ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

আলোকচিত্র উৎসব

ঢাকায় এখন চলছে বাংলাদেশসহ মোট সাতটি দেশের আলোক চিত্র শিল্পীদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বাইরের দেশগুলো হলো কানাডা, ইউক্রেন, ফ্রান্স, ভারত, নেদারল্যান্ডস, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। এসব ছবি স্ব স্ব দেশ ও সমাজের বাস্তবোচিত শিল্পসম্মত দলিল। দুই শতাধিক আলোকচিত্রে সজ্জিত উৎসবটির আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি। যাপিতজীবন ও সময়ের নানা আলোকচিত্র উঠে এসেছে প্রদর্শনীতে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যেমন আলোকচিত্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবেশ, প্রকৃতিসহ নানা বিষয়ের আলোকচিত্র। দেয়ালজুড়ে যেমন আছে মানুষের সুখ-দুঃখর গল্প, তেমনি আছে বিদেশের জীবনধারার উপস্থিতি। এছাড়াও ক্যামেরার ক্লিকে স্থিরচিত্র হয়ে উঠে এসেছে পথের গল্প, নিসর্গ ও প্রকৃতির গল্প কিংবা দিনযাপনের বিচিত্র উপাখ্যান এবং বৈভব। সমাজে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ বাস করে। তাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতেও পৃথকত্ব রয়েছে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের মধ্যে ছোট-বড় তুলনা চলে না। কারণ প্রত্যেকেই মানুষ আর মানুষ মানষেরই জন্য। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে সমান মানবাধিকার। তবু পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তির পেশাগত পরিচয়টিকে বড় করে দেখে মানুষে মানুষে দূরত্ব রচিত হয়। বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয় একই সমাজে অবস্থানকারী কোন কোন শ্রেণীপেশার মানুষ। শ্রমের মর্যাদাটি সুপ্রতিষ্ঠিত থাকলে এমনটা হতো না। প্রতিটি পেশার মানুষই সমমর্যাদা পেত। ছবি সত্য বলে। ছবি সরাসরি তুলে ধরে বাস্তব চিত্র। একটি ছবি হাজার শব্দের চাইতেও শক্তিশালী ও সংবেদনময় হয়ে উঠতে পারে যদি তেমন ছবি হয়। আলোকচিত্র শিল্পী হন বা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির কোন মাধ্যমের সৃষ্টিশীল মানুষ হন, তিনি হলেন সমাজের বা রাষ্ট্রের সবচেয়ে সত্যবাদী এবং স্পর্শকাতর মানবসত্তা, যদি তিনি প্রকৃত শিল্পী হন। শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের ওপর যে কোন আঘাত সরাসরি এসে পড়ে শিল্পী-হৃদয়ে। সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ও উচ্চতা সীমাবদ্ধ হতে পারে না। একমাত্র মানুষই নিয়োজিত হয় সুকুমার বৃত্তিতে। মানুষ যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে, তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে, কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে তাকে শক্তি জোগায়, অনির্বাচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। আলোকচিত্র, সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্র- শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। অসুস্থ মনের পরম শুশ্রুষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই। প্রতিটি উৎসবে আমাদের সংস্কৃতি প্রাণ পায়, আন্তর্জাতিক উৎসবে মেলবন্ধন ও ভাব বিনিময়ের সুর্বণ সুযোগ মেলে। জীবন আরও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঙ্গীত, কবিতা, ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য, সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তা প্রভৃতি এক একটা জাতির সংস্কৃতির প্রকাশ মাধ্যম এবং দর্পণ। এসব সৃজনধর্মী কাজেই অর্জিত হয় মন ও হৃদয়ের সুখানুভূতি, আনন্দ ও উৎফুল্লতা। মানুষ উৎসবে তখনই যুক্ত হয় যখন তার কাছে জীবন স্বস্তিকর এবং উপভোগের হয়। উৎসবের সময় ও পরিবেশ সৃষ্টিও তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব সফল হোক- এটাই প্রত্যাশা।
×