ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আদিবাসীদের ৩৫ বাড়ি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল সন্ত্রাসীরা

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৬ মার্চ ২০১৯

আদিবাসীদের ৩৫ বাড়ি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল সন্ত্রাসীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৫ মার্চ ॥ ধামইরহাট উপজেলার অসহায় আদিবাসীদের ৩০ থেকে ৩৫ বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার মধ্যরাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। বর্তমানে অসহায় আদিবাসী পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং স্থানীয় এমপি শহীদুজ্জামান সরকারের খাস লোক বলে দাবি করেছে। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানা গেছে, উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বস্তাবর কাগজকুটা গ্রামের পুকুরপারে খাস জমিতে ৩৫টি ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের সঙ্গে ভূমিহীন কিছু মুসলিম পরিবারও রয়েছে। তারা টিনের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল। রবিবার রাত ১টায় দিকে ২০ থেকে ২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বাড়িঘর হারানো লগেন পাহান ও আফিজ উদ্দিন বলেন, রাতে মুখোশধারী লোকজন তাদের বাড়িঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাদের ধান, চাল, কাপড়চোপড়, হাঁস-মুরগি, ছাগল, টাকা ও মোবাইল ফোন পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মৃত মোজাফ্ফর রহমানের বিধবা স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং মৃত ঘুটু পাহানের স্ত্রী শান্তি পাহান বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে ধারালো বড় হাঁসুয়া, কুড়াল, তীর-ধনুক, লাঠি ও পেট্রোলের বোতল ছিল। সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়িভাবে তাদেরকে কোপায়। এতে শান্তি পাহানের হাত ভেঙ্গে যায় এবং তার ৫ বছরের ছেলে আকাশ মারাত্মক আহত হয়। পরবর্তীতে গ্রামের পাশে বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের টহলদল আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এদিকে ওই জমি নিজেদের দাবি করেন বস্তাবর গ্রামের আকতার হোসেন ও তার ছেলে মোশারফ হোসেন মিস্টার। এ ব্যাপারে মোশারফ হোসেন মিস্টার বলেন, চৌঘাট মৌজার জেএল নং-৫৪, আরএস খতিয়ান নং-১, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ৩৩১, হাল দাগ নং-৮২৫, সাবেক দাগ নং-৭৭৯ এর এক একর চার শতাংশ জমি তারা ক্রয় করেন। জমির দাতা বীরগ্রামের সিরাজুল হক সিদ্দিকীর নিকট থেকে ১৯৭৭ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে ধামইরহাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নিবন্ধন সূত্রে ক্রয় করেন, যার দলিল নং ৩৫১১। তবে জমিটি খাস থাকায় দাতা সিরাজুল হক সিদ্দিকী পত্তনিমূলে মালিক ছিলেন। তার কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত দীর্ঘদিন তাদের দখলে থাকা জমিতে হঠাৎ করে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে দখলের জন্য ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে ধামইরহাট থানায় একটি নিজ দখলীয় জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গত বুধবার রাতে কাগজকুটা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৫) এবং একই গ্রামের মৃত গোবিন্দ পাহানের ছেলে জগন্নাথ পাহানকে (৪৫) আটক করে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। বিবদমান ওই জমিতে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ধামইরহাট থানার অফিসার-ইন-চার্জ মোঃ জাকিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পর তিনিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি। মামলা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×