ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্র্যান্ডের সঙ্গে সাধারণ পোশাকের পাল্লা

শেষ সময়ের ছন্দময় সরব কেনাকাটা, ব্যস্ত দোকানি-ক্রেতা

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৪ জুন ২০১৯

শেষ সময়ের ছন্দময় সরব কেনাকাটা, ব্যস্ত দোকানি-ক্রেতা

সমুদ্র হক ॥ শোরুমগুলোর সঙ্গে শেষ সময়ের প্রতিযোগিতায় মার্কেট-দোকানি। ব্র্যান্ডের পোশাকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সাধারণ পোশাক। দেশীয় পণ্যের সঙ্গে মানের পরীক্ষায় বিদেশী পণ্য। দূর অতীতের খলিফা বাড়ি দর্জির পদোন্নতির পর হালের টেইলারিং হাউস। ঈদের আমেজ আর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৪ ও ৬ এর (বাউন্ড্রি ওভার বাউন্ড্রি) তারুণ্যের কিচিরমিচির একীভূত হয়ে বগুড়ায় চলছে শেষ দিনের ঈদের কেনাকাটা। এবার ঈদের দিন কয়েক আগেই শুরু হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। তবু দিন-রাত ভিড়ের চাপ দোকান-শোরুমে। গেল ক’দিনের তীব্র দাবদাহে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি। বগুড়া নিউমার্কেটে ক্রেতা নাজরীন বললেন, এখন দ্রুত কেনাকাটা চলছে। আরেকজন কামরুন্নাহার বললেন, মেয়েদের জন্য পছন্দের কাপড় কিনে টেইলারিং হাউসে বানাতে দিয়েছেন। এখনই তুলে নিতে হবে। এ যুগের তরুণী নাসরিন বললেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন ডিজাইন যা পেয়েছেন তা মোবাইলে স্ক্রিনশট নিয়ে টেইলার মাস্টারকে দেখিয়ে তাকে দিয়ে বানিয়ে নিয়েছেন। বগুড়ার একটি বড় টেইলার্সের মালিক আবুল হাসান বললেন ‘কালে কালে কত কি যে দ্যাখমো! বাপ আছিল খলিফা। হামি হল্যাম দর্জি। ব্যাটা হইছে টেইলার মাস্টার। সারাদিন মোবাইল টেপাটিপি করে নক্সা বার করে বানায়। তরুণ টেইলার মাস্টার রফিক বললেন, এ যুগের ছেলে মেয়েরা পোশাকের বিষয়ে এতটাই সচেতন যে সব সময় আপডেট পোশাক চায়। তারা নেট ঘেঁটে বের করে। যে কারণে আগেই আমাদের দেখে নিতে হয়। কেউ শোরুমগুলোতে ডিজাইন দেখে কাপড় কিনে সঙ্গে নতুন কিছু যুক্ত করে বানিয়ে নেয়। এবারের ঈদে এই ধরনের পোশাক বানাতে হয়েছে বেশি। ঈদের আগের এই শেষ সময়টায় বেচাকেনা জমে উঠেছে। যাদের আত্মীয় স্বজন ঢাকায় থাকেন তারাও কেনা কাটা সেরে নিচ্ছে। প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছে। পছন্দের পোশাকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়ে কেনার অনুমতি নিচ্ছে। কখনও কিনে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছে। এমনও হচ্ছে ঢাকা ও বগুড়ায় পণ্যের দামের তারতম্য জেনে একেবারেই শেষের দিকের কেনাকাটা চলছে। এদিকে বগুড়া নগরীর শহীদ জব্বার সড়কে গড়ে ওঠা আধুনিক শোরুমগুলোতে ঈদের বাহারি পোশাক উঠেছে অনেক। শোরুমগুলোতে কেনাকাটায় বড় সুবিধা হলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা। যে কারণে ব্রান্ডের প্রতিটি শোরুমে ভিড়। বাঙালী ফ্যাশনের মালিক পিংকি ও সেলসগার্ল রেবা বললেন, এবারের ঈদের পোশাকে রং ও নক্সায় আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে। গরমের সময় ঈদ হওয়ায় বেশিরভাগেরই পছন্দ সুতি কাপড়ের পোশাক। কেউ রঙের কাপড়ের মিশ্রণের পোশাক বেছে নিচ্ছেন। দেশীয় তাঁতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। দেশীয় বুনন ও নক্সা সমৃদ্ধ পোশাকের প্রতি ক্রেতারা ঝুঁকেছেন এবার বেশি। শোরুমে আসা কয়েক তরুণী সুরভী, জোশিতা, পৃথ্বা, তন্দ্রা, তৌষী বলল : কটন, ভয়েল, জর্জেট, কাটিং নক্সার কারুকাজের পরিশীলিত পোশাক পছন্দ। নীল, সবুজ, মেজেন্টা, রঙের সঙ্গে লাল, হলুদ, কমলা, মেরুন, গেরুয়া, বাদামী ও সাদার বিভিন্ন সেডের ডিজাইনের পোশাক তাদের পছন্দ। স্যালোয়ারের সঙ্গে ওড়নার ম্যাচিং, সুতি ও তাঁতের কাপড়ে কাজের মধ্যে চুমকি কারচুপির কাজ পছন্দ। এর মধ্যেই যুগলবন্দী পোশাক যুক্ত। অর্থাৎ বান্ধবীরা একই ধরনের পোশাক কিনেছেন। পরিবারের পিঠাপিঠি ভাইবোন একই নক্সার পোশাক বেছে নেন। একই ডিজাইনের পোশাক দিতে শোরুম কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। এবারের ঈদে বাঙালীর চিরন্তন ফ্যাশনই গুরুত্ব পায় বেশি। ছেলেদের ক্ষেত্রে এমব্রয়ডারি রেগুলার ফিট, লং পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। ঋতু উৎসবে ও অফিসে পরা যায় এমন পাঞ্জাবির পাশাপশি পাতলা ও হাল্কা কাপড়ের নান্দনিক নক্সা, হালকা রঙের পাঞ্জাবি পছন্দ। ক্রেতারা পাঞ্জাবি বেছে নিতে গরমের কথাও ভাবছেন। যে কারণে সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয়েছে এবার। শর্ট পাঞ্জাবির চল কমে গেছে। ফিট স্লিম ও সেমি লং পাঞ্জাবির প্রতি আকর্ষণ বেশি পরিলক্ষিত হয়। নিউমার্কেটের শাড়ি দোকানি আলিম বললেন, নক্সী কাঁথার সেলাই চুমকি এমব্রয়ডারি কারচুপির কাজের সঙ্গে পাড় ও আঁচলে কিছুটা ভিন্ন নক্সার শাড়ি বেশ প্রাধান্য পায়। শাড়ির ক্ষেত্রেও গরমের কথা বিচেনায় আনা হয়। দামের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। ঈদ বলে কথা।
×