ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্যানারি মালিকদের কাছে ১০ চেম্বারের পাওনা ৫৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 ট্যানারি মালিকদের কাছে ১০ চেম্বারের পাওনা ৫৮ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের কাঁচা চামড়া বিক্রি বাবদ বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে কাঁচা চামড়া বিক্রি বাবদ এই টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী হাজারীবাগ, লালবাগ, সাভার ও কামরাঙ্গীচরসহ বিভিন্ন এলাকার ট্যানারিগুলোতে ঢাকার বাইরের ১০ চেম্বারের পাওনা ৫৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে শতাধিক চেম্বারের মধ্যে শুধু ১০ চেম্বারের দুই শতাধিক ব্যক্তির ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাওনা টাকার পরিমাণ ৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ২ হাজার ৮৬৮ টাকা। এর মধ্যে নরসিংদীর মোঃ সিরাজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি ঢাকার হাজারীবাগ দুইটি ট্যানারির কাছে পাবেন প্রায় ৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে শেরপুরের আব্দুল আলীম ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার একটি ট্যানরিতে পাবেন ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। এটি সর্বনিম্ন পাওনার পরিমাণ। অন্যদিকে, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ীরা একক চেম্বার হিসেবে ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে কাঁচা চামড়া বিক্রি বাবদ সবচেয়ে বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। এই চেম্বারের সদস্যদের পাওনার পরিমাণ ২৬ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে কম পাওনা শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির। তাদের পাওনার পরিমাণ এক কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪১ টাকা। শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ট্যানারির মালিকদের কাছে কাছে পাওনা ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের ৫৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৫ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, সিলেট চেম্বারের ৫৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৫ কোটি ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এছাড়া নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার টাকা, টাঙ্গাইল চেম্বারের পাওনা ২৬ কোটি টাকা, বগুড়া চেম্বারের পাওনা ২ কোটি টাকা, ঝিনাইদাহ চেম্বারের পাওনা ৩ কোটি টাকা, বরিশাল চেম্বারের পাওনা ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, ভৈরব চেম্বারের ১২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং নওগাঁ চেম্বারের ৩৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। নরসিংদী জেলার জঙ্গা শিবপুর/বারৈচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়ার সবচেয়ে বেশি পাওনা টাকা বকেয়া রয়েছে। ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার দুই জন ট্যানারি ব্যবসায়ীর কাছে তার পাওনার পরিমাণ ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজধানী হাজারীবাগ এলাকার আনোয়ার ট্যানারির কাছে পাবেন ৪ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার টাকা, একই এলাকার আলী হোসেন ট্রেডার্সের কাছে পাবেন ১ কোটি ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। বগুড়ার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী শোকরানা। ঢাকা ট্যানারির কাছে তার ২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও ভৈরবের চামড়া ব্যবসায়ী সামসুল হক ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার এক্সিম লেদারের মালিক ইসমাইল হোসেনের কাছে পাবেন ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পাওনা বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। গত ২৫ আগস্ট আমরা বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের পাওনা টাকার তালিকা দিয়েছি। আগামী দু’য়েকদিনের মধ্যে এই পাওনা টাকা কিভাবে আদায় করা হবে, তা নিয়ে আরেকটি বৈঠক করব। ওই বৈঠকের পর আগামী ৩১ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের নেতাদের উপস্থিতিতে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পর বলা যাবে, পাওনা টাকা কবে নাগাদ এবং কিভাবে আদায় হবে। এর আগে, চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা আদায় নিয়ে ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার আড়তদারদের পাওনা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। ২৫ আগস্ট ও ২৯ আগস্ট চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পাওনা টাকার পরিমাণ ও পাওনা পরিশোধ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরও আগে, আড়তদারদের পাওনা আদায়ে গত ১৮ আগস্ট সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ও ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে চামড়া কেনাবেচায় সম্মত হন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
×