ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদক পরিচয়ে উড়ো চিঠি

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১ মার্চ ২০১৯

বরিশালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদক পরিচয়ে উড়ো চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর বিভিন্ন স্বনামধন্য সরকারী ও বেসরকারী স্কুলে কোচিং বাণিজ্য ও অনিয়ম বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচয়ে চিঠি দিয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। এ চিঠি পাওয়ার পর স্কুলগুলোর শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের নামে ইস্যু করা এ চিঠির বিষয়ে জানেন না দুদক কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, দুদক পরিচয়ে বরিশাল নগরীর কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি স্কুলেই ডাকের মাধ্যমে এই চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চিঠিগুলোতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, ভর্তির সময় বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ কোচিংবাণিজ্য শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দুদক পরিচয়ে পাওয়া ওই চিঠি নিয়ে ছুটছেন দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে। শরণাপন্ন হচ্ছেন দুদকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, সরকারী জিলা স্কুল, বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষকগণ দুদকের নামে দেয়া ওই চিঠি পেয়েছেন। এরমধ্যে বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর দেয়া একটি চিঠিতে দেখা গেছে, ‘চিঠি প্রেরক হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় উল্লেখ করা হয়েছে। ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ করা ও সরকার নির্ধারিত টাকার অধিক বার্ষিক ভর্তি ফি গ্রহণ প্রসঙ্গে’ বিষয় উল্লেখ করে দেয়া চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকও উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের পক্ষে বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) কর্মকর্তা নামের একজনের স্বাক্ষরও রয়েছে ওই চিঠিতে। এর অনুলিপি দেয়া রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও শিক্ষা অফিসসহ ছয়টি দফতরে। বৃহস্পতিবার সকালে উদয়ন স্কুলের প্রধানশিক্ষক ব্রাদার শ্যামুয়েল সবুজ বালা বলেন, দুদক পরিচয়ে যে চিঠি আমাদের কাছে এসেছে তা নিয়ে দুদক বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন এ ধরনের কোন চিঠি তারা দেননি। তাই ভুয়া চিঠি দিয়ে আমাদের হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে দুদককে লিখিত আবেদন করেছি। তারাই এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বরিশাল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন বলেন, এ ধরনের একটি চিঠি আমরাও পেয়েছি। চিঠিতে বিশেষ ক্লাস বন্ধ ও সরকারী আয় ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যে চিঠি আমরা পেয়েছি সেটা ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক বলে মনে হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারাই বিষয়টি দেখছেন। এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ জুলফিকার আলী জানান, বিভিন্ন স্কুলে দুদকের নাম ব্যবহার করে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তা দুদক থেকে দেয়া হয়নি। কারা দিয়েছে তাও বলা যাচ্ছে না। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া একটি বিষয়। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন দুদক। ওইসময় বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের দুদক কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে তলব করা হয়েছিলো। শিক্ষকরা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে নিয়ে দুদক কার্যালয়ে হাজিরও হয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রধানশিক্ষকরা দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার অযুহাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
×