ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফুটবলকে বিদায় জানালেন শরীফ

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৭ জুলাই ২০১৯

ফুটবলকে বিদায় জানালেন শরীফ

রুমেল খান ॥ প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ম্যাচের শুরুতে বা শেষে দুই-এক মিনিটের জন্য মাঠে নামবেন। হাতে থাকবে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী। তারপর কোচ তুলে নেবেন তাকে। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিত্রনাট্যটা অবশ্য সেভাবে মঞ্চস্থ হলো না, একটু পাল্টে গেল। খেলোয়াড় তালিকায় রাখা হয়নি তাকে। তবুও মাঠে নামলেন। সতীর্থ জাহিদ হাসান নিজের বাহু থেকে অধিনায়ত্বের বাহুবন্ধনীটি খুলে পরিয়ে দিলেন তার হাতে। দু’দলের সঙ্গেই আলাদা করে ফটোসেশন করলেন। কোলে নিলেন তিন বছরের শিশুকন্যা বুশরা আলভিনকে। বাবার মতো তার পরনেও ছিল একই দলের জার্সি। দু’দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলালেন। তারপর মেয়েকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে বের হয়ে গেলেন মাঠ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল এনামুল হক শরীফের। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ফুটবলে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের বিরুদ্ধে মাঠ থেকে চিরতরে বুটজোড়া তুলে রাখলেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। মাঠ থেকে বের হওয়ার পর দু’দল কিক-অফ করে খেলা শুরু করে দিয়েছে। ততক্ষণে ম্যাচ অফিসিয়ালদের জন্য নির্ধারিত ছাউনির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন ৩৭ বছর বয়সী শরীফ। পাশে এসে দাঁড়ালেন জীবনসঙ্গিনী মোরশেদা লওরিন। একে একে তাকে এসে ফুলেল বিদায় শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন আবাহনীর কোচ-ম্যানেজার, দু’দলের অতিরিক্ত ফুটবলার, স্টাফ ও সমর্থকরা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএল ফুটবলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিরুদ্ধে খেলে অবসর নেয়ার পরিকল্পনা ছিল ‘টাইগার শরীফ’ খ্যাত মোহামেডানের ৮ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলারের। কিন্তু ম্যাচের দু’দিন আগে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। কারণ ছিল ক্লাবের অনুরোধ এবং পরিবারের ইচ্ছা। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার ছেলে শরীফ জনকণ্ঠকে জানান, ‘তাছাড়া তখন পয়েন্ট টেবিলে ক্লাবের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। তখন ক্লাবের ওই দুরবস্থায় অবসর নিলে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যেতাম। তবে পরে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করি অবসর নিয়েই ফেলব। কারণ দুটি। এক. এখন লীগের দ্বিতীয়পর্বে পয়েন্ট টেবিলে মোহামেডানের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। দুই. আমার হাঁটুর অপারেশন করালে পুরোপুরি চোটমুক্ত হয়ে ফিটনেস ফিরে পেয়ে আবারও খেলার জন্য মাঠে নামতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। আমার এখন যা বয়স তাতে করে চোট থেকে ফিরেই মাঠে নামাটা চ্যালেঞ্জের। তখন কে আমাকে দলে নেবে? ১৯ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় জানি, এক বছর পর চোট থেকে ফিরেই প্রথম একাদশে খেলা সহজ নয়। তাছাড়া আমি যে ধাঁতে গড়া, তাতে করে সাইডবেঞ্চে বসে থাকাটাও আমার জন্য সম্ভব নয়। তাই পরিবারের সঙ্গে বসে অনেক আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সম্মান থাকতেই বিদায় নেয়া ভাল।’ আগেরবার বিদায় নেয়ার সময় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবাহনীকে বেছে নিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার- এবারও বিদায়ের সময় শরীফের প্রতিপক্ষ সেই একই আবাহনী। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমার বহুদিনের স্বপ্ন মোহামেডানের জার্সি গায়ে মাঠ থেকে অবসর নেব এবং প্রতিপক্ষ থাকবে আবাহনী।’ উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে ফেডারেশন কাপের প্রস্তুতি হিসেবে মোহামেডানের হয়ে একটি প্রীতি ম্যাচে খেলেন আরামবাগের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে খেলতে গিয়ে বাজেভাবে হাঁটুতে চোট পান শরীফ। ফলে খেলতে পারেনি ফেডারেশন কাপে। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চার সপ্তাহের মধ্যেই তার মাঠে ফেরার কথা ছিল।
×