ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজবাগে কলেজছাত্রের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সবুজবাগে কলেজছাত্রের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সবুজবাগ থানায় একটি ফ্ল্যাটে ইয়োগেন হেনেছি গঞ্জালভেজ (২২) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত গঞ্জালভেজ নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশ জানায়, এক তরুণীকে কেন্দ্র করে তাকে হাত-পা বেঁধে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে বুধবার বেলা বরোটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে গঞ্জালভেজের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, নিহতের গলায় দুটি, পেটে নয়টি ও পিঠে চারটি ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে কদমতলার ৯ নম্বর রোডের হিরাঝিল এলাকার ৭৭/এ নম্বর বাসার নিচ তলা থেকে ওই শিক্ষার্থীর হাত-পা ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, মাথা কাল ন্যাকড়া দিয়ে বাঁধা ছিল। বুকে কাল জখম, পেটে ৭টি ও পিঠে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গঞ্জলভেজ নীল রংয়ের ফুলহাতা শার্ট আর কাল প্যান্ট পরা ছিল তার। ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা ছিল। নিহতের বাবার নাম ম্যাকলিন গোন সালভেজ। বাড়ি চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায়। পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি বাসায় মামাত বোন শিপ্রার সঙ্গে সে থাকত। নিহতের দুলাভাই রোমেন পিনারু জানান, মামাতো বোন শিপ্রা বাসায় না থাকায় গত শুক্রবার বোন ডালিনের নর্দ্দার বাসায় যায় গঞ্জালভেজ। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয় সে। রোমেন জানান, রাত দশটা পর্যন্ত বাসায় না আসায় তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কয়েকবার রিং হওয়ার পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রাত দেড়টার দিকে তারা সংবাদ পান কদমতলার একটি বাসায় তার লাশ পাওয়া গেছে। রাতেই তারা লাশটি শনাক্ত করে। নিহতের বোন ডালিন সিল গুনন সালভোজ জানান, গঞ্জালভেজ কিছুদিন আগে রবি কল সেন্টারে চাকরির জন্য ট্রেনিং করেছিল। তার কোন শত্রু ছিল না। কেন কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় বুধবার সকালে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সবুজবাগ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মহানগর পুলিশের সবুজবাগ জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসান জানান, নিহত গঞ্জালভেজ এক সময় নটরডেম কলেজে পড়ত। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় উপস্থিত না থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। বাড়িওয়ালার বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রাশেদ জানান, এক তরুণীকে নিয়ে ভাই-বোন পরিচয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি কদমতলায় নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় সে। তবে তারা নিয়মিত ওই বাসায় থাকত না। মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া করতেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর দুজন একসঙ্গে বাসায় আসে। রাত এগারোটার দিকে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখে নিচতলার আরেক প্রতিবেশী বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে জানায়। পরে বাড়িওয়ালা এসে বাসার ভেতরে তার লাশ পায়। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসান জানান, তার হাত-পা ওড়না দিয়ে বাঁধা ছিল। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। রাত দেড়টার দিকে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রাত এগারোটার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের পাশে একটি অর্ধেক জুসের বোতল ও কয়েকটি খালি বোতল পাওয়া যায়। এছাড়া রুমে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় কেরোসিন ছিল। বুধবার সন্ধ্যার দিকে সবুজবাগ থানার (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির জানান, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মের কারণে সঙ্গীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। নিহতের পেটে সাতটি ও পিঠে চারটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাত-পা কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। ওসি জানান, হত্যাকারী তাদের নাগালের মধ্যে। গ্রেফতারের অভিযান চলছে।
×