নারায়ণগঞ্জ নগরীর সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরের কদমতলী এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৩ সাল থেকে শিশুদের মানুষ গড়ার আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। ছাপ্পান্ন বছর ধরে এ বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এ বিদ্যাপিঠের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ করে উচ্চপদে কর্মরত আছেন। অধুনালুপ্ত আদমজী পাটকলটি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলের অভ্যন্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অনুধালুপ্ত আদমজী পাটকলের বাইরের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখনও সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। দিন দিন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, ১৯৫১ সালে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্পনগরীতে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পাটকলকে ঘিরে সমগ্র আদমজীনগরে এলাকায় লোকজনের বসতি বাড়তে থাকে। দিন দিন পাটকলের বাইরে সুমিলপাড়া, আইলপাড়া, কদমতলী উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, কলেজপাড়া এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে। বসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর ১৯৬৩ সালে আদমজী জুট মিলের তৎকালীন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মিলে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মার্চেন্ট ও ওয়ার্কারের নামে এমডব্লিউ. শব্দটি ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় এমডব্লিউ. উচ্চ বিদ্যালয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আদমজী জুট মিলের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ছেলে মেয়ে ছাড়াও এলাকার ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ পায়। এরপর প্রতি বছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ১ একর ২৬ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েই লেখাপড়া করছে। প্রতি বছরই এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ বিদ্যালয় থেকে পাস করে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের চারদিকে রয়েছে বহুতল ভবন। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চলছে। ২০১১ সাল থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনক্রমে এ বিদ্যালয়ে ৫টি শাখা অর্থাৎ ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪৯ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৭ জন কর্মচারী রয়েছে। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২৭৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৭০ জন। পাসের হার শতকরা ৯৮ দশমিক ৫৪, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ জন। একই বছর জেএসসি পরীক্ষায় ৩৩৫ জন অংশ নিয়ে ৩৩৪ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ৭০। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ জন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইনডোর গেমসহ সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা রেখেছে। সুপরিসর খেলার মাঠ, প্রশ্বস্ত ক্লাসরুম, ছাত্র-ছাত্রী কমনরুম শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলতে ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ছাড়াও লাইব্রেরী, ১৫টি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের অনুদানে পাওয়া ৬৪টি জেলার ৬৪টি স্কুলের জন্য এই কম্পিউটার প্রদান অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান শিক্ষক এ কে এম শহিদুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জন্য ১০টি কম্পিউটার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ নায়েব আলী জানান, এক সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ছিল সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে আশপাশের একাধিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়টি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম শহিদুল ইসলাম সরকার বলেন, আদমজীনগর ছাড়াও ২নং ঢাকেশ্বর, শিমরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জপুল, হিরাঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাই। এ ধরনের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্বিত।
-মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে