ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫৬ বছর শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে আদমজীনগর এমডব্লিউ স্কুল

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৩০ মার্চ ২০১৯

৫৬ বছর শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে আদমজীনগর এমডব্লিউ স্কুল

নারায়ণগঞ্জ নগরীর সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরের কদমতলী এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৬৩ সাল থেকে শিশুদের মানুষ গড়ার আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। ছাপ্পান্ন বছর ধরে এ বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এ বিদ্যাপিঠের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ করে উচ্চপদে কর্মরত আছেন। অধুনালুপ্ত আদমজী পাটকলটি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলের অভ্যন্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অনুধালুপ্ত আদমজী পাটকলের বাইরের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখনও সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। দিন দিন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। জানা গেছে, ১৯৫১ সালে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্পনগরীতে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পাটকলকে ঘিরে সমগ্র আদমজীনগরে এলাকায় লোকজনের বসতি বাড়তে থাকে। দিন দিন পাটকলের বাইরে সুমিলপাড়া, আইলপাড়া, কদমতলী উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, কলেজপাড়া এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে। বসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর ১৯৬৩ সালে আদমজী জুট মিলের তৎকালীন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মিলে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মার্চেন্ট ও ওয়ার্কারের নামে এমডব্লিউ. শব্দটি ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় এমডব্লিউ. উচ্চ বিদ্যালয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আদমজী জুট মিলের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ছেলে মেয়ে ছাড়াও এলাকার ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ পায়। এরপর প্রতি বছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ১ একর ২৬ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েই লেখাপড়া করছে। প্রতি বছরই এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ বিদ্যালয় থেকে পাস করে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের চারদিকে রয়েছে বহুতল ভবন। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চলছে। ২০১১ সাল থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনক্রমে এ বিদ্যালয়ে ৫টি শাখা অর্থাৎ ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪৯ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৭ জন কর্মচারী রয়েছে। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২৭৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৭০ জন। পাসের হার শতকরা ৯৮ দশমিক ৫৪, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ জন। একই বছর জেএসসি পরীক্ষায় ৩৩৫ জন অংশ নিয়ে ৩৩৪ জন পাস করেছে। পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ৭০। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ জন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইনডোর গেমসহ সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা রেখেছে। সুপরিসর খেলার মাঠ, প্রশ্বস্ত ক্লাসরুম, ছাত্র-ছাত্রী কমনরুম শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলতে ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ছাড়াও লাইব্রেরী, ১৫টি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের অনুদানে পাওয়া ৬৪টি জেলার ৬৪টি স্কুলের জন্য এই কম্পিউটার প্রদান অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান শিক্ষক এ কে এম শহিদুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জন্য ১০টি কম্পিউটার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ নায়েব আলী জানান, এক সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ছিল সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে আশপাশের একাধিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়টি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম শহিদুল ইসলাম সরকার বলেন, আদমজীনগর ছাড়াও ২নং ঢাকেশ্বর, শিমরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জপুল, হিরাঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাই। এ ধরনের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্বিত। -মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×