ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে বসেই কৃষক পাচ্ছেন ডিজিটাল কৃষিসেবা

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

মাঠে বসেই কৃষক পাচ্ছেন ডিজিটাল কৃষিসেবা

কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস। মিরপুরের কৃষির সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাধারণ কৃষকের সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করেছে এই অফিসের কর্মকর্তাগণ। ফসলের রোগবলাই, কোন্ সময়ে বা কোন্ মাসে কি কি করণীয় সেটা তাৎক্ষণিক কৃষকের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে প্রচার। এই ফেসবুক পেজে উপজেলা কৃষির সকল তথ্য কৃষকের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে খুব সহজেই। এতে কৃষকের একদিকে বাঁচছে সময় অন্যদিকে অর্থ। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা এবং ইউনিয়ন কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তাগণ ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছে। এতে সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের শাহাপুর মাঠে দেখা যায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনকে কৃষকদের ডিজিটাল ট্যাবের মাধ্যমে কৃষি সেবা দিতে। সেখানে তিনি বোরো ধানের জমিতে যাতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ না হয় ও হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং তার প্রতিকার কি সে সম্পর্কে তিনি কৃষকদের আগাম সতর্কতা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে ফসল ব্যবস্থাপনা, রোগ, পোকা-মাকড় সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছেন তিনি। মাঠে বসেই ডিজিটাল এ্যাপসের মাধ্যমে ধানের জমিতে কোন রোগ দেখা দিয়েছে কিনা তা মিলিয়ে দেখছেন শাহাপুর এলাকার কৃষক খাইরুল মালিথা। তিনি জানান, মোবাইলে নাকি কিভাবে ধানের চাষ করতে হয়, দেখায়। পোকা লেগেছে কিনা দেখা যায়, রোগ হয়েছে কিনা তা দেখা যায়। সেটাই আজকে নিজে হাতে দেখলাম। এই ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের শেখালেন ধানের কোন সময় কি দিতে হবে এবং ব্লাস্ট রোগ হওয়ার আগে আমাদের কি কি করতে হবে, যাতে এ রোগ না হয়। কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। তাই আমরাও এখন ডিজিটাল। কৃষি অফিসের লোকজন আমাদের মাঠে এসেই পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরাও আমাদের যে কোন অসুবিধা হলেই কৃষি অফিসে ফোন দিয়ে সমাধান পাই। এছাড়া এখন আর টাকা খরচ করে কৃষি অফিসে যেতে হয় না। ফোন দিয়েই আমরা সেবা নিতে পারছি। এতে আমাদের সময় এবং টাকা দুটোই বেঁচে যাচ্ছে। কৃষক মনোয়ার মন্ডল জানান, আমার বেগুনের জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। আমি কৃষি অফিসে গিয়ে বিষয়টি বলি। তাদের পরামর্শ নিয়ে উপকার পেয়েছি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, বিভিন্ন ফসল চাষের ক্ষেত্রে কৃষকের যে কোন সমস্যা দেখা দিলে আমরা চেষ্টা করি তাৎক্ষণিক সেটার সমাধান করার জন্য। নিরাপদ উপায়ে চাষাবাদ এবং আধুনিক চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি বিভাগ বর্তমানে কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দিতে জোর দিয়েছে। কৃষি কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে আমরা কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কৃষি বিভাগও এগিয়ে রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় ২৩টি ডিজিটাল ট্যাবে বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে এবং উপজেলার সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে সর্বক্ষণিক কৃষি সেবা নিশ্চিত করছি। এছাড়াও কৃষককে পরামর্শ দেয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা সেবা দিচ্ছি। বতর্মানে অনেক কৃষক স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। আমরা তাদের কাছে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন এ্যাপস পৌঁছে দিচ্ছি সেই সঙ্গে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং মাঠে গিয়ে কৃষকদের সেবা দেয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলায় কর্মরত প্রতিটি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ সকলেই মাঠে গিয়ে হাতেকলমেও কৃষককে আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া অব্যাহত রেখেছে। কৃষকরা আমাদের কাছে পরামর্শ চাইতে আসার আগেই আমরা চেষ্টা করছি তাদের কাছে গিয়ে পরামর্শ পৌঁছে দেয়া।
×