ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসায় নিউরো সেন্টার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২ মার্চ ২০১৯

 প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসায় নিউরো সেন্টার হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ স্নায়ু জটিলতা যেমন মাথামোটা, মুখ দিয়ে লালা পড়া, খিঁচুনি ও সকল নিউরো প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসা এবং সুরক্ষা দিয়ে পরিবার ও সমাজে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশেষ কেন্দ্র চালু হচ্ছে বগুড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। নামকরণ হয়েছে- নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। সরকার দেশে এই প্রথম এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে নীতিমালা প্রণীত হয়ে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দু’তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রগুলো চালু হবে। বগুড়ায় এই কেন্দ্রটি হবে শহরতলীর বারবাকপুরে। সেখানে অবস্থিত সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্রটি অন্য স্থানে সরিয়ে বিদ্যমান অবকাঠামোর ওপরই প্রতিষ্ঠিত হবে নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বগুড়া নিউরো ডেভেলপমন্টে সেন্টারে ৫০ জন ছেলে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০ জন মেয়েকে হোস্টেলে রেখে সার্বিক পরিষেবা দেয়া হবে। দেশে শারীরিক, মানসিকসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধী আছে। নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে শুধু নিউরো বিষয়ক জটিলতায় তীব্রভাবে আক্রান্তদের ভর্তি করা হবে। পরবর্তী সময়ে আসন ও কেন্দ্র বাড়ানো হবে। নিউরো বিশেষজ্ঞ আসাফউদ্দৌলা বলেন, স্নায়ুর বিষয়টি এতটাই জটিল যে শিশু ভূমিষ্টের পর তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। বেড়ে ওঠার পর্যায়ে নিউরো জটিলতা ক্রমেই প্রকাশ পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য লক্ষণ টের পাওয়া গেলে অনেক অভিভাবক তা গুরুত্ব দেন না। কোন শিশুর এই লক্ষণ জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে বোঝা যায়। আবার কোন শিশুর ক্ষেত্রে তা ৩ থেকে ৫ বছর হতে পারে। নিউরো সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলার চোখে দেখা হয়। গ্রামাঞ্চলে এই অবহেলা বেশি। উচ্চ বিত্তের পরিবার চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। এই চিকিৎসাও দীর্ঘমেয়াদী। চিকিৎসার চেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিচর্যা, শিশুর মনযোগাযোগ ও কাউন্সিলিং। নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টারগুলোতে বিস্তৃত ব্যবস্থা থাকা দরকার। কারণ নিউরো জটিলতার শিশু কিশোররা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে না। মাথা মোটা শিশুদের যেমন খাটো বুদ্ধি থাকে। আবার মুখ দিয়ে লালা পড়লে তার বুদ্ধি কম হবে তাও নয়। কখনও উল্টোটাও ঘটে। এদের বুদ্ধি স্বাভাবিক অনেকের চেয়ে বেশি। অটিস্টিক স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা অটিস্টিক এমন শিশু আছে যাদের সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। এদের কারও মাথা হেলে থাকে, স্থির রাখতে পারে না, চোখের দৃষ্টিকোণের ব্যাঘাত (প্রচলিত কথনে যাদের ট্যারা বলা হয়) থাকতে পারে। যে কারণে নিউরো ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে নিউরো বিশেষজ্ঞ তো থাকবেনই, এর পাশাপশি সাইকিয়াট্রিস্ট (যারা মানসিক রোগের চিকিৎসা দেন), সাইকোলজিস্ট (যারা সাধারণত মনোবিজ্ঞানী), কম্যুনিকেটর, ফিজিওথেরাপিস্ট, কাউন্সিলিং বিশেষজ্ঞসহ জেনারেল ফিজিশিয়ান থাকবেন। নিউরো জটিলতায় সম্পৃক্ত চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার। বগুড়া সমাজকল্যাণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শহীদুল হক খান জানান, নিউরো ডেভেলপ সেন্টারের নীতিমালায় উল্লেখিত বিষয়গুলোর সবই থাকছে। কেন্দ্রটি পরিচালনার কর্মী বিন্যাস তৈরি হয়েছে। যেহেতু দেশে এ ধরনের কেন্দ্র এই প্রথম সে কারণে কেন্দ্র চালু করার পর যেখানে সমস্যা হবে তা দ্রুত পূরণ করার ব্যবস্থাও থাকবে। তিনি বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি স্থানে স্নায়ু বিকলের মানুষ দেখা যায়। দুঃখজনক অধ্যায় হলো গ্রামাঞ্চলে এদের সুরক্ষা দেয়ার বদলে পরিবারে ও সমাজে বোঝা মনে করা হয়। এরা বেড়ে ওঠে অনাদরে এবং খুবই অবহেলিতভাবে। চিকিৎসা তো দূরে থাক এদের পারিবারিক বন্ধন তেমন থাকে না। মমত্বের বন্ধন তৈরি করাও হয় না। নগর জীবনের পরিবারে কিছু শিশু পারিবারিক বন্ধনে থাকে। তারপরও এদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকগণ। নিউরো জটিলতার এমন শিশু ও ব্যক্তিকে হোস্টেলে রেখে চিকিৎসা সার্বিক পরিষেবা, পরিচর্যা দিয়ে যাদের লেখাপড়া করানো যায় তাদের যতটা পারা যায় শিক্ষিত, যাদের কর্মক্ষম করা সম্ভব তাদের কাজের ব্যবস্থা করা হবে।
×