ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাইকোর্টের রুল ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুবিধা কেন বেআইনী নয়?

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৪ জুলাই ২০১৯

হাইকোর্টের রুল ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুবিধা কেন বেআইনী নয়?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণখেলাপীদের সুদের ২ শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনর্তফসিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন বেআইনী ও কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ৩১ জুলাই এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। এক সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনিরুজ্জামান। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-বিএবি’র পক্ষে ছিলেন শাহ মঞ্জুরুল হক। এর আগে গত ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘ঋণ পুনর্তফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়। এ নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপী ঋণের অনারোপিত সুদ মওকুফ সুবিধার পাশাপাশি খেলাপীদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়ের করা মামলা স্থগিত রাখার কথাও বলা হয়। এছাড়া আরেকটি প্রজ্ঞাপনে যারা নিয়মিত ঋণ শোধ করেন, তাদের সুদের ১০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা দেয়ার কথা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ওই প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এই রিটের শুনানিতে প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত রাখাসহ একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে বিগত ২০ বছরে দেশের ঋণখেলাপী ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় ঋণখেলাপীদের তালিকা আদালতে জমা দেয়া হয়। অর্থ বিভাগের আবেদনে গত ৮ জুলাই আপীল বিভাগ ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের ওপর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ শর্তসাপেক্ষে দুই মাসের জন্য স্থগিত করে। আদেশে আপীল বিভাগ বলে দেয়, কোন ব্যবসায়ী এই সুবিধা নিলে দুই মাসের মধ্যে তিনি আর অন্য কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। সেই সঙ্গে হাইকোর্ট যে রুল জারি করেছিল, তা নিষ্পত্তির জন্য সেদিন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয় আপীল বিভাগ। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আবেদনে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছিল। মঙ্গলবার শুনানির পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে অর্থ আত্মসাত, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন গঠন বিষয়ে যে রুল জারি হয়েছিল সেটি শুনানির জন্য জেবিএম হাসানের আদালতে পাঠিয়েছিলেন আপীল বিভাগ। সেই রুলটি শুনানির এক পর্যায়ে একটি সম্পূরক রুলের জন্য আরেকটি আবেদন করেছিলাম। আজকে (মঙ্গলবার) সেটির ওপরও শুনানি হয়েছে। শুনানিতে বিবাদী পক্ষের আপত্তির পরও ‘ঋণখেলাপীদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার কেন বেআইনী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল জারি করেছে। আগামী ৩১ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে বলে জানান রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
×