ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ কারিগরি দল সমীক্ষা চালাবে

এবার ভারতে বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 এবার ভারতে বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ভারতে বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকায় একটি পাঁচতারা হোটেলে সোমবার ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ এই প্রস্তাব দেয়। দেশে শীত মৌসুমে এখন ৬৫ ভাগ বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকে আর গ্রীষ্মে বন্ধ থাকে ৪৫ ভাগ। ভারত বড় দেশ হওয়ায় তারা এই বিদ্যুত বিক্রির সুযোগ করে দিতে পারে। এমন চিন্তা থেকেই এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বিদ্যুত বিভাগের একজন উর্র্ধতন কর্মকর্তা জানান, ভারত সম্প্রতি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্যের নীতি সংশোধন করেছে। যেখানে বিদ্যুত বিনিময়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভারত শুধু বিদ্যুত রফতানিই নয় প্রয়োজনে আমদানিও করতে পারবে। জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। ভারত বলছে এ বিষয়ে একটি যৌথ কারিগরি দল বিস্তারিত সমীক্ষা চালবে। ভারতের যেসব অঞ্চল বাংলাদেশের নিকটবর্তী ওইসব এলাকায় চাইলে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুত নিতে পারে। বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সব থেকে বড় সমস্যা ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করা। দুই দেশের সঞ্চালন একীভূত করা বা সিনক্রোনাস ইন্টারকানেশন দুই ভাবে করা যায়। একটি সরাসরি অন্যটি হচ্ছে হাইভোল্টেজ সাবস্টেশনের মাধ্যমে। কিন্তু একটি ৫০০ মেগাওয়াটের হাইভোল্টেজ সাবস্টেশন নির্মাণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। এত বেশি ব্যয় করে ভারত বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুত নিতে আগ্রহী হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আরও উন্নত ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বাংলাদেশকে। বৈঠকে বলা হয় ভারতের বিদ্যুত সঞ্চালন ফ্রিকোয়েন্সি ৪৯ দশমিক ৯ হার্জ থেকে ৫০ দশমিক ১ হার্জ। সেখানে বাংলাদেশের ফ্রিকোয়েন্সি ৪৯ দশমিক ৫ থেকে ৫০ দশমিক ৫ হার্জ। অর্থাৎ ভারতের ফ্রিকোয়েন্সি দশমিক এক হলেও বাংলাদেশের তা এক। ভারতে বিদ্যুত রফতানি করতে হলে ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করে ভারতের পর্যায়ে উন্নীত হতে হবে। সিনক্রোনাস ইন্টারকানেশনকে একটি কম খরচের বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণ) প্রণব কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, এই পদ্ধতিতে সরাসরি একটি সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে আরেকটি জুড়ে দেয়া সম্ভব। অন্যদিকে হাইভোল্টেজ সাবস্টেশন নির্মাণে বিপুল পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন হয়। এখানে যা হয় না। জানতে চাইলে পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা বলছেন ভারতের সঞ্চালন ব্যবস্থা আমাদের থেকে অনেক উন্নত। আমরাও সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নতির চেষ্টা করছি। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যদিও এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। দুই দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা কাছাকাছি মানের না হলে সিনক্রোনাস ইন্টারকানেকশন সম্ভব নয়। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বন্ধুত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করতে চায়। দেশটির সরকারী খাত থেকে ওই বিদ্যুত দেয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দেশটির বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করে। এখন ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে ১০ বছরের ব্যববধানে বাংলাদেশ চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুত উৎপাদন করছে। যা এখন ভারত এবং নেপালে রফতানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের বড় দুই কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। এরমধ্যে পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র আগামী ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু করছে। ফলে এক সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন অনেকটা বেড়ে যাবে। এতে করে আরও বেশি কেন্দ্রকে অলস বসে থাকতে হবে। চাহিদা না থাকায় আর কোন ব্যয়বহুল হাইভোল্টেজ সাবস্টেশন নির্মাণ করতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। ফলে ত্রিপুরা থেকে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রকল্পটি বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে একটি হাইভোল্টেজ সাবস্টেশন নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। প্রসঙ্গত এখন ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি বাংলাদেশের জন্য যে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে তা সরাসরি এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আসবে। ফলে সেখানে নতুন করে কোন সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। ওই বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা বাংলাদেশের আদলেই তৈরি হবে। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বিদ্যুত সচিব সুভাস চন্দ্র গার্গ বলেন, দ্রুত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে বলে আমরা আশা করছি। রামপাল কেন্দ্র নির্মাণ কাজ গুছিয়ে এনেছে বলে জানান তিনি। বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমরা দুই পক্ষই এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করেছি যেখানে কাজ করলে উভয় দেশ লাভবান হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে পার্বতীপুর দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার চিন্তা করা হলেও এখন সৈয়দপুরের পূর্ব সাদিপুর সাবস্টেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এজন্য আরও সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। বৈঠকে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের সিডি, ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হলেও প্রতিনিধি দল বলছে বিষয়টি রাজস্ব বিভাগের। ফলে এক্ষেত্রে তাদের কিছু করণীয় নেই। বিষয়টি তারা রাজস্ব বিভাগকে অবহিত করবে। প্রসঙ্গত আমদানির শুরুতে ভারত সব ধরনের কর অব্যাহতি দিলেও এখন বাংলাদেশকে কর দিয়ে বিদ্যুত আনতে হচ্ছে। আইপিপি বিদ্যুতে বাংলাদেশ কর অব্যাহতি দিয়ে থাকে। ফলে একই ধরনের সুবিধা ভারতের কাছ থেকেও চাওয়া হচ্ছে।
×