ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ টাকা থেকে ১৫০ হয়েছে

বিশেষ দিনে বন্দীদের খাবারের বরাদ্দ পাঁচ গুণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৭ জুলাই ২০১৯

 বিশেষ দিনে বন্দীদের খাবারের বরাদ্দ পাঁচ গুণ বেড়েছে

মশিউর রহমান খান ॥ বিশেষ দিনে উৎসব পালনে বর্তমানের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি খাবার পাবে কারাবন্দীরা। বিশেষ দিনগুলোর মধ্যে থাকবে দুই ঈদ, জাতীয় দিবস বা রাষ্ট্র ঘোষিত যে কোন দিন। বর্তমানে ৩০ টাকার পরিবর্তে এই খাবারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। এটি দৈনন্দিন মূল্য ৫০ টাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। ইতোমধ্যে বন্দীদের ইফতারি দ্বিগুণ ও সকালের নাস্তায় রুটি-সবজি, খিচুড়ি ও হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার বাড়ানো হয়েছে বিশেষ দিনের বরাদ্দ। বিশেষ দিবসের আনন্দ পুরোপুরি ভোগ করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারা অধিদফতরকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রদান করেছে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী ঈদের দিন বিশেষ দিবস বা উৎসব পালনের দিন উপলক্ষে এ ঘোষণা কার্যকর করা হবে কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। গত ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কারা শাখা-২ এর দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, বিশেষ দিবস বা উৎসব উপলক্ষে কারাবন্দীদের উন্নতমানের খাবার সরবরাহের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। তাই কারা মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে বন্দীর স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। এ চিঠির প্রেক্ষিতে দেশের প্রতিটি কারাগারে পরবর্তী যে কোন বিশেষ দিবস বা উৎসব থেকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য কারা অধিদফতর থেকে দেশের সকল বিভাগীয় কার্যালয়ের ডিআইজি ও জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে চিঠি প্রদান করেছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, আগে দৈনন্দিন খাবারের অর্থ ও বিশেষ দিনের বরাদ্দকৃত অর্থ একসঙ্গে করে বিশেষ দিনের খাবারের জন্য ব্যয় করত প্রতিটি কারা কর্তৃপক্ষ। সকালে আতপ চালের ফিরনি বা পায়েস বা সেমাই মুড়ি, দুপুরে সাদা ভাত রুই বা মৃগেল মাছ, মুড়িঘণ্ট বা আলুর দম, রাতে পোলাও একটি রোস্ট, গরু বা খাসির মাংস, মিষ্টি ও পান সুপারি দেয়া হয়। বর্তমানে এর পরিমাণ অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকার কারাবন্দীর সকালের নাস্তায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এতে প্রতিটি কারাবন্দীর জন্য স্কেল ডায়েট হিসেবে দৈনন্দিন ও কি পরিমাণ খাবার কোন দিন প্রদান করা হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশেষ দিনের খাবারে কোন প্রকার ডায়েট স্কেল নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি যা অতি প্রয়োজন। অন্যথায় কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীর বিশেষ দিনের খাবার রান্নার পরিমাণ ও প্রকার নির্ধারণে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, পূর্বে বিশেষ দিনের খাবারের জন্য জনপ্রতি ১৫ টাকা ধার্য করা ছিল। পরে বাস্তবতার নিরিখে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীর সার্বিক দিক চিন্তা করে তা বাড়িয়ে ৩০ টাকা ধার্য করা হয়। বর্তমান সরকার এখন তা থেকে বাড়িয়ে পাঁচগুণ বৃদ্ধি করে। কারাসূত্র জানায়, বিশেষ দিনের তিন বেলায়ই কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীদের খাবার পরিবেশন করে। দৈনন্দিন বন্দীদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ব্যয় করা হয়। তবে বর্তমান নিয়মে বিশেষ দিনের অর্থের সঙ্গে দৈনন্দিন অর্থ যোগ করে অর্থাৎ ২০০ থেতে ২০৫ টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মাত্র ত্রিশ টাকায় বিশেষ দিনের খাবার পরিবেশন অত্যন্ত কঠিন ছিল বিধায় কারা কর্তৃপক্ষ সারাবছরের ব্যয়িত অর্থ থেকে অল্প পরিমাণ জমা রেখে বা যে কোন কাজের অব্যবহৃত অর্থ ত্রিশ টাকার সঙ্গে যোগ করে খরচ করতে হতো। অর্থাৎ ত্রিশ টাকায় কোনক্রমেই বিশেষ দিনের খাবার প্রদান করা সম্ভব হতো না। তাই নতুন বরাদ্দ করা অর্থে একজন বন্দী পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘবছর যাবত বিশেষ দিবস বা উৎসবের দিনে প্রতিটি বন্দীকে উন্নতমানের খাবার প্রদানের জন্য মাত্র ত্রিশ টাকা বরাদ্দ ছিল। বর্তমান সরকার কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে কারাবন্দীরা বিশেষ দিবসের স্বাদ ভোগ করতে বিশেষ খাবারের জন্য বরাদ্দ বর্তমানের চেয়ে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করে ১৫০ টাকা করেছে। কারা অধিদফতর থেকে অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানোর পর সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পরবর্তী প্রতিটি বিশেষ দিবসে বা উৎসবের দিনে এ বরাদ্দ কার্যকর করা হবে বলে নির্দেশনা দিয়ে কারা অধিদফতরকে চিঠি প্রদান করেছে। এটি পরবর্তী ঈদের দিন থেকেই কার্যকর করা হবে। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, বর্তমান সরকার সংশোধনাগারের জন্য নেয়া বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এর আগে ইফতারিতে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা ও সকালের নাস্তায় শত শত বছরের সামান্য গুড় আর শুকনো রুটির পরিবর্তে সপ্তাহে চারদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও রুটির পাশাপাশি খিচুড়ি আর রুটি হালুয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা বন্দীদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে সরকার উৎসবের দিনটিকে কারাবন্দীরা যাতে ভেতরে বসেও উপভোগ করতে পারে বা ভাল খাবার গ্রহণের জন্য বন্দীর মানসিক প্রশান্তি আনতে ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ছোঁয়া কারাগারের ভেতরেও পৌঁছে দিতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে এখন থেকে প্রতিটি কারাবন্দী বিশেষ দিবসে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নতমানের খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান খামাল জনকণ্ঠকে বলেন, কারাবন্দীদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করার অংশ হিসেবেই বর্তমান সরকার কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে কারাবন্দীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ দিবসগুলোতে বিশেষ খাবারের পরিমাণ বাড়াতেই পূর্বের বরাদ্দের চেয়ে পাঁচগুণ বাড়িয়ে অর্থাৎ ১৫০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বন্দীরাও যেন কারাগারে থেকেই ঈদ বা যে কোন উৎসবের খাবার গ্রহণ করতে পারেন ও দিবসটি উপলব্ধি করতে পারেন। এছাড়া বর্তমান বাজার দরের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর আগে ব্রিটিশ আমলের বন্দীর সামঞ্জস্যহীন নাস্তায় নতুনত্ব এনে সবজি খিচুড়ি হালুয়া রুটির প্রচলন করা, ইফতারের পরিমাণ দ্বিগুণ করা, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল কারাগারে স্বজন প্রকল্প চালু করাসহ বন্দীদের কারাগার থেকে বেরিয়ে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দীদের কল্যাণার্থেই আরও বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করা সম্ভব হবে।
×