ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১২ দেশে রফতানি হচ্ছে দেশী এ্যান্টি-ভাইরাস রিভ

দেশে এ্যান্টি-ভাইরাসের বাজার কত?

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২৯ জুলাই ২০১৯

 দেশে এ্যান্টি-ভাইরাসের বাজার কত?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক নিরাপত্তা পণ্য এ্যান্টি-ভাইরাসের ওপর নেই কোন গবেষণা, জরিপ। জানা নেই এর মার্কেট সাইজ বা বাজার আকার। কম্পিউটারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এই এ্যান্টি-ভাইরাস দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হলেও ব্যবসায়ী, বিক্রেতা বা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পণ্যের বিক্রেতাদের সংগঠন কারও কাছেই এসব তথ্য নেই। তবে সবাই একবাক্যে বলছেন, বর্তমানে এ্যান্টি-ভাইরাস বাজারের অর্ধেকের বেশি দখল করে আছে ক্যাস্পারস্কি আর দেশীয় এ্যান্টি-ভাইরাস রিভ রফতানি হচ্ছে বিশ্বের ১২টি দেশে। দেশে বর্তমানে ক্যাস্পারস্কি, বিট ডিফেন্ডার, ই-সেট, ই-স্ক্যান, পান্ডা, সিমেন্টেক, ট্রেন্ড মাইক্রো ও ম্যাকআফি এ্যান্টি-ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে নরটন, এ্যাভাস্ট, এ্যাভিরা, সিকিওর, বুলগার্ড, এভিজি, ভাইপার ইত্যাদি নামের আরও এ্যান্টি-ভাইরাস বাজারে ছিল, তবে এখন পাওয়া যায় না। অনেক এ্যান্টি-ভাইরাস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এগুলো দেশের বাজার থেকে পরিবেশক তুলে নিয়েছে। তবে বাজার সূত্রে জানা গেছে, বাজার ‘ডোমিনেট’ করছে ক্যাস্পারস্কি। বর্তমানে এ্যান্টি-ভাইরাসের প্রায় ৭০ ভাগ বাজারের দখল ক্যাস্পারস্কির। দেশে ক্যাস্পারস্কির একমাত্র পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের হেড অব সফটওয়্যার বিজনেস মিরসাদ হোসেন ভাইরাস কিলিংয়ে ক্যাস্পারস্কির সফলতার হার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বলে দাবি করে বলেন, ‘প্রতি মাসে এর বিক্রি ৩৪ থেকে ৩৮ হাজার ইউনিট।’ তিনি জানান, বর্তমানে ক্যাস্পারস্কি এ্যান্টি-ভাইরাস বাজারের প্রায় ৭০ ভাগ দখল করে আছে। এটা সম্ভব হয়েছে ক্যাস্পারস্কির ওপর ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ফলে। জানা গেছে, এ্যান্টি-ভাইরাস পণ্যের খুচরা বাজার বেশ চ্যালেঞ্জিং। এই মার্কেটের ক্রেতারা সবাই এখনও সচেতন নয়। ফলে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কেনার সময় ক্রেতাদের বোঝাতে হয় এ্যান্টি-ভাইরাস সম্পর্কে। এর জন্য পৃথক বাজেট না থাকায় এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। অন্যদিকে ডিলারদের হাতে থাকে মূল ক্ষমতা। ডিলাররা যখন যে পণ্য মার্কেটে বেশি পুশ করে তখন সেই এ্যান্টি-ভাইরাস বেশি চলে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রেতাদের এখন ‘পুশ’ করে পণ্য গছিয়ে দেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা ‘পুল’ করেন কম। এজন্য এ্যান্টি-ভাইরাসগুলোর বাজার অবস্থান বোঝাটা বেশ কঠিন বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। তবে বাজারে এ্যান্টি-ভাইরাসের স্বচ্ছ অবস্থান হলো প্রাতিষ্ঠানিক তথা করপোরেট পর্যায়ে। পণ্য উপস্থানা, শোকেসিং করিয়ে তবেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়া যায় এ্যান্টি-ভাইরাস। এ ক্ষেত্রেও মূল সমস্যা হলো বাজেট। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও এ্যান্টি-ভাইরাস ক্রয়ের জন্যও বাজেট রাখা হয় না। ফলে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ও ভাইরাসজনিত নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সামিতির (বিসিএস) সভাপতি মোঃ শাহিদ উল মুনির বলেন, ‘আমি সাধুবাদ জানাই রিভকে। দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান এ্যান্টি-ভাইরাস তৈরি করে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে, রফতানিও করছে। বিশ্ব জানছে এটা বাংলাদেশের পণ্য। এই পণ্যকে আমাদের উচিত (বিক্রেতাদের) প্রমোট করা। তাহলে এই পণ্য দেশের জন্য আরও সুনাম বয়ে আনবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কোন সার্ভে (জরিপ বা গবেষণা) নেই। ফলে আমরা জানি না দেশে এ্যান্টি-ভাইরাসের বাজার আকার কত বড়। এতদিন ধরে একটি পণ্য দেশের বাজার মাতাচ্ছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, বিদেশে রফতানি হচ্ছে তার মার্কেট সাইজটা জানতে না পারাটা দুঃখজনক।’ তিনি এই বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এটা জানাটা জরুরী। তাহলে নতুন বিনিয়োগকারী বা দেশীয় উদ্যোক্তারা এ্যান্টি-ভাইরাসের বিষয়ে উৎসাহী হবে। এগিয়ে আসবে।’ রিভ এ্যান্টি-ভাইরাস সরাসরি রফতানি হচ্ছে বিশ্বের ১২টি দেশে। তবে ব্যবহার হয় এমন দেশের সংখ্যা ৫০টি বলে জানা গেছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশে ভাল করলেও বর্তমানে ভারতের বাজারে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে রিভ এ্যান্টি-ভাইরাস। ভাইরাস কিলিংয়ে রিভের সফলতার হার বিশ্বমানের (৯৬-৯৯ ভাগ) মধ্যেই রয়েছে বলে দাবি করেন রিভ গ্রুপের সাইবার সিকিউরিটি পণ্যের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) ইবনুল করিম রূপেন। তিনি বলেন, ‘কোন এ্যান্টি-ভাইরাসই শতভাগ সফলতা দিতে পারে না। প্রতিদিনই লাখ লাখ ভাইরাস তৈরি হচ্ছে। ফলে সফলতার হার ‘ভ্যারি’ করে।’
×