ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের কেজি ৮ টাকা, বিপাকে চাষিরা

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২২ মে ২০১৯

ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের কেজি ৮ টাকা, বিপাকে চাষিরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায মূল্য না পাওয়ায় হতাশায় দিনপার করছেন চাষীরা। ধান বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারছেন না- এমন অভিযোগ চাষীদের। এমনকি বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় কাঁচা ধান নিয়ে বিপাকে পরেছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছেন বিশেষ পদ্ধতিতে আপদত ধান সংরক্ষণ রেখে কিছুদিন পর বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৩শ’ ৬০ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ৩শ’ ৫০ হেক্টর। কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ টন আর এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ টন হয়েছে। আশানরুপ ফলন হলেও ধান উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের দাম বেশি থাকায় লোকশানের মুখে পরেছেন চাষীরা। গত মৌসুমের ধান ব্যসায়ীদের ঘরে জমে থাকায় ধান ক্রয়ে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। তাই বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় দাম কমেছে ধানের। বড়গাঁও এলাকার কৃষক আশারু বর্ম্মন, সাকিল, হেকম জানান, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, বাজারে সবকিছুরই মূল্য বেশি শুধু কৃষকের উৎপাদিত ফসলের কোন মূল্য নেই। বাজারে ধানের ক্রেতা এবং ন্যায্য দাম কোনটাই নেই। ফলে কৃষক তাদের ধান বিক্রি করে লাভ তো দূরে থাক উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না। এরপর আর ধান চাষ করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। নেকমরদন হাটে আগত ধানের ব্যবসায়ী ফারজুল, খলিলুর, হযরত আলী জানান---সরকার যদি বিদেশ থেকে ধান-চাল আমদানী না করে দেশের ধান-চাল রপ্তানী না করে তাহলে কৃষক তার ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে না বলে উল্লেখ করেন । জেলায় এবার ১৬শ’ ৯০টি হ্যাস্কিং মিল ও ১৭ টি অটো রাইস মিলের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৬শ’ ১৯ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার ৮শ’ ৫৭ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করবে সরকার। যা উৎপাদনের তুলনায় সামান্য। জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, বর্তমানে বাজারে যে ধান আমদানি হচ্ছে তা কাঁচা ধান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি আদ্রর্তায় আনলে ৪০ কেজিতে ১০ কেজি কমে যাবে। তাই বাজারে ধানের দাম কম সত্য হলেও ভাল ধানের দাম কিছুটা ভাল আছে। তিনি আরও বলেন, বিগত দিনের চেয়ে এবছর ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া গত আমন মৌসুমের ধান এখনও মিলারদের কাছে মজুত থাকায় ধান ক্রয়ের আগ্রহ নেই মিলারদের। মিলাররা যে পরিমাণ বরাদ্দ পেয়েছে তাতে গত মৌসুমের ধান শেষ হবে না। তবে সরকার যদি আরও বরাদ্দ দেয় তাহলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য সকল উপাদন সময় মত পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষীদের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজারে যে দাম তাতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তবে ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পরে লাভবান হতে পারে। এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি ধান চাষীদের তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ে ধান-চাল ক্রয় শুরু হবে। ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় শুরু করলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে। কৃষকের ঘাম ঝড়ানো উৎপাদিত ফসলের মূল্য প্রদানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ-সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন----এমনটাই দাবী মেহনতী চাষীদের।
×