ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুর অঞ্চলে মৌচাষ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রংপুর অঞ্চলে মৌচাষ বাড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় বিপুল পরিমাণ লিচু বাগান এবং বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির চাষ করে প্রতিবছর শতকোটি টাকা মূল্যের মধু উৎপন্ন করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কারিগরি সহযোগিতায় কয়েক বছর ধরে এসব জেলায় সরিষা ক্ষেত এবং লিচু বাগানে মৌমাছির চাষ করার পাশাপাশি চাষীরা সাথী ফসল হিসেবে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় সরিষা ক্ষেত এবং লিচু বাগানে পরিকল্পিতভাবে মৌমাছির চাষ করে মধু উৎপন্নের মাধ্যমে বছরে শতকোটি টাকা আয়ের অপার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। এর ফলে একদিকে বেকার পুরুষ ও নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি চাষীর বাড়তি আয়ের সাথী ফসল হিসেবে নতুন সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশাল এক সহায়ক শক্তির সৃষ্টি হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মৌমাছি চাষ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ জনান, প্রতিটি মৌবক্সে প্রতি মওসুমে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ কেজি করে মধু পাওয়া যায়। এছাড়া মৌচাষের প্রকল্পভুক্ত সরিষা ক্ষেতের ফলনও অন্তত ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন ফলের গাছের মুকুল এবং ফসলের ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক সমাগমের মাধ্যমে প্রচুর পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ঐসব ফলের বাগান এবং ক্ষেতের ফলনও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় । এই কর্মসূচীর আওতায় গত অর্থবছরে এসব জেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতে ৫ হাজারের বেশি মৌ বক্স স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে এই অঞ্চলে ৩ হাজার ৩ শ’ ১৪ টি মৌমাছির বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চাষীরা সাথী ফসল হিসেবে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পেরে অর্থনৈতিকভাবে প্রচুর লাভবান হয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় গত রবি মৌসুমে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। এসব সরিষা ক্ষেতের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে মধু উৎপন্নের লক্ষমাত্রা নিয়ে ৫ হাজার ৫৫ টি মৌমাছির বক্স স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে মওসুমজুড়ে এসব সরিষা ক্ষেতে ৩ হাজার ৩১৪ টি মৌ বক্স স্থাপন করে গত মওসুমে ৫৫ হাজার ২০০ কেজির বেশি পরিমাণ মধু উৎপন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চাষকৃত সকল সরিষা ক্ষেত মৌচাষ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হলে এসব সরিষা ক্ষেত থেকেই প্রতি মওসুমে অন্তত ৪ লাখ কেজির বেশি মধু উৎপন্নের মাধ্যমে প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হতো। এছাড়া এই অঞ্চলের লিচু বাগানের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মৌমাছির চাষ করে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ কেজি মধু উৎপন্ন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের মধু উৎপন্নের নতুন দ্বার উন্মোচন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব উৎপাদিত মধু দেশের স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অপরদিকে পশ্চাৎপদ এবং অবহেলিত এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তির এক অপার ভা-ারও তৈরি হবে। প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের গত মওসুমে রংপুর জেলায় সরিষা চাষ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১০৬ হেক্টর জমির সরিষা ক্ষেতে ৯৮ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ২০৫ কেজি এবং জেলার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে চাষকৃত লিচু বাগানের মধ্যে ৪৫ হেক্টরে ৭২৫ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ৯ হাজার ৭১০ কেজি মধু উৎপন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ১২ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৬৯ হেক্টর সরিষা ক্ষেতে ২ হাজার ৪০১ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ৫২ হাজার ৭৪০ কেজি মধু উৎপন্ন হয়েছে। গাইবান্ধা জেলায় ৬ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে, এর মধ্যে ৬৫০ হেক্টর সরিষা ক্ষেতে ৬০৩ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ২ হাজার ৫০ কেজি মধু উৎপন্ন হয়েছে । নীলফামারী জেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৩১ হেক্টরে ৩৯ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ১৫৫ কেজি, লালমনিরহাট জেলায় ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর, এর মধ্যে ২৫ হেক্টর সরিষা ক্ষেতে ২০৫ টি মৌ বক্স স্থাপন করে ৮৫ কেজি মধু উৎপন্ন হয়েছে।
×