স্টাফ রিপোর্টার ॥ কখনও জিনের বাদশা, কখনও দয়াল বাবা সেজে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের নামে হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা। লটারি, গুপ্তধন, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ, ভালবাসার মানুষকে বশে আনাসহ সকল সমস্যার সমাধান করার কথা বলে প্রতারণা করত ওরা। এমনকি ‘জিনের বাদশাহ’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ক্যাবল অপারেটরদের নিজস্ব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিত ওরা। এসব মোহে এদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেকে। এমনই এক সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের হোতা কথিত ‘জিনের বাদশাহ’ জুবায়ের আহমেদ সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইমের বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) সৈয়দা জান্নাত আরা এ তথ্য জানান।
এর আগে গ্রেফতার করা হয় প্রতারক জুবায়েরের তিন সহযোগী জাফর ইকবাল ওরফে কাজল, সাগর ও ছামির। গ্রেফতারকৃত জাফর ইকবাল ও সাগর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, আসামিরা একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত করে থাকে। বিভিন্ন ভুক্তভোগীর বক্তব্যে ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকার ফার্মগেট ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে চক্রের হোতা কথিত ‘জিনের বাদশাহ’ সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, সোহেল মোল্লা নামের এক ব্যক্তি এ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হারিয়েছেন। তাকে লটারি পাইয়ে দেবে বলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নেন চক্রটি। গত ২২ জুলাই ভোলার বোরহান উদ্দিন থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী সোহেল মোল্লা। (মামলা নম্বর-২৬)। ধারা ৪০৬, ৪২০ এবং ১০৯ পেনাল কোড। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি।
গ্রেফতারকৃত হোতা সুমন জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানায়, মাসিক ২০ হাজার টাকা দিয়ে তৈয়েবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন, বর্তমান দিনকাল ও চিত্র বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করত।
এসব বিজ্ঞাপনে তারা বিভিন্ন দরবার শরিফের নাম ব্যবহার করে সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে বলেও প্রচার করত। আর এসব বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ ফোন করলে জুবায়ের ওই ব্যক্তিদের সমস্যার সামাধান করতে পারবে বলে টাকা আত্মসাত করত। সিআইডি জানায়, প্রতারক জুবায়ের বিরুদ্ধে গত ২০১১ সালে ৫ ডিসেম্বর বোরহান উদ্দিন থানায় আরও একটি মামলা করা হয়েছিল (মামলা নম্বর-৯)। ওই মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা হয়।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে বোরহান উদ্দিন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোঃ শাহআলম বলেন, প্রতিদিন অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটে থাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন দেখে সহজেই প্রতারণার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। আমরা দেখেছি ঢাকার এক শিক্ষিত গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা হারিয়েছেন। ডিআইজি শাহআলম বলেন, আমরা এ কথিত জ্বিনদের দুই ভাগে ভাগ করেছি। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘টিভি জ্বিন’ আর একটি হচ্ছে ‘মোবাইল জ্বিন’। টিভি জ্বিনদের কাছে গিয়ে মানুষ নিজেরাই প্রতারিত হন। আর মোবাইল জ্বিন ফোন করে ভিকটিমদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে আনেন। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও রাজিব ফারহান এবং এসআই সিরাজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।