ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঁশিতে ভৈরবী সুরের সঙ্গে শুরু হলো নবান্নোৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

বাঁশিতে ভৈরবী সুরের সঙ্গে শুরু হলো নবান্নোৎসব

গৌতম পাণ্ডে ॥ হেমন্তের নির্মল আকাশ। পূর্ব আকাশে দিনের প্রথম সূর্যের লাল আভা। মঞ্চে শোভা পাচ্ছে ছনের তৈরি ঘর। সেখান থেকে ভেসে আসছে বাঁশিতে ভৈরবী রাগের সুর। চলছে খই-মুড়কি খাওয়ার সমারোহ। সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা রূপ নিয়েছে শিকড়ের উৎসবে। অঘ্রানের প্রথম প্রহরে সবাই মেতে উঠেছে নবান্নের উৎসবে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ আয়োজিত নগর কেন্দ্রিক এ উৎসবের ২০তম আসরের শুভ সূচনা হয় বৃহস্পতিবার সকালে। নবান্ন বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষককুলের শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয় নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নতুন আমন ধানের চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত এ অসাম্প্রদায়িক উৎসব বাঙালীর ঐতিহ্য। নতুন চালে রান্না করা সুঘ্রাণ ও সুস্বাদু পায়েশ, বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরি করে উৎসবমুখর পরিবেশে একে অপরকে খাওয়ানো বাঙালীর চিরায়ত সংস্কৃতি। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যবাহী এই নবান্নোৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও বাংলাদেশে কিছু কিছু এলাকায় অত্যন্ত আড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় এ উৎসব। রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্নোৎসব উদ্যাপন শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অঘ্রায়ন এ উৎসব উদ্যাপন করে। ঢাকের বাদ্য, নাচ, গান আর আবৃত্তির মধ্যদিয়ে দুই দিনব্যাপী নবান্নোৎসবের উদ্বোধন হয় চারুকলার বকুল তলায় বৃহস্পতিবার সকালে। উৎসবের এবারের প্রতিপাদ্য ‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’। উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার। উদ্বোধনের সময় তিনি বলেন, বাঙালীর ঐতিহ্য এ নবান্নোৎসবের তাৎপর্য অনেক বেশি। অসাম্প্রদায়িক ঋতু ভিত্তিক এ উৎসব এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেননা এখন আর আগের মতো গ্রামে-গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় এর আধিক্য তেমন লক্ষ করা যায় না। আমি প্রত্যাশা করি দেশের ঐতিহ্যের পথ বেয়ে এগিয়ে যাবে আমাদের লোকসংস্কৃতি। আমরা আধুনিক সংস্কৃতিও ধারণ করব, কিন্তু আমাদের লোকসংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে নয়। বাঙালীর এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব আরও ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশা করি। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন উৎসব আহ্বায়ক শাহ্রিয়ার সালাম, পর্ষদের চেয়ারম্যান লায়লা হাসান, ল্যাব এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম প্রমুখ। বক্তারা জাতীয় নবান্নোৎসবকে সরকারী উৎসব ও এই দিন ছুটি ঘোষণা দাবি করেন সরকারের কাছে। এর আগে বাাঁশিতে ভৈরবী রাগ বাজিয়ে শোনান শিল্পী মোঃ হাসান আলী। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের পালা’ ও ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ পরিবেশন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের শিল্পীরা। এছাড়া সম্মেলক গানে অংশ নেয় নিবেদন ও স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন, বহ্নিশিখা, আচিক, নটরাজ ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবদুল ওয়াদুদ, সুজিত মোস্তফা, বিশ্বজিৎ রায় ও আবু বকর সিদ্দিক। দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেয় ঢাকা স্বকল্পনের শিল্পীরা। সবশেষে ছিল শোভাযাত্রা। এটি চারুকলা থেকে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয় জাতীয় নবান্নোৎসব পর্ষদের সদ্য প্রয়াত কো-চেয়ারম্যান সাংবাদিক শুভ রহমানের উদ্দেশে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় এদিন বিকেলে। গান, কবিতা, নৃত্য আর নবান্ন কথনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনে আয়োজন। আজ শুক্রবার সকাল ৭টায় রাগ সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এদিন থাকবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও চিত্র প্রদর্শনী ও সনদ বিতরণ।
×