ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোশাররফ ও সাইমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

মোশাররফ ও সাইমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে এই মামলার আসামি সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেএম মোশাররফ হোসেন ও ইসমাইল হোসেন সাইমনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে বসানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘আমি তো কিছুই দেখছি না। আমি তো আপনাকেও (বিচারক) দেখছি না। এই দেয়াল তো এর আগে ছিল না, এখন কোথা থেকে এলো? আমি এখানে থাকব না, আমি এখান থেকে চলে যাব। বৃহস্পতিবার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে এ বিচার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে এম মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ যেসব ডকুমেন্টস আদালতে দাখিল করেছেন, সেগুলোর কপি আমাদের কাছে নেই। সেগুলোর জন্য আমরা আদালতে আবেদন করব। সে কপিগুলো হাতে পেলে আমরা অভিযোগ গঠন শুনানি করব। এ জন্য শুনানি পেছানো হোক। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, সময়ক্ষেপণের জন্য এগুলো বলা হচ্ছে। মামালটি ১০ বছর ধরে চলছে। এখন আদালতে তারা বলে তাদের কাছে কোন ডকুমেন্টস নেই। এদিকে এই মামলায় বৃহস্পতিবার জামিনে থাকা দুই আসামি এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ইসমাইল হোসেন সায়মন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের আইনজীবীরা জামিন বহাল রাখার আবেদন করেন। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তার এজলাসে আসেন। শুনানি শুরু হয় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। আদালত কার্যক্রম শেষ হয় ১টা ৩৫ মিনিটে। এরপরেই খালেদা জিয়াকে ১টা ৪০ মিনিটে বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অস্থায়ী বিশেষ আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠনের শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। আদালতে যেখানে খালেদা জিয়াকে বসানো হয়, তা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আদালতে এজলাসের বামপাশে পেশকারের পেছনে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় খালেদা জিয়াকে বসানো হয়। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে কাঠগড়ায় ঢোকাতে চাচ্ছেন? এতেও আমি রাজি আছি। এ সময় বারবারই খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়- আমি এখান থেকে কিছুই দেখতে পারছি না। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম ও মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিচারককে বলেন, কেন তাকে (খালেদা জিয়া) পৃথক করছেন? আপনি সিদ্ধান্ত দিয়ে তাকে সামনে নিয়ে আসেন। তাকে পৃথক রাখার কোন সুযোগ নেই। এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালত তো এভাবেই নির্মিত। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ওই জায়গায় বসানো হয়েছে। এ সময় বিচারক বলেন, আমি তো আজ নতুন। বিষয়টি আমি দেখব। আজ এখানেই থাকুক। এর পর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর ওই সময়ের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (মানবতাবিরোধী অপরাধের মৃত্যুদ- কার্যকর), খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো, এম কে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম এবং বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম মারা গেছেন। মামলাটিতে বর্তমান আসামির সংখ্যা ১৭ জন। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব) আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল এ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন। প্রসঙ্গ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যথাক্রমে ১০ এবং সাত বছরের কারাদ-ে দ-িত হয়েছেন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়।
×