ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খেতে খেতেও ফাঁসির আদেশে সই করতেন জিয়া

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২৫ আগস্ট ২০১৯

খেতে খেতেও ফাঁসির আদেশে সই করতেন জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতা দখলে রাখতে নির্বিচারে সেনাবাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এ সময় লোক দেখানো ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত মৃত্যুদ- কার্যকরের জন্য খাবার টেবিলে বসে এক হাতে খেতে খেতে ফাঁসির আদেশে সই করতেন জিয়া। তার পাঠানো ফাঁসির আদেশ পড়ে শোনানোই ছিল ট্রাইব্যুনালের কাজ। শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘ইতিহাসের অবরুদ্ধ অধ্যায়: ১৯৭৫-৯৬’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তাদের কথাতেই উঠে আসে এ কথাগুলো। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবরুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তরুণদের উপস্থিতিতে হওয়া এই আলোচনা সভার উপস্থাপনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে স্থান করে দিতে সেনা বাহিনীর অভ্যন্তরে নির্বিচারে হত্যাকা- চালায়। এ সময় ১১ হাজার ৪৩ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আরো সারে চার হাজার সেনা সদস্যের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। সাংবাদিক জাহিদুল হাসান পিন্টু বলেন, আমার গবেষণায় পাওয়া তথ্যে কুমিল্লার এক জল্লাদ একাই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন ৯২ জনকে। এই ফাঁসি কার্যকরের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তাদের সাক্ষাতকার নিয়ে জেনেছি, ফাঁসির রায়ে আগেই জিয়ার সই দেয়া থাকত। তারা শুধু জিয়ার দেয়া রায় পড়ে শোনাত। খাবার টেবিলে বসে জিয়া একহাতে খাবার খেয়েছে ও অন্যহাতে ফাঁসির আদেশে সই করে গেছে। এমনকি ফাঁসির আদেশে সই করার জন্য তার সঙ্গে বিমানবন্দর পর্যন্ত গিয়েছে সেনা সদস্যরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী বলেন, জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করে আমার বাবাকে হত্যা করা আত্ম স্বীকৃত খুনী দৈনিক ইনকিলাবের মাওলানা এম এ মান্নানকে প্রতিমন্ত্রী করেন। আর এরশাদ তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করেন। এ সময় তিনি প্রশ্ন করেন, কেন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের পুনঃস্থাপন করেছিলেন জিয়া? কেন যুদ্ধ চলাকালে তাকে সেক্টর কমান্ডার পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন জেনারেল ওসমানি? সেকি আইএস-এর এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তান বানানোর এজেন্ডা হাতে নিয়েছিল? আমার মনে হয় এ প্রশ্নগুলো করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস চর্চার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে ব্লগার ও কলামিস্ট মারুফ রসুল বলেন, সরকারের এ বিষয়ে পৃথক একটি অধিদফতর খোলা প্রয়োজন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে চলা প্রোপাগা-া মোকাবেলায় সরকারের প্রতিটি দফতরকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ সকল স্থানে সরকারী দফতরগুলোর এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। প্রোপাগা-া মোকাবেলায় গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান। বলেন, বিদেশে যে কোন গণমাধ্যমের প্রতিটি বিভাগ ভিত্তিক ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের তা নেই। তিনি একটি বেসরকারী টিভির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের নামে ২০টির বেশি ফেসবুক পেজ রয়েছে যেগুলো থেকে মাঝে মধ্যে ভুল তথ্যও প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সবগুলো পেজ ওই প্রতিষ্ঠানের নয়। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড প্রদান করা উচিত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও উইকিপিডিয়াতে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য দেয়া আছে যা রেফারেন্সের অভাবে ঠিক করা যাচ্ছে না। আর সে জন্য আমাদের প্রচুর গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রয়োজন। আলোচকেরা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের চেতনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিগুলো। আর সে কারণেই এখনও ওই অশুভ শক্তি মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে যাচ্ছে। জিয়ার সময় থেকে পরবর্তী ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা পাকিস্তানী সৈন্য কথাগুলো ব্যবহার করেনি গণমাধ্যম। জিয়ার সময় শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগ নামই উচ্চারণ করেনি কেউ। আর এরশাদের আমলেও তাচ্ছিল্য করে লেখা হতো শুধু শেখ মুজিব। মুক্তিযুদ্ধকে বলা হতো স্বাধীনতা যুদ্ধ, পাকিস্তানী সৈন্যের বদলে বলা হতো হানাদার বাহিনী। এর মূল কারণ, ওই প্রজন্মের যেন পাকিস্তান বিরোধী চেতনা তৈরি না হয়।
×