ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাকিল আহমেদ

সঠিক উপায়ে করুন মেডিটেশন

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 সঠিক উপায়ে করুন মেডিটেশন

১৫-২০ মিনিট সময় নির্বাচন করুন। কোলাহলবিহীন কোন স্থানে গিয়ে বসুন। ধীরে ধীরে মনকে স্থির করার চেষ্টা করুন। ভাবুন আপনার প্রিয় কোন জায়গার কথা যেখানে আপনার সময়গুলো অনেক ভাল কাটে কিংবা এমন কোন জায়গা যেখানে গেলে আপনার মন এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। চলে যান সেখানে। ঘুরে বেড়ান নির্জন সে জায়গায়। জীবনের সব ব্যস্ততা ভুলে সময় দিন আপনার কল্পনাকে। এভাবেই শুরু হবে আপনার মেডিটেশন। নিয়মিত বসুন মনকে সময় দিতে। অভ্যাস গড়ে ফেলুন। মনের সকল রাগ, ক্ষোভ, সকল অশুভ অনুভূতি যা আপনি কখনই প্রকাশ করতে চান না, ধীরে ধীরে এসব আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলনের মাধ্যমে মনকে স্থির করার এই প্রক্রিয়াই হলো মেডিটেশন। কেন করবেন মেডিটেশন? মনকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ তার মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধ্যানে বসে, মেডিটেশন করে। মন শান্ত থাকলে ভুল কম হয়, বিচার বিশ্লেষণ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। সর্বোপরি প্রচ ধৈর্যশীল এবং সহিঞ্চু হওয়ার দক্ষতা অর্জন করা যায়। ফলে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে শুধু মনকে নিয়ন্ত্রণ করাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। মনের সঙ্গে স্বাস্থ্যও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মনকে নিয়ন্ত্রণ করা মানেই মনের প্রশান্তি। আর যখন আমাদের মন শান্ত থাকে তখন আমাদের শরীর প্রায় অনেকাংশেই সুস্থ থাকে। নানা রকম রোগশোক থেকে দূরে থাকা যায়। একটি গবেষণা করা হয় এর উপর। যেখানে দুই দল ব্যক্তিবর্গের মধ্যে শুধুমাত্র একটি দলকে টানা ৮ সপ্তাহ মেডিটেশন করানো হয়। মেডিটেশন শেষ হলে তাদের সকলের শরীরে একটি ফ্লু রোগের ইনজেকশন দেয়া হয়। যারা মেডিটেশন করেছিল, দেখা যায় যে তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা দ্রুত কাজ করতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, মেডিটেশনের ফলে তাদের বাম-মস্তিষ্কের কার্যক্রমে দ্রুততা আসে। তাই তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও বেশি কার্যকর হয়ে উঠে। মেডিটেশন বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। দুঃখজনক কোন স্মৃতি যা মানুষকে প্রচ বেদনার মধ্যে রাখে এমন অনুভূতিগুলো সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা যায়, যারা মেডিটেশন করেন তাদের ধকল গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকে। গবেষণায় এটিও পাওয়া যায় যে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করে তাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি সংরক্ষণ ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রক অঞ্চলগুলো সদা কার্যকর থাকে। তারা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং তাদের স্মৃতিশক্তিও প্রখর হয়। শুধু মস্তিষ্ক নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গেও মেডিটেশনের সম্পর্ক রয়েছে। মেডিটেশন মানুষের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আমরা কতটুকু অক্সিজেন গ্রহণ করছি তার উপর ভিত্তি করে শরীরে সঠিক পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন ঘটায়। এছাড়াও আমেরিকার ‘হার্ট ফাউন্ডেশন’-এর মতে, মেডিটেশন শরীরের পীড়ন ও উদ্বিগ্নতা বাড়াতে দায়ী কিছু হরমোনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিদিন নানা রকম আবেগ, দুশ্চিন্তা আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। মেডিটেশনের মাধ্যমে এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের দেশে আইবিএস রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো টেনশন, যা সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক লক্ষণীয়। আইবিএস রোগের কারণে যে উদ্বিগ্নতা দেখা যায় তা প্রতিকারেও মেডিটেশন অনেক বেশি কার্যকরী। কীভাবে করবেন মেডিটেশন? ধরুন আপনি বান্দরবন কিংবা রাঙ্গামাটির কোন নির্জন এলাকায় ঘুরছেন। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে আপনার প্রতিটি মুহূর্ত কাটবে অত্যন্ত প্রশান্তিময়। মেডিটেশন আমাদের ঠিক তেমনই একটা প্রশান্তির অনুভূতি দেয়। চোখ বন্ধ করে ভাবুন কোন এক অচেনা নির্জন জায়গার কথা। যেখনে কোন কোলাহল, যানজট, ব্যস্ততা নেই। আছে শুধুই নীরবতা। তবে সবকিছু ভাবার আগে আপনার দরকার একটি সঠিক স্থান। নীরব কোন স্থান খুঁজে নিন। এরপর বসে পড়ুন মেডিটেশনে। আরাম করে বসুন, কোনরকম শারীরিক চাপ নিয়ে বসবেন না, শরীরকে নিজের মতো করে বসতে দিন। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস শিথিল রাখুন, এখানেও কোন বল প্রয়োগ নয়। আপনার স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন বজায় রাখুন, বেশি উত্তেজিত হবেন না। এবার কল্পনার সকল দুয়ার খুলে দিন। এমন কোন স্থানে চলে যান যেখানে যেতে আপনার কখনই খারাপ লাগে না। হতে পারে সেটা কোন সমুদ্রের পাড়, হতে পারে পাহাড়, জঙ্গল কিংবা আপনার নিজের গ্রামের বাড়ি যেখানে আপনি সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কাটিয়ে আসুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কোনরকম মানসিক চাপ মনকে নিতে দেবেন না এই কিছুক্ষণ। সম্পূর্ণ ভারহীন রাখুন নিজের মন। যত বেশি মনকে স্থির রাখতে পারবেন ততই মেডিটেশন কার্যকর হবে। এভাবে প্রতিদিন চালিয়ে যান। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে বসতে। এখানে একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো আজ যতক্ষণ ধরে মেডিটেশন করলেন পরবর্তী দিন সেই সময়কালটি বাড়াতে পারেন কিংবা একই রাখতে পারেন, কিন্তু কখনই কমাবেন না। যে কোন সময় করা যায় মেডিটেশন। তবে ধারণা করা হয় ভোর ৪টা আর বিকেল ৪টা মেডিটেশনের সবচেয়ে ভাল সময়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, এ সময়ে সূর্য ও পৃথিবী ৬০ ডিগ্রী কোণে অবস্থান করে। এর ফলে বসার সঠিকতার শর্তে আমাদের পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্রন্থির অবস্থান মেডিটেশনের সর্বোচ্চ উপযোগিতা দেয়। নিজেকে অতিপ্রাকৃতিক কিছু ভাববেন নাÑ মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি হয়ত অতিপ্রাকৃতিক কোনকিছু অনুভব করতে পারেন। তবে তাই বলে নিজেকে কখনই তেমনটা ভাববেন না। মেডিটেশন মানুষের মস্তিষ্কে নানারকম অনুভূতির সংযোগ ঘটায় যা আপনার মনকে শান্ত করতে সহায়তা করে। কিন্তু তাই বলে তা বাস্তবে কখনও সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে মেডিটেশনে যা কিছু ঘটে তার সবকিছুই কল্পনায় ঘটে, বাস্তবে নয়। সাদা আলো দেখা কিংবা শূন্যে ভাসার মতো অভিজ্ঞতাগুলো সব আপনার মস্তিষ্কের ভেতর ঘটে। আজ পর্যন্ত কেউ সত্যিকার অর্থেই মেডিটেশন করে শূন্যে ভাসতে পারেনি, তাই নিজেকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী ভাবাটা বোকামি হবে। মেডিটেশনের সময় মন প্রায়ই এদিক সেদিক চলে যায়। মেডিটেশন চর্চাকারীকে সতর্ক থাকতে হয় যেন তার মেডিটেশন নিরবচ্ছিন্ন হয় এবং বার বার মনকে মেডিটেশনের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। অনুশীলনের শুরুর দিকে মনোযোগের সঙ্গে চর্চার চেষ্টা করলে এবং বার বার অনুশীলন করলে এটাকে আয়ত্তে আনা যায়। আপনি যখন একবার মনকে স্থির রাখার প্রক্রিয়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবেন তখন মেডিটেশনের বাইরে অন্যান্য সময়েও মনকে বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে রাখার দক্ষতা অর্জিত হবে।
×