ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

কবিতা

আদিত্য নজরুল কাঁটা ছাড়া গোলাপ মাথা উঁচু করে বাঁচেনা জীবন আমার কাছে সবিনয়ে গোলাপ চাইলো, তার হাতে গোলাপ দিতেই চিৎকার করে বললো জীবন কী করছো- ফুলের আড়ালে দেখি কাটারসম্বার! কাঁটা শব্দ শুনে জীবনের প্রতি মমত্ববোধ তৈরি হলো ভাবলাম: আর ভুল নয় জীবনের হাতে দৃষ্টিনন্দন গোলাপ দিবো। কাঁটা ছাড়াতে গিয়ে দেখি কোথায় যেনো একটি সাংসারিক বোঝাপড়া আছে কাঁটা ও গোলাপের সঙ্গে সঙ্গে আমি জীবনকে কাঁটার আঘাত সইতে বললাম। এবং ভাবলাম কাঁটা ব্যতিত গোলাপ মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে না। মনটা পিঁড়ি পেতে বসে আছে সজনে ডালের মতো নরম কোমল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে মন। খুব মনে পড়ছে বাড়ির কথা; বহুদিন বাড়িতে যাইনি বলে উঠোনের বড় জাম গাছটাও ক্ষমাপ্রার্থনাকারীর ঢংএ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাক শুনতে শুনতে অন্ধকারে উঠোন তলিয়ে যাচ্ছে আমি বাড়ি যাইনি বলে। বাড়ি যাইনি বলে মলান দেওয়া খড়গুলো গুটিয়ে নিয়েছে শামুকের মতো করে। খুব মনে পড়ছে বড়ির কথা বাড়ি যাবো শুনলেই মা কেঁদে উঠবেন হমহম বৃষ্টির শব্দে। ** মামুন অপু হৃদয়ে হোয়াংহো নদী হোয়াংহো নদী বয়ে যায় হৃদয়ের পাড় ঘেঁষে কুনলুন পর্বত আমার চোখে অমাবস্যার রাতে বেড়ে যায় স্রোত শিশির দানাও ঝরতে থাকে প্রবল প্রতাপে কাশফুলের পাড় ভেঙ্গে যায় দুঃখ ঢেউয়ের নির্মম আঘাতে। তবে আমি কোথায় যাবো হে দুঃখ! আমার আফ্রোদিতি ঘুমিয়ে আছে কোন শান্তির কোলে? পৃথিবীর প্রতিটি দেশে কি ট্রয়ের যুদ্ধ? ভিঞ্চির চোখে মোনালিসার রূপ দেখেছে আধুনিক বিশ্ব আমার আফ্রোদিতি দেখেনি কেউ। তোমার জন্ম সমুদ্রের ফেনায় অথচ তুমি নদীর দুঃখ বুঝবে না? তোমাকে দেখেছি ফেরদাউসের দুয়ারে নিম্পের সাথে খোশগল্প করতে করতে সুরা পান করো আমাকেও নিয়ে যাও তোমার স্বর্গে অথবা তুমি এসে আমার হোয়াংহো নদীতে আমাকে নিয়ে ডুবে যাও। ** তামিম চৌধুরী হেঁটে পার হও জলভরা নদী তোমাকে চাইলাম। তুমি বললে, এই পারে আসো। আমি নৌকো নিলাম, বললে “হবে না” আমি সাঁতার দিলাম, বললে “নিষেধ” হতভম্বের মতো শুধালাম তোমাকে “তবে?” বললে, চেয়েছো যেহেতু পাবে পেতে হলে জলের ওপরে হেঁটে এই নদী পার হও। আমি জলে নামি, হাঁটি। হাঁটতে গিয়ে ডুবে যাই ডুবতে ডুবতে তোমাকে পাবার আকাক্সক্ষা আরো সুতীব্র হয়। অতল জলে একদিন দিব্যি হাঁটবো ডুববো না, পায়ের পাতাটিও ভিজবে না। এইযে আমার কণ্ঠ ছুঁয়ে বলছি এইযে আমার চোখ ছুঁয়ে বলছি তোমাকে দেখাবো- প্রেমে পড়লে কী করে পায়ের পাতা না-ভিজিয়ে জলভরা অতল নদী হেঁটে হেঁটে পার হওয়া যায়। ** ভালোবাসার খুঁটি আমি তোমার উরুতে মাথা রেখে বুকের সুগন্ধ নেবো অনন্তকাল... চামড়ার ভাঁজ যদি মানচিত্রের মত বিভাজন আঁকে যৌবনের; সে ভাঁজে চুমুর স্পর্শে নদী বয়ে যাবে কিনার ধরে সাদা পশমগুলো কাশফুল হবে চৈতের রুক্ষতা থাকুক সারা অঙ্গে; থাকুক না... চৈত্রেও কৃষক বীজ বুনে গভীর বিশ্বাসে। তুমি আমি অনাদিকালের প্রেম সূত্র হবো যুগলের প্রেম চিত্তে শুধু ছুঁয়ে থাকো আমার সমস্ত পরতে পরতে বাঁধাকপির মত পঁচে যাওয়া ভেলা হয়ে দুজন আঁকড়ে থাকবো দৃঢ় বিশ্বাসে ভালোবাসার খুঁটিতে। ** এক পা ওয়ালা এক পা নিয়ে জন্মেছি বলে আমাকে সুখের কাছে যেতে হলে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হয়। যাবার সময় ডানপাশে মাটির ওপর এক পায়ে লাফানো ছায়াটা দেখে খুব খারাপ লাগে! আমি ছাড়া আর সবাই ঘোড়দৌড়ে সুখের কাছে পৌঁছাতে পারে। শুধু আমিই হস্তরেখায় বিপন্ন কুরুক্ষেত্র নিয়ে জন্মেছি মুঠো খুললেই দেখি ওখানে আমার জন্যে বাঁকানো ধনুকের তীর প্রতীক্ষারত। আমার ছায়াটাকে এক পায়ে লাফাতে দেখি খুব যন্ত্রণা হয় যেন চুপচাপ গাছের খোঁড়লে নীড় বেঁধে ঘুমিয়েছিলাম আমি একটি কালো পাখি অল্প আগে যার উরুতে দংশন করেছে বিষধর সাপ!
×