ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশ ফেরত যাত্রীরা শাহজালালে আটকা পড়তে পারেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 বিদেশ ফেরত যাত্রীরা শাহজালালে আটকা পড়তে পারেন

আজাদ সুলায়মান ॥ নির্বাচনের আগে পরে টানা চব্বিশ ঘণ্টা সড়ক মহাসড়কে সব ধরনের গণ পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিদেশ ফেরত আকাশ যাত্রীদের। এ নিষেধাজ্ঞার দরুন ঘরমুখো যাত্রীদের বিমানবন্দরেই আটকা পড়ে থাকতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আজ (শনিবার) বিমানবন্দরে জরুরী সমন্বয় সভায় বসছেন পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক। তিনি বলেছেন, বৈঠকেই সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যাত্রীদের দুর্ভোগ মিনিমাইজ করার একটা উপায় বের করতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি গত মঙ্গলবার মোটরযান আইনের আওতায় নির্বাচনের আগে পরে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১২টা পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কে সব ধরনের গণপরিবহন যেমন, বেবিট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, জিপ, ট্রাক, টেম্পু ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে শর্ত সাপেক্ষে যেমন জরুরী সার্ভিসের আওতা যেমন এ্যাম্বুলেন্স, নির্বাচনের প্রার্থী, এজেন্ট, কর্তব্যরত দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকদের যানবাহনের বেলায় এ আদেশ শিথিলযোগ্য। এ আদেশের পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি ও নির্বাচন কমিশনে আকাশ পথের যাত্রীদের এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার আবেদন জানিয়ে চিঠি লেখা হয়। এরপর শুক্রবার বিআরটিএ এ আদেশের ওপর সংশোধন করে আরও একটি আদেশ জারি করে জানিয়েছে, বিমানবন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও আগত যাত্রীদের যানবাহন চলাচল শিথিলযোগ্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেন, আমরা বিমানবন্দরের বহির্গামী ও আগমনী যাত্রীদের যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য করার আবেদনের পর তাতে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যাত্রীরা এত সংখ্যক গণপরিবহন পাবেন কোথায়। এজন্য গণমাধ্যমে এ সংবাদ ব্যাপক হারে স্ক্রল দিয়ে প্রচার করা হলে যাত্রীরা সচেতন হতে পারত। উল্লেখ্য, প্রতিদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শতাধিক ফ্লাইট ওঠানামা করে। এতে কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করে। তাদের জন্য যে পরিমাণ পাবলিক পরিবহন থাকা আবশ্যক নির্বাচন উপলক্ষে এ নিষেধাজ্ঞার ফলে সেটা মারাত্মক বিঘ্নিত হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক জানিয়েছেন, বহির্গামী যাত্রীর চেয়ে আগমনী যাত্রীদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হবে। বিআরটিএ-এর নিষেধাজ্ঞার সময় অর্থাৎ শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ সময়ে শাহজালালে কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী বিদেশ থেকে আসবে। তারা নেমেই তো ইমিগ্রেশন করে দ্রুত বের হয়ে ঘরমুখো হতে চাইবেন। তখন কি উপায় হবে ? যারা গাড়ি পাবেন- তারা যাবেন। যারা পাবেন না- তাদের কি হবে ? এ বিষয়ে বিমানবন্দর গোলচক্কর ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান ভূইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, সাধারণ সময়ে অনেক যাত্রী বিদেশ থেকে ফিরেই বিমানবন্দরের কাউন্টার থেকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা উবার নিতে পারেন। তাও না পেলে গোলচক্কর এসে বাসে ওঠার সুযোগ পান। কিন্তু শনিবার রাত থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত এই দশ হাজার যাত্রী কিভাবে বিমানবন্দর থেকে ঘরে ফিরবেন টো একটা চিন্তার বিষয়। তবে এখন যুগ পাল্টেছে। অধিকাংশ যাত্রীর স্বজনরা গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। তাদের গাড়ি ছাড়া হবে। পুলিশ গাড়ি দেখলেই বুঝতে পারবে এটা যাত্রীর নাকি অন্য কারোর। বিমানবন্দরে বর্তমানে প্রাইভেট কার সার্ভিস, উবার, সিএনজি ও মাইক্রো সার্ভিস রয়েছে। কয়েকটি এয়ারলাইন্সের নিজস্ব বাস রয়েছে- যাতে করে যাত্রীদের নিজ জেলায় পৌঁছে দেয়া হয়। তবে কিছু নিরীহ যাত্রী যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে, টাকা পয়সা নেই কিংবা তাদেরকে কেউ নিতে আসে নাই- এমন শ্রেণীটা হয়তো কিছু দুর্ভোগে পড়বে। এদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এয়ারলাইন্স অপারেটর এ্যাসোসিয়েসন্স-এর সঙ্গে বৈঠকে বসে এ সঙ্কট মোকাবেলায় আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, দশ হাজার যাত্রীকে এক সঙ্গে হ্যান্ডল করা বেশ দুরূহ। বিমানবন্দরে যদি গাড়ি থাকে তাহলে হয়তো তারা যেতে পারবে। চলাচলে বাধা দেবে না কেউ। কিন্তু পর্যাপ্ত গাড়িই যদি না থাকে তাহলে কিভাবে তাদেরকে সেবা দেয়া হবে সেটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ। তবে সবাই মিলেই এই একটা দিন সঙ্কট মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে হবে। মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করা গেলে বিমানবন্দরে গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হতো। বিমানবন্দরের অপর একটি সূত্র জানায়, সাধারণত ঘরমুখো যাত্রীদের নিতে স্বজনরা বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়েই আসে। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে কোন গাড়ি চলবে না এমন বিশ্বাস থেকে রবিবার তো ঢাকায় আসতে চাইবে না। যদিও শুক্রবার বিকেলে বিমানবন্দরের যাত্রীদের যান চলাচল শিথিল করেছে সেটা সেভাবে প্রচার করা হয়নি। মানুষকে সেটা জানানো হচ্ছেনা। অন্তত সাতদিন আগেই এই সংবাদটি প্রচার করা হলে এ জটিলতা দেখা দিত না।
×