ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্রকারীদের বাদ দেয়া হবে ॥ জিএম কাদের

জাপার যৌথ সভায় প্রেসিডিয়াম ও সাংসদদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৩ জুন ২০১৯

 জাপার যৌথ সভায় প্রেসিডিয়াম ও সাংসদদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৪২ থেকে ২২ আসনে নেমে আসা, নির্বাচনের সময় দলের মনোনীত প্রার্থীদের কেন্দ্র থেকে খোঁজ না নেয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, পার্টিতে গ্রুপিং, অযোগ্যদের প্রমোশনসহ নানা ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জাতীয় পার্টির বেশিরভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য। এসময় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আগামীতে সকলের মতামতের ভিত্তিতে জাপাকে এগিয়ে নেয়া হবে। এছাড়া দলের ভিতরে যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। শনিবার চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত জাপার প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির আহ্বানে এটাই প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা। সকাল থেকেই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত হন। সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্যের বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন। তবে রওশন এরশাদ, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অসুস্থজনিত কারণে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ কয়েকজন বৈঠকে উপস্থিত হননি। বৈঠকে দলের ৫৪ প্রেসিডিয়াম ও আটজন সংসদ সদস্য মিলিয়ে ৬২জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকার কথা। কিন্তু সর্বশেষ কাউন্সিলের পর একের পর এক প্রমোশন দেয়ায় এ পদে এখন ৫৪জন রয়েছেন। বৈঠকে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশিদ বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনে আমাদের ৪২টি আসন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে চূড়ান্ত ছিল। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রুহুল আমিন হাওলাদার পদ হারানোর পর আসন সংখ্যা কেন নেমে ২২টি আসল। এটা আমাদের জানার বিষয়। জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও দল ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, দলের ভেতর সুবিধাভোগীরা সবসময়ই ফায়দা লুটে থাকেন। তাদের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে দলকে এগিয়ে নেয়া কঠিন হবে। মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এতবড় একটি জাতীয় নির্বাচন করলাম। আমার প্রতি অনেক অবিচার করা হলো, অথচ পার্টি থেকে কেউ খোঁজ নেননি। এটা হতে পারে না। যদি সুবিধা অসুবিধায় পার্টি তার নেতাকর্মীর পাশে না দাঁড়াতে পারে তাহলে দল করার কোন সার্থকতা আছে? শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, যেনতেনভাবে পার্টিতে প্রমোশন দেয়া যাবেনা। দলে এসেই যেন পদ ও নমিনেশন না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগেও এরশাদ পরিবারে ছিলাম। আগামীতেও এরশাদ পরিবারের নেতৃত্বেই আছি। কাজী মামুনুর রশিদ সম্প্রতি দলের এমপি মাসুদার পদ-পদবী স্থগিতের সমালোচনা করে বলেন, একজন এমপিকে টাকার জন্য পদ স্থগিত লজ্জাজনক। বিষয়টি আলাচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। জবাবে জিএম কাদের বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সমাধান করা হবে। পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মুহম্মাদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে হলে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল শক্তিশালী না হলে পার্টি শক্তিশালী হবে না। সভা শেষে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হয়েও যারা দলীয় কর্মকান্ডে একেবারেই অনুপস্থিত থাকেন, তাদের দল থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। এসময় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কর্মকান্ড নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। যারা দলে নিষ্ক্রিয় আছেন, দলের কর্মকান্ডে আসছেন না, ষড়যন্ত্র করছেন নানাভাবে তাদের দল থেকে স্ক্রিন আউট করে দেয়ার কথা আমরা চিন্তা করছি।’ যারা দলে কোন্দল তৈরি করতে চায়, তাদের সদস্যপদ রাখা হবে কি না এ নিয়েও সভাপতিম-লীর সভার বাগ্বিত-া হয়েছে বলে জানান কাদের। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরাই হবে সব সিদ্ধান্তের মালিক। প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য দলের চাঁদা নিয়মিত দেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর প্রেক্ষিতে জি এম কাদের বলেন, দলের টাকা কোন সমস্যা নয়। অর্থের জন্য দল ঠেকে যাবে, এমন কখনও হবে না। সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা কন্ট্রাডিক্টরি কথা। উই ফাইন্ড দ্য ফ্যাক্টস। ফারদার আলোচনা হয়েছে। তবে যেটা আমি জানি, সেটা বলতে পারব না। কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে সাধারণ মানুষের আস্থার পার্টিতে পরিণত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এ কারণেই পার্টির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রাণবন্ত রাখতে দায়িত্বশীল সব নেতারা এক হয়ে কাজ করবেন। কাদের বলেন, যারা জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করবে তাদের নেতৃত্বের বিকাশে যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। দেশ ও মানুষের আস্থা, ভালবাসা অটুট রাখতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সভায় জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর এখনই প্রকৃত সময়। কোন আসনে কে নির্বাচন করবে, তা এখনই নির্ধারণ করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, যারা জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেবেন তাদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। তাদের কাছে তৃণমূলের সব তথ্য থাকতে হবে।
×