ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষা আসার আগেই রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১১ জুন ২০১৯

 বর্ষা আসার আগেই রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষা দ্বারে সমাগত। কিন্তু বর্ষা আসার আগেই এবার রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। শুধু বর্ষা নয়, বছরের অন্য সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা শুরু হলে বা বৃষ্টিপাত বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। এ কারণে এখনই এটি মোকাবেলা বা সচেতন না হলে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বলছে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৯৫ জন। যা গত ২ বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এবারে আক্রান্তদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জুনের প্রথম সপ্তাহেই ৫৫ আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনও ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে গতবারের তুলনায় এবার এডিস মশার এবং চিকুনগুনিয়া মশার জন্ম হার আগের চেয়ে বাড়ছে। ফলে এ বছর ডেঙ্গুর এবং চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আগের বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা গত বছরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার দ্বিগুণ বলে তারা উল্লেখ করেছেন। বর্ষাকাল পুরোপুরি এলে এবং বৃষ্টির হার বাড়লে এটির প্রকোপ আরও বাড়বে বলে তারা উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এক হয়ে কাজ করতে হবে। বর্ষার আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়া মানে এবার এডিস মশার প্রকোপ বাড়ার সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা নিয়ে এই এডিস মশার প্রকোপ কমাতে না পারলে বর্ষায় এটি মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবেলায় তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি মহামারি রূপ নেয়ার আগেই রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরবাসী সচেতন হয়ে নিজেদের বাড়ির আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে পারলেই ডেঙ্গু থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাঃ আয়েশা আক্তার জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা নয়জন বলে খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে ২০১৮ সালের প্রথম ৫ মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল ১৩৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক সানায়া তাহমিনা বলেন, জরিপে দেখা গেছে এবার ঢাকায় বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জীবানুবাহী এডিস মশার জন্মের হার বেড়েছে। এর ফলে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বছরের তিনবার এ বিষয়ে জরিপ করে থাকে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে একবার, বর্ষার শুরুর পর এবং বর্ষার পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে জরিপ করা হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর মার্চে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে যে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে প্রি মনসুন জরিপে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক এখন ২২ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা উল্লেখ করেন এই সূচকে অর্থ হলো এডিস মশার প্রতিটির এক শ’টি প্রজনন উৎসের মধ্যে কতটিতে এডিস মশার লার্ভার আছে। এখন যদি ২০টিতে মশার লার্ভার পাওয়া যায় তাহলে সেটিকে বিপজ্জনক বলে ধরে নেয়া হয়। আর জরিপে ২২ শতাংশ মানে এটি এখন বিপজ্জনক সীমার বেশি পর্যায়ে চলে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকাতে। দািক্ষণ সিটির ১৫ ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। অপর দিকে উত্তর সিটিতে সাতটি ওয়ার্ডে লার্ভার ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুন পর্যন্ত তিন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ২৭৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তারা জানায়, গত জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৪, মে মাসে ১৩৯ এবং চলতি জুনের ৮ তারিখ পর্যন্ত ৫৫ জন আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন-জুলাই মাস ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। বাড়ির আশপাশে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনেরা বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এটি রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে এ বছর ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
×