ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবইয়াদ আহনাফ আদ্রিক

বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফ্রুট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

 বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফ্রুট

আমাদের দেশে ড্রাগন চাষ ও এর সম্প্রসারণ ঘটাতে চাষাবাদ কৌশল জানতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশনায় মন্ত্রণালয় তদানীন্তন বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার দেশের প্রখ্যাত ফল গবেষক ও উদ্ভাবক এস এম কামরুজ্জামানকে ভিয়েতনাম পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান বলেন, ‘দেশে প্রথম কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিদেশ থেকে উন্নত জাতের কিছু ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে আমরা বিদেশে গিয়ে হাতে-কলমে এর চাষ শিখে দেশে চাষ শুরু করি।’ এখন মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং চায়না থেকে আনা বিভিন্ন জাত ছাড়াও উদ্ভাবিত সর্বাধিক ১২টি জাতের দুই হাজার গাছে সর্বাধিক লাল, সাদা, গোলাপী, হলুদ এবং মাল্টি কালার- এই পাঁচ রঙে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ড্রাগন যাচ্ছে রাজধানীর কাওরান বাজার আর শ্যাম বাজারে। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপী রঙের এই ফলের নামটিও অদ্ভুত। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগ নিবারণে ড্রাগন ফল বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন সি’র পরিমাণ খুবই বেশি। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ড্রাগন ফলের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে। ১০০ বছর আগে এই ফলের বীজ ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই ড্রাগন ফলের চাষ বিস্তার লাভ করে। ড্রাগন ফলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভিয়েতনামে। উঁচু মাটিতে, অল্প জায়গায় দীর্ঘজীবী ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন ফুল নাইট কুইনের মতোই রাতে ফোটে। ফুলের আকার লম্বাটে এবং রং সাদা ও হলুদ। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফলটি হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কম যুক্ত এবং এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোঁআশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম হলেও প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। ড্রাগনের গাছের কান্ড লতানো প্রকৃতির। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজ। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষীদের পরিশ্রম অনেক কম, আয় বেশি। ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিং চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিলে একরপ্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন পাওয়া যায। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলেও, যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলেও নিট লাভ হবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। আমাদের দেশে ড্রাগনফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আশার খবরটি হলো- রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক গবেষণায় সফল হয়েছেন। তাদের মতে, পাহাড়ের মাটি এই ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলে এই ফলের ব্যাপক চাষাবাদ সম্ভব। পাহাড়ে বাড়ছে বিদেশী ফল ড্রাগনের চাষ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বিদেশী ফল হলেও পাহাড়ের জলবায়ু এবং মাটি দুটিই ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ড্রাগন ফলটি জমির পাশাপাশি বাড়ির ছাদেও চাষ করা য়ায়। বাড়ির ছাদে টবে চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস ছালাম। আব্দুস ছালাম ২০১১ সালে এপ্রিল মাসে গাজীপুর জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) হতে ৩টি চারা নিয়ে টবে লাগান।
×