ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা লিট ফেস্ট ॥ দ্যুতি ছড়ালেন নন্দিতা-মনীষা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ঢাকা লিট ফেস্ট ॥ দ্যুতি ছড়ালেন নন্দিতা-মনীষা

’১০ ডিসেম্বর ২০১২, মৃত্যু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি মরতে চাইনি। আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম, চোখ মেলে দেখি আমার আকাশ কালো হয়ে আসছে। নিজেকে আশ্বস্ত করলাম, আমাকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এক সময় জানতে পারলাম আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ, কিন্তু এটা ও সত্যি যে ৫৬ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি...।’ ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে হিলড শীর্ষক সেশনে নিজের লেখা বই ‘হিলড’ থেকে কয়েকটি লাইন দর্শকদের পড়ে শোনান মনীষা কৈরালা। মনীষা কৈরালার মতো অনেক গুণীজন অংশ নেন এই অনুষ্ঠানে। গত ৮ নবেম্বর পর্দা উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই সাহিত্যের মিলনমেলার লিট ফেস্টের। এবারের লিটফেস্টে আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ শতাধিক সেশন ছিল। লিট ফেস্টে বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে ছিলেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিদেশী অতিথিদের মধ্যে এবার অংশ নেন পুলিৎজার জয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ এ্যাডাম জনসন, পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ হানিফ, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ফিলিপহেনশের, বুকার জয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জেম সমিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিশরা, লন্ডন ন্যাশনাল একাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক রিচার্ড বেয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলি শংকর, শিশুতোষ লেখিকা মিতালি বোস পারকিন্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগোরে স্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিদ হাজারি। দ্বিতীয় বারের মতো ছিলেন অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। কথা বলেন নিজের লেখালেখি নিয়ে। ছিলেন অভিনেত্রী ও এ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। কথা বলেন নারী অধিকার, অভিনয় জীবন ও বহুল আলোচিত হ্যাশ ট্যাগ মিটু আন্দোলন নিয়ে। বাংলাদেশের প্রায় দেড়শ’ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ এ আয়োজনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান, সেলিনা হোসেন, আফসান চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কামাল চৌধুরী। ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮’-এর তৃতীয় এবং শেষ দিন (১০ নবেম্বর) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটরিয়া মেডিক্যালের প্রথম সেশনে ভিন্ন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ‘অনড্রাম ডন হিল’ শীর্ষক আলোচনায় লেখক আহসান আকবারের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় স্কটিশ অভিনেত্রী টিল ডাসুইন টোন। ‘আগত ভবিষ্যতকে মোকাবেলা’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত ভিন্ন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে অঙ্গীকারা বদ্ধ স্কটল্যান্ডের প্রামডন স্কুল। অভিনেত্রী টিল ডাসুইন টনপুরো সেশনজুড়ে মূলত এ প্রসঙ্গেই কথা বলেন। টিল ডার মতে, বর্তমান বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কাঠামো অনুসরণ করা হয় এবং শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের যে বাড়া বাড়ি, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি শিশুর শৈশব থেকে পরিণত হয়ে ওঠার পথে অন্তরায়; প্রতিটি ধাপেই তাকে এক ধরনের সামাজিক চাপ, বিষণœতা ও হতাশার দিকে ঠেলতে থাকে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের বিপরীত অবস্থানে। ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনের দুপুরের অধিবেশনে ‘নোনো বেল : মিটুইন লিটারে চার’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জার্মান লেখক ওলগা গ্রাসনোয়া, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক ফিলিপ হেনশার, ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড বিয়ার্ড, আমেরিকান লেখক রসপটার ও ভারতীয় লেখক, সম্পাদক ও সমাজকর্মী হিমাঞ্জলি শংকর । সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় লেখক চন্দ্র বিভাস চৌধুরী। চন্দ্র বিভাস চৌধুরী সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্থগিতের কারণ ও এর প্রভাব দিয়ে আলোচনা করেন। ফিলিপ হেনশার বলেন, ‘সুইডিশ একাডেমির এই পদক্ষেপ তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সাহায্য করবে। নোবেল পুরস্কার ও তাদের কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যত নির্ভর করে এই আন্দোলনের ফলাফলের ওপর। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব প্রথম আয়োজন করা হয় ২০১১ খ্রিস্টাব্দে। তখন এর নাম ছিল হেলি টের‌্যারি ফেস্টিভ্যাল। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এর নাম পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ঢাকা লিটেরেরি ফেস্টিভ্যাল, সংক্ষেপে ঢাকা লিট ফেস্ট। ২০১৫ খ্রি. থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। এই উৎসবের প্রধান তিন জন পরিচালক হলেন কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর।
×