ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অভিমত

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসনে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না

প্রকাশিত: ১০:২১, ৬ মে ২০১৯

 অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসনে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নগরায়ণের প্রসারের পাশাপাশি আবাসন খাতও প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা এবং দিক-নির্দেশনার অভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে আবাসন খাতের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১০ তলার উর্ধে একটি ইমারত নির্মাণ করতে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, ডিএমপি, পরিবেশ অধিদফতর, তিতাস, ডেসকো, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সিভিল এভিয়েশনসহ মোট ১১ প্রতিষ্ঠানের অনুমোাদনের প্রয়োজন হয়। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আবাসন খাতের সমৃদ্ধির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি আবাসন খাতের বিকাশে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘আবাসন খাতের চ্যালেঞ্জ: নগরায়ণ ও বিকেন্দ্রীকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন আবাসন মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন। রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামীন বলেন, এ পর্যন্ত রিহ্যাব ২ লাখ ফ্ল্যাট ও ৭০ হাজার প্লট হস্তান্তর করেছে। তিনি বলেন, সরকারকে কেন ব্যবসা করতে হবে। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে বেসরকারী খাত এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে আসছে এবং এটি চলে যাচ্ছে গ্রামে। অন্যদিকে গ্রামের লোকজন চলে আসছে শহরে। গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হলে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তিনি জানান, ব্যাংকিং খাত থেকে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা কোন সুযোগ সুবিধা পান না। রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী বলেন, প্লট ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এটি কমানো না হলে এ খাতের কোন উন্নতি হবে না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে ভবন তৈরি হয় কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার হয়।’ তিনি জানান, ‘পরিকল্পনা ছাড়াই মিরপুর ডিওএইচএসের পাশে ৩৩ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। সেখানে প্রশস্ত সড়ক নেই, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে দেখবে এটি?’ উত্তর সিটি মেয়র জানান, ‘রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে ৪৯ হাজার লোক বাস করেন। অন্যদিকে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণখান এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে বাস করেন ২৩ হাজার লোক। এখন সময় এসেছে বিষয়টি ভাবার।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীর মিরপুরের কালশী খাল খনন করতে গিয়ে পাওয়া গেছে টিভি, ফ্রিজ, সোফা ইত্যাদির পুরনো যন্ত্রাংশ। অথচ এই খালে পাওয়ার কথা ছিল মাছ। তাই আমি অচিরেই এসব পুরনো ময়লা দিয়ে মেলার আয়োজন করে নগরবাসীকে দেখাতে চাই।’ তিনি আরও জানান, ‘অনেকেই ছাদ থেকে, গাড়ি থেকে, বাসা-বাড়ি থেকে রাস্তার মধ্যে ময়লা ফেলছেন। এটি ঠিক নয়। অথচ আমরা বিদেশে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি না। তাই আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’ শহরকে নিরাপদ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র আতিকুল জানান, ‘ইতোমধ্যে রাজধানীতে ২৭ খেলার মাঠ চিহ্নিত করা হয়েছে। যা শীঘ্রই খেলার মাঠ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ঢাকা সিটিকে স্মার্ট সিটিতে রূাপান্তরের কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, খুব শীঘ্রই নগরবাসী মোবাইলে এ্যাপসের মাধ্যমের ট্যাক্সের টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন।’ ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসির বলেন, নগরায়ণের প্রসারের পাশাপাশি আবাসন খাতও প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা এবং দিক-নির্দেশনার অভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে আবাসন খাতের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১০ তলার উর্ধে একটি ইমারত নির্মাণ করতে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, ডিএমপি, পরিবেশ অধিদফতর, তিতাস, ডেসকো, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সিভিল এভিয়েশনসহ মোট ১১ প্রতিষ্ঠানের অনুমোাদনের প্রয়োজন হয়। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আবাসন খাতের সমৃদ্ধির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আবাসন খাতের বিকাশে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। গুলশান, বারিধারাসহ ঢাকার অন্য অঞ্চলে জমির মূল্য গত একদশকে ২ থেকে ৩ গুণ বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রী যেমন বালু, সিমেন্ট, রডের দাম বেড়েছে ২ থেকে ২.৫ গুণ। পাশাপাশি, আবাসন খাতের আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো প্রফেশনাল রেটিং পদ্ধতির অভাব। এই রেটিং পদ্ধতির অভাবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মান যাচাই করা ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ওসামা তাসির বলেন, ক্ষমতা এবং উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের শুধু কাগজে নয় বরং সুনির্দিষ্ট নীতি এবং দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ আরও কার্যকর করা সম্ভব। বিকেন্দ্রীকরণকে সফল করতে প্রশাসনিক সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং জেলাগুলোতে আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ভূমিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। সরকারের ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। আমরা এই সময়ের আগেই মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে যাব। এছাড়া ২০৩০ ও ২০৪১ নিয়ে আমাদের যে ভিশন রয়েছে তা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে এখন দাঁড়িয়ে আছি। এক সময় নিজেকে বেসরকারী খাতের লোক দাবি করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশের এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বেসরকারী খাত। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সহযোগিতা করেছে বেসরকারী খাতকে। সরকার যদি ব্যবসাবান্ধব না হতো তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, ‘তবে সব কিছু সব সময় সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। যে সরকার এটা করবে, ওটা করবে। আমাদের যার যার দায়িত্বটুকু ঠিকভাবে পালন করলে দেশ বদলে যাবে।’ আবাসন খাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ীরা এমনভাবে দৌড়াচ্ছেন। তারা বিশাল বিশাল জমি কিনে ফেলছেন। এর কারণেই রাজধানীতে জমির দাম বেড়েছে। এখন আবাসন ব্যবসায়ীরাই বলছেন, ফ্ল্যাটের চেয়ে প্লটের দাম তিনগুণ বেড়েছে।’ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাই জমির ব্যবসায়ীদের লোভী বানালেন। চড়া দামে জমি কিনে আপনারা একের পর এক ফ্ল্যাট বানালেন। স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বাড়লে তো দাম বাড়বে।
×