ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর ঘটনা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৬ মে ২০১৯

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর ঘটনা বাড়ছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট শিবিরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। এরা কোন না কোনভাবে প্রতিনিয়ত অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার তৎপরতায়ও লিপ্ত রয়েছে। এ তৎপরতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলেই প্রতীয়মান। সরকারী-বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফের ৩০ আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের থাকার কথা। কিন্তু বিভিন্ন তথ্যমতে এসব ক্যাম্প থেকে ১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে সটকে পড়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন আত্মগোপন করছে, তেমনি সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াসহ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো তৎপরতায় লিপ্ত আছে। এ সুযোগে মানব পাচারকারী চক্রও দিন দিন সক্রিয় হচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার মহেশখালী থেকে মালয়েশিয়াগামী ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে নারী শিশুও রয়েছে। অপরদিকে, গত শুক্রবার ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আটক হয়েছে ২৩ রোহিঙ্গা কিশোরী। পুলিশ এদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করার পর নিজ নিজ ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিলে তাদের কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উখিয়ায় পুনঃপ্রেরণ করা হয়। এ দুটি ঘটনা সর্বশেষ হলেও অজ্ঞাতসারে আটক হচ্ছে না এমন রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। ক্যাম্পের মাঝিরা জানিয়েছেন, আশ্রয় শিবিরগুলো নিরাপত্তার কঠোর নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অন্যত্র সরে যাওয়ার পথ সুগম করে নিচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে লাখে লাখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর মানবিক কারণে সরকার এদের আশ্রয় দিয়েছে। দিয়েছে মানবিক সহায়তা। এছাড়া বহির্বিশ্ব থেকে এদের জন্য বিভিন্ন মাত্রার ত্রাণ সহায়তাও এসেছে। মিয়ানমার পক্ষ এদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পরও তা থেকে বিরত রয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে এ মুহূর্তে ফিরে যেতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ফিরে যাওয়ার আগে এদের রয়েছে নাগরিকত্ব প্রদানসহ বেশ কিছু দাবি। যার মধ্যে ৬টি অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমার পক্ষ এসব দাবির কোন সায় দিচ্ছে না। অপরদিকে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করা হলেও এতে সে দেশের সরকার এসব চাপের প্রতি নথি স্বীকার করছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের গলার কাটা হয়ে আছে। এদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণনেশা মাদক ইয়াবার পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এসব রোহিঙ্গার জনগোষ্ঠীর একটি অংশ। শুধু তাই নয় আশ্রয় শিবিরে রয়েছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দফায় বহু ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসন বহুবিধ চেষ্টা চালিয়েও এদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। ইতোপূর্বে টেকনাফ থেকে দলে দলে সমুদ্রপথে বহু রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেও অনুরূপ তৎপরতা শুরু হয়। যা এখনও চলছে। মহেশখালী থেকে মালয়েশিয়া পাচার হয়ে যাওয়ার পথে গত রবিবার ২৬ রোহিঙ্গা আটকের ঘটনাটি এ পর্যন্ত সর্বশেষ। বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে বহু রোহিঙ্গা সাগরপথে ইঞ্জিন বোটযোগে বাংলাদেশী জলসীমা ছেড়ে গেছে। এরা ঠিক কোন গন্তব্যে পৌঁছেছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু বর্তমানে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এরা ক্যাম্প থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। সূত্রমতে, এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। সবকিছু চলছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। এদের প্রত্যেকের হাতে হাতে রয়েছে বাংলাদেশের সিমের মোবাইল ফোন। ফলে কোথায় কখন কিভাবে এরা স্থানান্তরিত হবে তাতে তাদের কোন বেগ পেতে হয় না। এ প্রক্রিয়া মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে অনেকে আটক হয়ে পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার পর এরা কি থেকে যাচ্ছে- নাকি পুনরায় অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের এবং দেশের জন্য উৎকণ্ঠার বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর পক্ষ থেকে মত ব্যক্ত করা হয়েছে।
×