ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন

অনিদ্রার অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৯ জুলাই ২০১৯

অনিদ্রার অন্যতম কারণ বিষণ্ণতা

বাংলাদেশে ৫-৯% লোক মহিলা কোন না কোনভাবে বিষণ্ণতা নামক রোগে ভুগছেন। বেশিরভাগ রোগীর ঘুমের সমস্যা হয়, কারও একদম ঘুম হয় না আজানের অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং বেলাটা তুলনামূলক বেশি খারাপ লাগে এই বিরাট অংশ রোগী এই ডাক্তার, সেই এই পরীক্ষা, ওই পরীক্ষা করে শেষে কোন রোগ ধরতে না পেরে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। কি কি লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার পাশের লোকটি বিষণ্ণতায় ভুগছেন : ১. শারীরিক লক্ষণ : মাথা জ্বালা-পোড়া করা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ জ্বলে। কখনও কখনও পুরো শরীর জ্বালা-পোড়া করে। ২. মাথা দিয়ে নাক দিয়ে কান দিয়ে গরম ভাপ উঠে, কেউ কেউ বলে ভাত সিদ্ধ করলে যে রকম ভাপ উঠে ঠিক সেই রকম কান দিয়ে নাক দিয়ে বের হয় বারবার তেলপানি দেয়া লাগে মাথা ঠা-া করার জন্য। ৩. কেউ কেউ মাথার চুল মাঝখানে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন গাছের পাতা পিষে মাথায় দিয়ে রাখে মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য। ৪. যদি কোন বয়স্ক মহিলা দুঃখের কথা বলতে গেলেই প্রায় কেঁদে ফেলে তখন কিন্তু বিষণ্ণতাই প্রথম সন্দেহ হতে পারে। ৫. মুখের কথা শুনে আপনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন যেমন : এসব রোগীর খুব কম কথা বলে এবং খুব আস্তে আস্তে কথা বলে। একটা প্রশ্ন করলে অনেক সময় পর উত্তর দেয়, মাঝে মাঝে কোন কথাই বলতে চায় না। কেউ জিজ্ঞেস না করলে কথা বলতে চায় না। তারপর ধীরে ধীরে এমন একটা অবস্থায় চলে যায় যে একদম কথা বলে না যাকে আমরা মিউট বলি। ৬. মন খারাপ থাকা, এটাই আসল লক্ষণ : এই মন খারাপের প্রকাশ বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ভাবে হতে পারে, বেশিরভাগ রোগী নিজের মনের দুঃখ ভাব সরাসরি বলতে চায় না তারা সাধারণত বেশিরভাগ সময় বিরক্ত ভাব থাকে, অন্যের কথা সহ্য করতে পারে না, কথা বললে রেগে যায়, বেশিরভাগ সময় মনমরা ভাব থাকে, কারও সঙ্গে মিশতে চায় না, কাছে ছোট ছোট বাচ্চারা চেঁচামেচি করলে বিরক্ত হয় টেলিভিশন দেখতে চায় না অথচ আগে নিয়মিত টেলিভিশন দেখত এবং সবার সঙ্গে মিশত এখন কিছুই ভাল লাগে না ছোটখাটো ব্যাপার নিয়েই কেঁদে ফেলে এবং অতীতের দুঃখের ঘটনাগুলো বারবার বলতে চায়। এই সবগুলোই কিন্তু মন খারাপের লক্ষণ। ৭. বাচ্চা ডেলিভারির পর বিষণ্ণতা নামক রোগটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় বেশিরভাগ মার অভিযোগ থাকে শরীর বেশি দুর্বল লাগে, মন বিরক্ত থাকে, ঘুম হয় না। আত্মীয়স্বজনরা বলেও যেন ইদানীং খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং ভয় ও দুশ্চিন্তা লাগে। অনেক গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যাগুলো সুত্রিকা বলে কবিরাজরা চিকিৎসা করে। অথচ এই নারীরা কিন্ত বিষণ্ণতা নামক রোগে ভুগিতেছে। ৮. এই সমস্ত রোগীর আনন্দ ফুর্তি, সাজগোজ, হাসিঠাট্টা, গল্প করা ধীরে ধীরে সকল আনন্দদায়ক ও স্বাভাবিক কাজকর্মে লোপ পেতে থাকে। ৯. খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকে যে খেয়ে কি লাভ হবে, বেঁচে থেকে কি লাভ হবে? ১০. কেউ কেউ বসার সময় গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে জড় বস্তুর মতো করে বসে থাকে। ১১. এমন ওদেখা গেছে বলে যে, ডাক্তার আমার নাড়ি ভুঁড়ি পচে গেছে। আমি হয়ত বড় ধরনের পাপ করেছি আল্লাহ আমাকে পাপের শাস্তি দিচ্ছে। ১২. অনেক বিষণ্ণ রোগীদের দেখা যায় কথা বলার মাঝখানে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটাও একটা লক্ষণ। ১৩. শরীরের ওজন কমতে থাকে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে। ১৫. কেউ কেউ হাজির হন ব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা নিয়ে। বিষণ্ণতার কারণ কি : ১. জন্মগতভাবে আমাদের দেশে নারীরা বেশ নিষ্পেষিত থাকে। এটা তারা ছোটবেলা থেকেই ঘরে এবং পারিপার্শ্বিক জগত থেকে দেখতে দেখতে তার মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। ২. হরমোনজনিত কারণ। ৩. রিপ্রডাকটিভ লাইফের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময় যেমন বাচ্চা জন্মের পর, মেনোপোজ ইত্যাদি ও কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে। ৪. বাচ্চা ডেলিভারির পর বিষণ্ণতা হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে : ৫. সাধারণ কারণের মধ্যে হতে পারে কোন বিয়োগান্ত ঘটনা যেমন প্রিয়জনের মৃত্য, স্বামীর সঙ্গে ডির্ভোস হয়ে যাওয়া, স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করা, বড় ধরনের কোন মানসিক আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। ৬. দীর্ঘদিন কোন শারীরিক রোগে ভুগলে যেমন ডায়াবেটিস, প্রেসার, হাঁপানী, ক্যানসার, আর্থাইট্রিস ও স্টোকের মতো অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ। কেন চিকিৎসা দরকার : কারণ ১.১০-১৭% রোগী আত্মহত্যা করতে পারে। ২.৫০% রোগী কোন না কোনভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ৩. বিষণ্ণতা দূর করার জন্য অনেক রোগী নেশায় আসক্ত হতে পারে। ৪. এরা কর্মক্ষেত্রে আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে। ৫. এদের সেক্সুয়াল জীবনে অশান্তিত বিরাজ করে। ৬. এসব রোগী পরিবারের, সমাজের ও জাতির বোঝা হয়ে যেতে পারে যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করা হয়। চিকিৎসা : সামাজিক কুসংস্কার যেমন আলগাদোষ, জিন ভূতের ব্যাপার পানিপড়া তেলপড়া ইত্যাদি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ২. সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা করা ও নিয়মিত ফলোআপে আসা। লেখক : মনসিক ব্যাধি চিকিৎসক আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
×