ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

চিকিৎসার জগতে ঝড় তুললো মাইক্রোসফট—রোগ শনাক্তে ৮/১০ সফলতা এআই-এর!

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসার জগতে ঝড় তুললো মাইক্রোসফট—রোগ শনাক্তে ৮/১০ সফলতা এআই-এর!

ছবি: সংগৃহীত

মাইক্রোসফট সম্প্রতি এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেমের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে, যা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্তে মানব চিকিৎসকদের চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স করেছে। প্রতিষ্ঠানটি একে বলছে—‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুপার ইন্টেলিজেন্স’-এর পথে এগিয়ে চলা।

মাইক্রোসফটের এআই ইউনিটটি পরিচালনা করছেন ব্রিটিশ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মুস্তাফা সুলেইমান। তারা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন, যা একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতো আচরণ করে এবং “বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ও জটিল” রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কাজ করে।

মাইক্রোসফট জানায়, ওপেনএআই-এর উন্নত o3 মডেলের সঙ্গে এই সিস্টেম যুক্ত করে তারা বিশেষভাবে নির্বাচিত ক্লিনিক্যাল কেস স্টাডির মধ্যে ৮টির বেশি ‘সমাধান’ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে একই কেস স্টাডিগুলো যখন একক চিকিৎসকদের দিয়ে সমাধান করতে বলা হয়—যাদের কাছে সহকর্মী, পাঠ্যবই বা চ্যাটবটের কোনো সাহায্য ছিল না—তখন সঠিক রোগ নির্ণয় হয় মাত্র ২টি ক্ষেত্রে।

মাইক্রোসফট আরও দাবি করে, এই এআই চিকিৎসকদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম খরচে এবং দ্রুত পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি চাকরি হারানোর ভয়কে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছে, এই এআই চিকিৎসকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে, প্রতিস্থাপক নয়। মাইক্রোসফট তাদের ব্লগপোস্টে লিখেছে,
“চিকিৎসকদের ভূমিকা শুধুমাত্র রোগ নির্ণয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের রোগীর সঙ্গে আস্থা গড়ে তুলতে হয়, জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়—যা এআই এখনো করতে সক্ষম নয়।”

তবে ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুপার ইন্টেলিজেন্স’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করায় অনেকেই মনে করছেন, এটি স্বাস্থ্যখাতে এক আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

যেখানে এজিআই (Artificial General Intelligence) বলতে বোঝায়—মানুষের যেকোনো কাজের চিন্তাশক্তি অনুকরণে সক্ষম একটি সিস্টেম, সেখানে সুপারইন্টেলিজেন্স বোঝায় এমন একটি সিস্টেম, যা সব দিক থেকে মানুষের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে।

সুলেইমান বলেন, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যেই এই সিস্টেম কার্যত নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারবে।
“এটি খুবই স্পষ্ট যে, আমরা এমন একটি অবস্থার দিকে যাচ্ছি যেখানে এই সিস্টেমগুলো প্রায় ত্রুটিমুক্ত হবে। এটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেবে,”—বলেছেন তিনি।

এই গবেষণার পেছনের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাইক্রোসফট প্রশ্ন তোলে, কেন এআই এত ভালোভাবে United States Medical Licensing Examination-এ (মার্কিন চিকিৎসা লাইসেন্স পরীক্ষায়) সাফল্য দেখায়। তারা জানায়, এই এমসিকিউ-ভিত্তিক পরীক্ষা মুখস্থভিত্তিক উত্তর নির্ভর করে, বিষয়বস্তুর গভীর অনুধাবন নয়—যা হয়তো এআই-এর সামর্থ্যকে অতিমূল্যায়ন করতে পারে।

তাই মাইক্রোসফট একটি এমন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা বাস্তব চিকিৎসকের মতো ধাপে ধাপে প্রশ্ন করে, টেস্ট সাজেস্ট করে এবং অবশেষে একটি রোগ নির্ণয়ে পৌঁছায়। যেমন: কাশি ও জ্বর নিয়ে আসা রোগীর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে নিউমোনিয়া শনাক্ত করতে হলে রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে প্রয়োজন হয়।

এই গবেষণায় তারা New England Journal of Medicine (NEJM)-এর জটিল কেস স্টাডিগুলো ব্যবহার করেছে। সুলেইমানের দল ৩০০টিরও বেশি কেস স্টাডিকে ইন্টারঅ্যাকটিভ চ্যালেঞ্জে রূপান্তর করে এবং তাতে এআইয়ের সক্ষমতা যাচাই করে।

মাইক্রোসফটের পদ্ধতিতে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই ছাড়াও মেটা, অ্যানথ্রপিক, এলন মাস্কের গ্রোক এবং গুগলের জেমিনির মতো এআই মডেল ব্যবহার করা হয়েছে।

তাদের মূল সাফল্যের পেছনে রয়েছে একটি ‘ডায়াগনস্টিক অর্কেস্ট্রেটর’, যা একজন চিকিৎসকের মতো কাজ করে—কোন পরীক্ষা দরকার, কোন প্রশ্ন করতে হবে, কোন রোগটি হতে পারে—তা বুঝে নেয় এবং ফলাফল দেয়। এটি মূলত একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ বোর্ডের মতো আচরণ করে।

ওপেনএআই-এর o3 মডেলের সঙ্গে যুক্ত করে এই পদ্ধতিতে NEJM-এর ১০টি জটিল কেস স্টাডির মধ্যে ৮টির বেশি সঠিকভাবে ‘সমাধান’ করা যায়—যেখানে মানব চিকিৎসকদের সাফল্য মাত্র ২টি।

মাইক্রোসফট বলছে, তাদের এই পদ্ধতি একক চিকিৎসকের তুলনায় বেশি গভীর ও ব্যাপক দক্ষতা দেখাতে পেরেছে, কারণ এটি একাধিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান একত্রে ব্যবহার করতে পারে।

তারা আরও যোগ করেছে, “এই ধরনের যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণকে স্কেল করা—এবং এর চেয়েও এগিয়ে যাওয়া—স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে রোগীরাও নিজেদের প্রাথমিক চিকিৎসা পরিচালনায় সক্ষম হতে পারেন, আর জটিল রোগে চিকিৎসকদের উন্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে এআই।”

তবে মাইক্রোসফট স্বীকার করেছে, এই প্রযুক্তি এখনো ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। বিশেষ করে, সাধারণ উপসর্গগুলোর ক্ষেত্রে ‘অর্কেস্ট্রেটর’-এর আরও পরীক্ষা দরকার।

আবির

×