ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় বিরামহীন বৃষ্টিতে পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: ০৩:০৫, ১৭ আগস্ট ২০১৯

কলাপাড়ায় বিরামহীন বৃষ্টিতে পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ বিরামহীন বৃষ্টির জমানো পানিতে বন্দী হয়ে আছে উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়ার ২০ হাজার পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পানি নিষ্কাশনের স্লুইস সংযুক্ত খালে জাল পেতে মাছ ধরা, বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ স্লুইসগেট আটকে মাছ ধরার কারণে পানি ঠিকমতো নামছেনা। ফলে কৃষকের আমন মৌসুমের অধিকাংশ বীজতলা ডুবে আছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পানি বন্দী দশা কাটাতে না পারলে আমন আবাদে বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। ১২টি ইউনিয়নের সর্বত্র একই দশা। দুইটি পৌরসভার মানুষও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের দুরাবস্থার অবর্ননীয় দৃশ্য। বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, তাদের পানি বন্দীদশা গোটা বর্ষা মৌসুমজুড়ে। পানি কখনও নামছে না। বাধ্য হয়ে দুই কিলোমিটার দুরের গ্রামে গিয়ে বীজতলা করেছেন। তাও শুক্রবার রাতের বিরামহীন বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। স্লুইস দিয়ে পানি নেমে পারছেনা। ছোটবালিয়াতলীর হাড়িপাড়া গ্রামের কৃষক হাফেজ মৃধা জানান, ‘দেড়কানি (১২বিঘা) জমি চাষ করছেন। এজন্য ৩৬ শতাংশ জমিতে বীজতলা করেছেন। এখন সব পানির নিচে। তার ভাষায়,‘ তিন বিঘা জমি কেবল রুইছি ( রোপন), এহন হ্যা পানির নিচে। হালুডি বন্ধ। টেক (উচু) জায়গায় হাডু সমান পানি। আর ঠালায় বুক সমান। রোয়া-চওয়া (রোপন ও হালচাষ) সব বন্ধ। দুই দিনের মধ্যে পানি না নামলে পচন ধরবে।’ এ কৃষকের শঙ্কা পানি না নামলে এ বছর আমনের আবাদ ভেস্তে যাবে। সকল চাষীর মন্তব্য ভাদ্র মাস চলে এসেছে। শতকরা ১০ভাগ জমিও রোপন করতে পারেননি। এখন বীজতলা নষ্ট হলে ফের বীজতলা করার মতো বীজধান আর নেই। সময়ও থাকবেনা। ভাদ্রের পরে আমন রোপনের মৌসুম থাকবেনা। টিয়াখালীর রজপাড়া, নাচনাপাড়া, পশ্চিম টিয়াখালী, পায়রা বন্দর এলাকায় দেখা গেছে বাড়িঘর থেকে মানুষ বেড় হচ্ছে হাটু কিংবা কোমর সমান পানি পেরিয়ে। অধিকাংশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, যে পরিমান পানি জমে গেছে তা নামতে কমপক্ষে দুইদিন লাগবে। তাও যদি স্লুইস ঠিকমতো খোলা থাকে। তবে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্লুইসগুলো তাঁদের নিয়ন্ত্রণে না থাকায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান জানান, আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে বীজতলার জলাবদ্ধতা কাটতে না পারলে নষ্টের শঙ্কা রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এজন্য কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পানিউন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান ওয়ালিউজ্জামান জানান, এখন পর্যন্ত ৪৭/৩ ও ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের নয়টি স্লুইস নিয়ন্ত্রনে পানি ব্যবস্থাপনা অথরিটি ও পানি ব্যবস্থাপনা গ্রুপ গঠণ করা হয়েছে। বাকিসব দ্রুত করা হবে। তখন আর কৃষকের সমস্যা থাকবেনা। যেসব স্লুইস এলাকায় এ কমিটি গঠণ করা হয়নি সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানগণ কৃষকের স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে এ প্রকৌশলী জানালেন। তবে অধিকাংশ চেয়ারম্যানগণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট মাছ ধরার লোকের নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, কৃষকরা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে যেই হোক স্লুইস দখলদার কিংবা মাছ ধরার লোক, তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। কৃষকের সমস্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
×