ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 এবার কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্ন ফাঁসের কবলে পড়েছে এবার সরকারী স্বীকৃতি পাওয়া কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) সমমান করার পর এবার কওমি মাদ্রাসাগুলোর সরকারী সর্বোচ্চ সংস্থা বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহর অধীন চলমান এ পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বাতিল করা হয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শনিবার জরুরী এক বৈঠকে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় হেফাজতের আমির আহমদ শফীর নিয়ন্ত্রণাধীন আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। পরীক্ষায় ফরিদাবাদ মাদ্রাসাসহ দেশে কয়েকটি স্থানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার পরই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে। বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী জানান, তার সভাপতিত্বে শনিবার সকাল সাতটায় রাজধানীর মতিঝিলের আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ায় তাকমিল হাদিসের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছিল। আল্লামা আশরাফ আলী আরও জানান, সকাল সোয়া ৭টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে। উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা শামসুদ্দিন জিয়া, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা সাজিদুর রহমান প্রমুখ। বৈঠকে একাধিক আলেম প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরেও কয়েকজন তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেন। এরপরই সকলে একমত হন পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে। একই সঙ্গে নতুন করে প্রশ্ন করে পরবর্তীতে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রশ্নপত্র পরিবহন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে নেয়া, বিশেষ তালার ব্যবস্থা করা, তালার চাবি সুনির্দিষ্ট এক থেকে দুজনের কাছে রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা আলেমরা। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সদস্য জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে যেসব মাদ্রাসার নাম এসেছে, কেন্দ্রের তালিকা থেকে সে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাতিল করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে পরীক্ষা বাতিল করে এ ঘটনার তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ এ সংস্থা। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলো- তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমিন, সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ও মাওলানা মাহফুজুল হক। বোর্ডের সদস্য মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া জানান, পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ, প্রশ্নফাঁসরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। আরেক সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দিন রাজু জানান, বাতিল হওয়া সকল পরীক্ষা নতুন করে অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠকে পরীক্ষার নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত ৮ এপ্রিল থেকে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হয়। আগামী ১৮ এপ্রিল পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। ছয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২৬ হাজার ৭২১ শিক্ষার্থী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ছয়টি শিক্ষা বোর্ড হলো- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ২০১৭ সালের গণভবনে প্রধানমন্ত্রী আলেমদের উপস্থিতিতে কওমি মাদ্রসারা দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) সমমান স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় গঠিত হয় দেশের ছয়টি কওমি মাদ্রসা বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি ‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামের এ সংস্থাটি। এ সংস্থার চেয়ারম্যান হেফাজত নেতা আহমদ শফী।
×