ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালিদ হোসেনের প্রয়াণে শিল্পীদের শোক

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২৫ মে ২০১৯

 খালিদ হোসেনের প্রয়াণে শিল্পীদের শোক

গৌতম পান্ডে ॥ নজরুল গবেষক, স্বরলিপিকার একুশে পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী খালিদ হোসেনের চির প্রস্থানে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । গুণী এই শিল্পীকে নিয়ে শোক প্রকাশ ও স্মৃতিচারণ করেন তার সহকর্মীরা- সালাউদ্দিন আহমেদ : আজ প্রায় ৩০ বছর ধরে খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছি। উনি আমাদের মুরব্বি ছিলেন। এখন আন্তরিকভাবে নজরুল চর্চা খুবই কম হয়। এ সময় এমন একজন মানুষ যিনি নিবেদিত হয়েই নজরুল চর্চা করতেন তার চলে যাওয়া দুঃখজনক। এক সময় সবাইকে চলে যেতে হবে এটা ঠিক কিন্তু চলে গেলে কণ্ঠ লাগে। অনেক অসুস্থ অবস্থায়ও তার মনের জোরে চলতেন। তার সময় নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণযোগ্য। খায়রুল আনাম শাকিল : আমি অনেক ছোটবেলা থেকে খালিদ হোসেন সাহেবের সঙ্গে পরিচিত। কারণ তখন রেডিও টিভিতে ওনার গান শুনতাম। বেড়ে উঠে যখন নজরুলের গান চর্চা শুরু করলাম, তখন থেকে ওনাকে নজরুলের গানের শিল্পী হিসেবেই পেয়েছি। একটা পর্যায় এসে শুদ্ধ নজরুল চর্চা, শুদ্ধ বাণী, আদী সুর এগুলো নিয়ে কাজ করার ভাবনা যখন আসে, তখন একটি সংগঠন করলাম যার নাম ‘বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা’। সেটার উনি ছিলেন সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক। তখন থেকে তার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা হয়। নজরুলের গান শুদ্ধভাবে গাওয়ার চেষ্টা সব সময় ওনার ভেতর ছিল। শেষ বয়সেও তার ভেতর অনেক আগ্রহ দেখেছি। মানুষ হিসেবে ওনার কমিটমেন্ট ছিল সত্য পথে চলা। সেটার সঙ্গে শুদ্ধ নজরুল চর্চা করার কমিটমেন্টও ছিল। কোন অহঙ্কার ছিল না। মানুষ হিসেবে অতি উত্তম ছিলেন। স্বল্পভাষী এবং খুবই ভদ্রলোক ছিলেন। আমাদের খুব স্নেহ করতেন এবং সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পরিণত বয়সে উনি চলে গেলেন এটা ঠিক কিন্তু তার পরেও ওনার সৃষ্টির জন্য উনি বেঁচে থাকবেন। ফাতেমা তুয জোহরা : মৃত্যু যেন দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে। একের পর এক গুণী মানুষদের আমরা হারাচ্ছি। এই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলেন আমাদের আরও একজন গুণী শিল্পী খালিদ হোসেন। আমরা শুধু একজন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী, গবেষক ও স্বরলিপিকারকেই হারাইনি। এর সঙ্গে হারালাম আমাদের অভিভাবককে। নজরুল সঙ্গীতের এই কিংবদন্তি আজীবন তার কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ফেরদৌস আরা : আমাদের দেশে যারা নজরুল সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন তাদের মধ্যে খালিদ হোসেনের অবদান অনেক বেশি। তার কণ্ঠে জাদু আছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই তার কণ্ঠে গান শুনত। শিল্পীদের চলে যাওয়াদের তালিকায় অবশেষে তিনিও নাম লিখালেন। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি। তিনি নিশ্চয়ই ভাল থাকবেন। সুজিত মোস্তফা : বাংলাদেশে নজরুল সঙ্গীতের আন্দোলন অর্থাৎ এটিকে জনপ্রিয় করার জন্য খালিদ হোসেনের ত্যাগ অনেক বেশি। তার হাত ধরেই আমাদের দেশে নজরুল সঙ্গীত জনপ্রিয়তায় একধাপ এগিয়ে যায়। তিনি নজরুল সঙ্গীতের বাইরে ইসলামী সঙ্গীত ও আধুনিক গানও করতেন। তিনি শিল্পী ছাড়াও ছিলেন একজন শিক্ষক। ফলে তার অনেক ছাত্রছাত্রী আছেন। যারা তার কাছে নজরুলের তালিম নিয়েছেন। তার চলে যাওয়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। কনকচাঁপা : বেদনা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলাম। এত তাড়াতাড়ি আমরা একের পর এক কেবল গুণীদের হারাচ্ছি। সহ্য করা আসলেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একদম কলকাকলির শিল্পী হওয়া কাল থেকে অর্থাৎ ৭৬ সাল থেকে ওনাকে চিনি। শিশুশিল্পী হিসেবেই অনেক আদর-স্নেহ পেয়েছি। খুব ভদ্র ধার্মিক স্বল্পভাষী সুভাষী ধোপদুরস্ত মানুষ ছিলেন। শেষ ওনাকে চ্যানেল আইতে দেখেছি। সেই একইরকম ভদ্রতা! এমন মানুষই আসলে শিল্পী। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী : খালিদ স্যারের প্রস্থান নজরুল সঙ্গীতের জন্য খুবই ক্ষতি হলো। শুদ্ধভাবে নজরুল সঙ্গীত চর্চা খালিদ স্যারই প্রথম থেকে ধরে রেখেছিলেন। নিজে গেয়েছেন, আমরা যারা ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম তাদেরও শিখিয়েছেন। যারা বিকৃতভাবে গেয়েছেন তাদের সচেতন করেছেন। তিনি আপদমস্তক একজন গুণী শিল্পী ছিলেন। সব সময় আনন্দের সঙ্গে গান শেখাতেন।
×