন সব ঘটনায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে একটি নেতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের এক কর্মকর্তা বলেন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে হাতেগোনা কয়েক কর্মকর্তার দুর্নীতি ও দুষ্ট কেলেঙ্কারি। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মাদকসেবী, অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুরু করা হয়েছে নজরদারি। ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়ারীর ডিসি ইব্রাহিম খানের আগে আলোচনায় আসে বিতর্কিত ডিআইজি মিজান, সোনাগাজীর ওসি মোজাম্মেল, পুলিশ সদর দফতরের গাজী মোজাম্মেলসহ কয়েক পুলিশ কর্মকর্তার নাম। দুর্নীতিবাজ, দুশ্চরিত্র, বিতর্কিত ডিআইজি মিজান কা-ের ঘটনার প্রায় একই সময়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোজাম্মেলের ঘটনা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য নেতিবাচক বার্তা বয়ে আনে। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার কেলেঙ্কারির রেশ না কাটতেই অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি জোরপূর্বক এক বয়োবৃদ্ধের জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে কয়েকটি জেলায় নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ঘুষ, দুর্নীতির টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও তদন্তনাধীন। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে সরকার। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ঘুষ, দুর্নীতি, অনৈতিক কার্যকলাপ, মাদক সেবন, জমি দখলে সহযোগিতা, সেবামূলক কর্মকা-ে অমনোযোগী-অসহযোগিতা প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ আসবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশনে যাওয়া হবে। ডিসি, তার উর্ধতন কিংবা অধস্তন যে কর্মকর্তাই হোক না কেন সরকার কারও অপকর্মের দায় বহন করবে নাÑ এটাই প্রশাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠিন বার্তা। প্রশাসনের হাতেগোনা কয়েক কর্মকর্তার দুর্নীতি, অনৈতিক কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভাবমূর্তি উদ্ধারের প্রশ্নে কোন আপোস করা হচ্ছে না।
×