ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয়রাই এখন সংখ্যালঘু !

ইয়াবার ডিপো রোহিঙ্গা শিবির ॥ অপরাধ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ইয়াবার ডিপো রোহিঙ্গা শিবির ॥ অপরাধ বাড়ছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার কারণে দৈনন্দিন অপরাধমূলক কর্মকা- বেড়েই চলেছে। তাদের কারণে উখিয়া টেকনাফে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। চুরি-ডাকাতি, খুনখারাবি, ছিনতাই ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণসহ এমন কোন অপরাধমূলক কাজ বাকি নেই, যা রোহিঙ্গারা করছে না। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার লোকজন রোহিঙ্গাদের হাতে এক প্রকারে জিম্মি বললে চলে। যে কোন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের অপহরণ, খুন, গুম, হামলা ও মারধর করতে পরোয়া করছে না। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার কাছে পৌনে পাঁচ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা যেন সংখ্যালঘু মাত্র। যে কোন কথায় স্থানীয়দের মারতে তেড়ে আসে রোহিঙ্গারা। উখিয়া টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির বর্তমানে ইয়াবার ডিপোতে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি ক্যাম্প থেকে ইয়াবা সরবরাহ হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আশ্রিত রোহিঙ্গারা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে সীমান্ত অঞ্চলে। আশ্রয় শিবিরগুলো সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় মাদক পাচারে সুযোগ বেড়েছে রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্পে আশ্রিত কতিপয় রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্তে গিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। এ কাজে এক শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীর সঙ্গে ওই রোহিঙ্গাদের আঁতাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা সম্রাট যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তারাই রোহিঙ্গাদের দিয়ে ইয়াবার চালান আনছে রাখাইন থেকে। সূত্র জানায়, সীমান্তে দায়িত্বরত এক শ্রেণীর অসৎ কর্মচারীর সঙ্গে চুক্তি করে মাদক কারবারিরা ইয়াবার চালান আনছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে। অভিযোগ রয়েছে, সপ্তাহের প্রতিদিন বড় বড় ইয়াবার চালান আসে না। যেসব কর্মচারীর সঙ্গে মাদক সম্রাটদের চুক্তি রয়েছে, ওই কর্মচারীদের ডিউটি যেদিন থাকে, ওইসময়ই ইয়াবার চালান আসছে ওপার থেকে। চোরাচালানিরা ইয়াবার চালান এনে প্রথমে ঢোকাচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে ক্রমান্বয়ে সরবরাহ হয়ে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সীমান্তের চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিরা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আত্মসমর্পণ না করা একাধিক ইয়াবা সম্রাট মাদকের চালান আনতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। সম্প্রতি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকের ৫৪ নম্বর সেট ও ৪৩ নম্বর সেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ সময় মোহাম্মদ জিয়াবুল হক (৩৫) ও নূর আলমকে (৪৫) আটক করলে রোহিঙ্গা নারীরা দা-কুড়াল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও আটককৃতদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেকে বলছেন, রোহিঙ্গারা অন্যায়, অসামাজিক কর্মকা- চালিয়ে যাবে, আর বাধা দিলে হামলা করা হবে এমন কর্মকা- মেনে নেয়া যায় না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি ইয়াবা রোধে সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, কিছুসংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোহিঙ্গার কারণে আশ্রয় শিবিরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পে মাদক বিক্রি, কুংফু-ক্যারাতে এবং অস্ত্রের প্রশিক্ষণ ও অবৈধ লেনদেনসহ নানা রকমের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন ওই অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সর্বদা প্রস্তুত থাকলেও কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার কারণে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা অপর রোহিঙ্গাদের সম্মুখে বেআইনী কর্মকা- ঘটালেও প্রশাসনের লোকজন সেথায় উপস্থিত হলে কেউ মুখ খোলে না। তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বরং অপরাধ দমন ও ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাধা প্রদান করে হামলার চেষ্টা করে থাকে। স্থানীয়রা বলেন, রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের লালনপালন করাটা বর্তমানে দুধকলা দিয়ে সাপ পোষার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা গ্রামবাসী, প্রশাসনের লোকজন ও সর্বশেষ জার্মানের তিন সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অস্বাভাবিক আচরণে প্রশাসন ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও করার কিছুই নেই। যেহেতু মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে, তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করলে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও জঙ্গী) বহির্বিশ্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাবে। তাই প্রত্যাবাসনে বিলম্ব ঘটলে সকল রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহল। এদিকে রোহিঙ্গাদের জ্বালানি হিসেবে তুষের লাকড়ি ও গ্যাস সিলিন্ডার বরাদ্দ দেয়া সত্ত্বেও তারা বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলেছে। রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে গিয়ে বাংলাদেশ বনাঞ্চল ধ্বংস ও প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রবিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মানুষের দুর্যোগজনিত স্থানচ্যুতি বা উদ্বাস্তু বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন বলে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে এক রোল মডেল। তবে এই রোহিঙ্গাদের জন্যই আমাদের বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে। আর এ ধরনের সঙ্কট আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হয়েও বাংলাদেশ আশানুরূপ বৈদেশিক অর্থ সহায়তা পাচ্ছে না বলেও দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কবে নাগাদ ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হবে তার সময়সূচী এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
×