ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সহিংসপ্রবণ এলাকায় পুলিশের জনবল বাড়ানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

সহিংসপ্রবণ এলাকায় পুলিশের জনবল বাড়ানো হচ্ছে

শংকর কুমার দে॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারাভিযানে সহিংসতা বন্ধে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে জামায়াত-শিবির প্রাধান্য এলাকায় নাশকতা-সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্বাচনের সহিংসতা বন্ধে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ সাজাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। নির্বাচন ঘিরে যেসব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকা চিহ্নিত করে পুলিশের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব বেশি, সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ছক তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় দেশের যেসব জেলা ও উপজেলায় সহিংসতা হয়েছিল তা চিহ্নিত করে পুলিশ সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে সম্পূর্ণ সহিংসতামুক্ত করাই পুলিশের লক্ষ্য। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরুর পর থেকে একের পর এক নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতা শুরু হয়েছে তুচ্ছ কারণে। এ জন্য নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় কিছুদিন ধরে পুলিশ মাঠ সাজাতে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ওই এলাকায় জনবল, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সরঞ্জামাদির তথ্য তুলে আনছে। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই সহিংসতা বাড়ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় একে অপরের ওপর হামলে পড়ছে। এই অবস্থায় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার দিনগুলোয় সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বিশৃঙ্খলা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফেরার পথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গাড়িবহরে হামলা করার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি প্রার্থী। অন্যদিকে বগুড়ায় বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে, নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। নির্বাচনী সহিংসতায় নোয়াখালী ও ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ২ কর্মী নিহত হয়েছে। সারাদেশে এক সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগের দুই কর্মী নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হয়েছে কয়েক শ’ ব্যক্তি। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শুরুতেই শান্তিপূর্র্ণ পরিবেশ হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে ওঠে। কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আরও সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা হামলায় জড়িয়ে পড়ছে। এতে ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। দেশের বিভিন্নস্থানে আরও সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। এসব সহিংসতায় আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও মরণঘাতী পেট্রোলবোমার ব্যবহার হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতা রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত পদেক্ষপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানে বড় নির্বাচন। নির্বাচন কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সহিংসতার বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন- দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হতে পারে।
×