ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য বিএসপিএ এ্যাওয়ার্ড

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বর্ণাঢ্য বিএসপিএ এ্যাওয়ার্ড

হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির (বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে বিএসপিএ) বয়স এখন ৫৭। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রীড়া সাংবাদিকদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে পুরনো। এটি এখন স্বীয় নৈপুণ্যগুণে সমুজ্জ্বল হয়ে বাংলাদেশের অন্যতম একটি সাংগঠনিকভাবে সফল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এর সুনাম বেড়েই চলেছে। বিএসপিএর জন্ম ১৯৬২ সালে। প্রথমে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়ালেখক সমিতি। পরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে ১৯৭২ সালে এর নতুন নাম হয় বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি। অনেক খ্যাতনামা ও কালজয়ী সাংবাদিক-ক্রীড়ালেখক এই সংগঠনের সদস্য হয়েছেন। এই সংগঠনটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সঠিক ও যোগ্যদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর পুরস্কার দিয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানের ‘মানদ-’ হিসেবে বিএসপিএ স্পোর্টস এ্যাওয়ার্ড’কেই সবসময়ই বিবেচনা করা হয়। অনেক খ্যাতনামা ক্রীড়বিদ আছেন, যারা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেও ক্রীড়ালেখক সমিতির পুরস্কার না পাওয়ায় অনেক আক্ষেপ করেন। তাদের সবাই একটা বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেন, ‘দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অস্কার হচ্ছে বিএসপিএ এ্যাওয়ার্ড!’ অনেক প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক আছেন, যারা বহু বছর ধরে খেললেও বা খেলাধুলা নিয়ে কাজ করলেও এখনও ক্রীড়াঙ্গনের অস্কার খ্যাত বিএসপিএ এ্যাওয়ার্ড লাভ করতে পারেননি। গত ৬ এপ্রিল, শনিবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ২০১৮ সালের সেরাদের পুরস্কৃত করা হয়। ‘বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ২০১৮’ হয়েছেন শূটার আব্দুল্লাহ হেল বাকী। এক্ষেত্রে তিনি পেছনে ফেলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম এবং জাতীয় মহিলা দলের ক্রিকেটার রুমানা আহমেদকে। এছাড়া ‘পপুলার চয়েজ এ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ লাভ করেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খান। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পান বর্ষসেরা ক্রিকেটার : মুশফিকুর রহীম, বর্ষসেরা ফুটবলার : তপু বর্মণ, বর্ষসেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় : শাপলা আক্তার, বর্ষসেরা শূটার : আব্দুল্লাহ হেল বাকী, বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রীড়াবিদ : সিরাত জাহান স্বপ্না (ফুটবলার, জাতীয় মহিলা দল), মেহেদী হাসান আলভী (টেনিস খেলোয়াড়, জাতীয় দল), বর্ষসেরা কোচ : গোলাম রব্বানী ছোটন (কোচ, জাতীয় মহিলা ফুটবল দল), তৃণমূলের বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব : ফজলুল ইসলাম (হকি কোচ), মনসুর আলী (সংগঠক); বিশেষ সম্মাননা : নাজমুন নাহার বিউটি (সাবেক দ্রুততম মানবী), বর্ষসেরা সংগঠক : নাজমুল হাসান পাপন (সভাপতি, এসিসি এবং বিসিবি) এবং বর্ষসেরা পৃষ্ঠপোষক : বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটারকে পেছনে ফেলে বাকীর সেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার পেছনে অবদান রেখেছে গত বছর অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে শূটিংয়ে ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রৌপ্য জয়। ইভেন্টে ০.০৩ পয়েন্টের জন্য সোনা জেতা হয়নি বাকীর। তাঁর স্কোর ছিল ২৪৪.৭। আর ২৪৫.০ স্কোর পেয়ে সোনা জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ডেন স্যাম্পসন। বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার জিতে বাকী বলেন, এই পুরস্কার আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে আরও অনুপ্রাণিত করবে। দোয়া করবেন যেন ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমসে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারি। আমাকে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের স্বীকৃতি দেয়ায় বিএসপিএকে ধন্যবাদ জানাই।’ গোলাম রব্বানী ছোটন এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জিতলেন বর্ষসেরা ফুটবল কোচের পুরস্কার। জনকণ্ঠের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপনে তিনি বলেন, এই পুরস্করের মূল্য আমার কাছে অনেক। এটা যে আমি তিনবার পেয়েছি, এটা আমার কাছে আশ্চর্যই লাগে। কারণ আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার জীবনের অন্যতম মন্ত্র হলো পরিশ্রম। আমি পরিশ্রম করতে ভালবাসি। আর পরিশ্রম করলে একদিন না একদিন সাফল্য ধরা দেবেই। সামনে এগোতে এই পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করবে, দায়িত্ববোধ বাড়াবে এবং সাহস যোগাবে। আমার এই পুরস্কার পাবার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মহিলা ফুটবলারদের জীবনবাজি দিযে ফুটবল খেলে সফলতা পাওয়াটা। তাদের জন্যই আমি এখানে। তাদের অশেষ ধন্যবাদ।’ নেপালে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েই সুখবরটা পেয়েছিল সিরাত জাহান স্বপ্না। এ প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া, ‘কোচ ছোটন স্যারই আমাকে সর্বপ্রথম জানান আমি ক্রীড়ালেখক সমিতির বর্ষসেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার পাচ্ছি। শুনে ভীষণ ভাল লাগায় ভরে গিয়েছিল মনটা। প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার পেয়ে আমি আরও বেশি তাগিদ অনুভব করছি দেশের জন্য পরিশ্রম করে আরও সাফল্য পাওয়ার।’ শাপলা আক্তার : ২০০৩ সাল থেকে ব্যাডমিন্টন খেলি। এর মাঝে অনেক সাফল্য পেয়েছি, অনেক সংগ্রাম করেছি। কিন্তু একটা সময়ে মনে হয়েছিল, আমি হয়তো কিছুই করতে পারিনি বা সফল হইনি। কারণ ক্রীড়ালেখক সমিতির পুরস্কারটা তো পাইনি। ফলে খেলা ছেড়ে দিয়ে অবসরে চলে যাবার সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়েই ফেলেছিলাম, তখনই এই পুরস্কারটা পেলাম। এতে করে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম। বরং আরও দায়িত্ব নিয়ে, আরও পরিশ্রম করে খেলা চালিয়ে গিয়ে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ব্যাডমিন্টনে এসএ গেমসে এখনও বাংলাদেশ কোন স্বর্ণপদক জেতেনি। ইচ্ছা আছে অবসরের আগে এই অধরা স্বর্ণপদক জেতার।’ এ্যাওয়ার্ডের আকর্ষণীয় তথ্য * সবচেয়ে বেশিবার পুরস্কার লাভ : ৬ বার, সাকিব আল হাসান (ক্রিকেটার, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৭ সালে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ; ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৭ সালে বর্ষসেরা ক্রিকেটার)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ : ৩ বার, সাকিব আল হাসান। * সবচেয়ে বেশি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ : ৩টি, কাজী মোঃ সালাউদ্দিন (১৯৭৯ সালে বর্ষসেরা ফুটবলার, ১৯৯২ সালে বর্ষসেরা ফুটবল কোচ এবং ২০০৯ সালে বর্ষসেরা ফুটবল সংগঠক)। * সবচেয়ে বেশিবার পপুলার চয়েস এ্যাওয়ার্ড লাভ : ২ বার, মাশরাফি মর্তুজা (ক্রিকেটার : ২০১৫ ও ২০১৭)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা ক্রিকেটার : ৩ বার, সাকিব আল হাসান। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা ফুটবলার : ২ বার, মামুনুল ইসলাম (২০১১ ও ২০১৩)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা এ্যাথলেট : ২ বার, মাহবুব আলম (১৯৯৫ ও ১৯৯৯)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা সাঁতারু : ২ বার, মোখলেসুর রহমান (১৯৮৯ ও ১৯৯১) এবং কারার মিজানুর রহমান (১৯৯৩ ও ১৯৯৫)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা দাবাড়ু : ২ বার, জিয়াউর রহমান (১৯৮৯ ও ১৯৯৬), এনামুল হোসেন রাজীব (২০১২ ও ২০১৭) এবং ফাহাদ রহমান (২০১৩ ও ২০১৫)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা শূটার : ২ বার, সাবরিনা সুলতানা (১৯৯৬ ও ১৯৯৯)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা হকি খেলোয়াড় : ২ বার, মামুনুর রহমান চয়ন (২০০৮ ও ২০১২)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় : ২ বার, জোবেরা রহমান লিনু (১৯৮০ ও ১৯৯১)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা কোচ : ৩ বার, গোলাম রব্বানী ছোটন (ফুটবলে : ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৮)। * সবচেয়ে বেশিবার বর্ষসেরা সংগঠক : ২ বার, আহম মুস্তফা কামাল (২০০৪ ও ২০১১)। * সবচেয়ে বেশি সময় পর যে খেলায় পুরস্কার দেয়া হয় : ১৬ বছর (ভলিবলে ২০০০-২০১৬) এবং ব্যাডমিন্টনে (২০০২-২০১৮)। * ২টি খেলায় একসঙ্গে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার পাওয়ার বিরল কৃতিত্ব : বশির আহমেদ (ফুটবল ও হকিতে ১৯৬৬ সালে), আবদুস সাদেক (হকি ও ফুটবলে ১৯৭৭ সালে), রামা লুসাই (ফুটবল ও হকিতে ১৯৮০ সালে) এবং আবুল কালাম আজাদ (ভারোত্তোলন ও শরীরগঠনে ১৯৮১ সালে)। * ক্রীড়ালেখক সমিতির একমাত্র অনারারি সদস্য হিসেবে পুরস্কৃত : ৩ বার, কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। * ক্রীড়ালেখক সমিতির যেসব সদস্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত : এএসএম রকিবুল হাসান (বর্ষসেরা ক্রিকেটার : ১৯৭৫), মোস্তফা কামাল (বর্ষসেরা ভলিবল কোচ : ১৯৮৪), আতাউল হক মল্লিক (বর্ষসেরা ফুটবল রেফারি : ১৯৮৯) এবং এসবি চৌধুরী শিশির (বর্ষসেরা ক্রিকেট আম্পায়ার : ১৯৯০)। * ক্রীড়ালেখক সমিতির যে আজীবন সদস্য সংগঠক হিসেবে পুরস্কৃত : সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু (ফুটবলে সম্মাননা : বিশেষ অবদান, ২০০৫ সালে)।
×