ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জোটের ছড়াছড়ি অথচ নেই ভোটের হুড়াহুড়ি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 জোটের ছড়াছড়ি অথচ নেই ভোটের হুড়াহুড়ি

চলছে ভোটের মৌসুম। হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসছে নির্বাচনী আমেজ আর সরগরম কর্থাবার্তা। কথার খই ফুটছে যেন মাঠে-ময়দানে, চায়ের দোকানে আর আড্ডা আসরে। সবখানে শুধু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে চলছে বাহাস। কারা কোন্ দল তথা জোট থেকে প্রার্থী হবেন সে নিয়ে তর্কবিতর্ক বেশ শাণিয়ে উঠছে। প্রার্থী হতে চাওয়াদের হাসি হাসি মুখ আর পায়ের ধ্বনি বেশ প্রতি ধ্বনিত হচ্ছে লোকালয়জুড়ে। বাগযুদ্ধ চলছে সর্বত্র, নানা তালে ছোট ছোট দল বড় দলের সঙ্গে জোট বেঁধে চলার জন্য চালাচ্ছে দৌড়ঝাঁপ। সীমাহীন ব্যস্ততা যেন তাদের। সুবিধা এতে বেশ। আসন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকে যেমন, তেমনি উচ্ছিষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। জোট ক্ষমতায় যদি যেতে পারে। কপালে থাকলে বিজয়ী হওয়ার দুরূহ কাজও সম্ভাবনাপূর্ণ হতে পারে। এখন জোটের কাল চলছে। কার জোটে কত দল, সে নিয়ে তৎপর প্রায় বড় দলগুলো। তাই নামসর্বস্ব বা বিবৃতিদানকারী দলগুলো বড় দলের নেকনজরে পড়ার জন্য নানাবিধ কসরত চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ওয়ানম্যান পার্টিগুলো বেশ ফুরফুরে মেজাজে। বড় দলের বড় নেতাদের পাশে বসা শুধু নয়, বড় সমাবেশে ভাষণ প্রদানের মোক্ষম সুযোগ এখন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে প্রচারের সুবিধাটুকু বুঝি প্রসার বাড়াতেও সক্ষম। শুধু জোট নয়, দেশে এখন ফ্রন্ট গড়ারও কারবার চলছে। আবার ফ্রন্ট ভেঙ্গে নয়া ফ্রন্টও গড়ে উঠছে। জাতপাত নীতি নৈতিকতা দূরে ঠেলে দিয়ে পড়িমড়ি ছুটছে ফ্রন্ট গড়ার কারিগররা। এই বুঝি ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়ে যাচ্ছে তারাÑ এই দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে আড়মোড়া ভাঙছে অনেকে। যূথবদ্ধ বিষয়টির প্রতি শাস্ত্রের অমোঘ বাণী রয়েছে। ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ এই আপ্তবাক্য মনে রেখে যে যার লাঠি নিয়ে চলে আসছে ফ্রন্ট গড়তে। ফ্রন্ট থেকে জোট আর জোট মানেই শরিক। শরিক মানেই ভাগাভাগিতে কলা-মুলা, না হোক ধন্চে তো মেলে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব নিকাশ তাই চলছে ভেতরে ভেতরে। সবই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আর নির্বাচনে বিজয় মানেই তো ক্ষমতাসীন হওয়া। এমন মুলা ঝুলে থাকলেও অপার শান্তি যেন জোটভুক্ত দল, অনু-পরমাণু দলগুলোর মধ্যে। বড় দল যেন পরশ পাথর। একটুকু ছোঁয়া লেগে গেলেই ধন্য হয়ে যায় ছোট ছোট ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দলের গজিয়ে ওঠা নেতারা। বাংলাদেশের রাজনীতির এখনকার ‘গিমিক’ বলা যায় জোটের পরে জোট গঠনের কালপ্রবাহ। নতুন নতুন জোট গঠনের খবর দেখে রাজনীতি নিয়ে যারা সংশয়ায়িত ছিলেন, তাদের ঘোর ক্রমশ কেটে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটছে প্যাডসর্বস্ব, নেতাসর্বস্ব, ব্যক্তিনির্ভর রাজনৈতিক দলের। যাদের পূর্ণ কমিটি গড়ার অবস্থা নেই। পাড়া-মহল্লার ক্লাবগুলোর সদস্য সংখ্যাও এর চেয়ে বেশি। জোটে যোগদান করে মাটিতে পা রাখার অবস্থা তৈরি হচ্ছে এসব মাইক্রোস্কোপিক দলগুলোরও। মজার কা- হচ্ছে, এই ছোট দলগুলো জোটকেন্দ্রিক অবস্থান নিয়ে ভাঙছেও। ভাঙ্গা গড়ার এক খেলা চলছে। ক্ষুদ্র দলগুলো ভেঙ্গে আরও ক্ষুদ্র হচ্ছে। কিন্তু নানা জোটে যারা নাম লেখাচ্ছে কিংবা তালিকাভুক্ত হচ্ছে, তাদের অধিকংশেরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি নেই। সারাদেশে শাখা-প্রশাখাও নেই। এমনকি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নেই নিবন্ধন, এমন দলের সংখ্যাই অজস্র। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান যে দুটি জোট তাদেরও অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ দলের নেই নিবন্ধন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব জোট গড়ে উঠেছে বা উঠছে, তাদের বেশিরভাগই নিবন্ধনহীন দল। এক হিসেবে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে আড়াই শতাধিক রাজনৈতিক দল এবং ১৩টি রাজনৈতিক জোট রয়েছে। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত দল হচ্ছে ৩৯টি। নিবন্ধন প্রাপ্তির জন্য যে ৭৬টি দল আবেদন করেছিল, শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণে তাদের কোনটিই নিবন্ধনযোগ্য হয়নি। উল্লেখ করার মতো বিষয় যে, সব জোটেই রয়েছে ইসলাম নাম ব্যবহারকারী ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল। আবার এসব দলের রয়েছে নিজস্ব ফ্রন্ট। সেই ফ্রন্ট নিয়ে তারা বিভিন্ন জোটে সামিল হয়েছে। জোটে এলেও ভোটে নেই অনেক দলই। জোটভুক্ত অনেক দলই রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব মেলে না। দু’একজন ব্যক্তি ছাড়া। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট রয়েছে অনেক দিন ধরে। এই জোটের একটি দল ভেঙ্গে দুটি দলে পরিণত হয়ে এখন ১৫ দল হলেও ১৪ দল হিসেবেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই ১৪ দলের সবার নাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাই জানেন না। শরিক দলগুলো গত দশ বছরেও সাংগঠনিক ভিত্তি ও শক্তি বাড়াতে পারেনি। সরকারী দলের সহযোগী হিসেবে এরা জনগণের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি। ক্ষমতার চৌহদ্দিতে এদের অনেকেরই অবস্থান নেই। প্রার্থী হবার মতো যোগ্য লোকের ঘাটতিও রয়েছে। এদের ভোট ব্যাংক বলে কিছু নেই। একই অবস্থা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের। এরই মধ্যে এই জোট থেকে কয়েকটি দল বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে দলগুলো ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গা অংশ ২০ দলের পঙক্তিভুক্ত রয়ে যায়। এদের এই ভাঙ্গনের যেমন নেই কোন রাজনৈতিক তাৎপর্য, তেমনি নেই ভোটের বাজারে বিরূপ প্রভাবের। জোটে দলভুক্ত করার প্রতিযোগিতা চলছে এখন। বড় দলগুলো তাদের জোটে টানছে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার জন্য। এতে আদৌ প্রভাব ফেলে কিনা সে নিয়ে কোন জরিপ হয়নি। জোট-মহাজোটের কবলে পড়ে শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড়ায়নি। বরং জোটভুক্ত হবার আগে দলে যা লোকজন ছিল, জোটে যাবার পর সেই লোকজনের আর দেখা মেলে না। বড় মাছ যেমন গিলে ফেলে ছোট মাছকে, তেমনি বড় দলগুলো এখন ছিপ ফেলে রেখেছে ছোট মাছগুলোকে গিলে ফেলার আয়োজনে। মাঠ পর্যায়ে এ দলগুলো বড় দলের কোন সহায়ক শক্তি না হলেও জোট ভারি করার জন্য এদের রাখা হয়েছে। জোটের ঘরোয়া সমাবেশে এদের কণ্ঠ থাকে সোচ্চার। পত্র-পত্রিকায় নাম ছাপা, এমনকি দু’চার লাইন বক্তব্য ছাপা হলে এই ক্ষুদ্র দলের বড় নেতারা বর্তে যান। নির্বাচনে এদের প্রভাব বিস্তার করার কোন ক্ষমতা অতীতকালে দেখা যায়নি। ভোট এলেই এদের কদর বাড়ে। ভোট শেষে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে অনেক নামসর্বস্ব দলের নামসর্বস্ব নেতা, তাদের জোট ক্ষমতায় এলে নানারকম সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে তৎপর হয়ে ওঠে। ক্ষমতার পাশে থাকার সুখই বুঝি অন্যতর। জোটভুক্ত হওয়ার পিছনে কোন রাজনৈতিক আদর্শের প্রেরণা কাজ করে না। অবশ্য এসব দলের কাছে আদর্শের কোন বালাই নেই। আছে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিকদর্শন। এটা ঠিক, জোটের বিষয়টি সবসময় ভোটের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেও অনেক সময় মিত্র বাড়ানো হয়। শরিক অনেক দলের হয়ত ভোট ব্যাংক নেই। কিন্তু নির্বাচনে তারা এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মনে করা হয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনকালে দেখা গেছে জোটের অংশী থাকার কারণে অনেক নামসর্বস্ব দলের নেতাও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এসব কারণে অনেক নামসর্বস্ব দলও এবার জোটভুক্ত হতে পাগলপাড়া। ক্ষমতার স্বাদ পাবার আকাক্সক্ষা তীব্র হওয়ায় নাম ও প্যাড সর্বস্ব দলগুলোর নেতারা মরিয়া প্রায়। ১৪ দলীয় জোটে রয়েছেন যারা তারা অবশ্য সমমনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এরা তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। অবশ্য এই জোটে জাতীয় পার্টি ভিন্ন মেরুর দল হলেও আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেক ক্ষুদ্র দলও এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ১৪ দলীয় জোট সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম অবশ্য মনে করেন, জোট হয় সমমনাদের সঙ্গে। ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক দলগুলোকেই জোট স্বাগত জানায়। সাম্প্রদায়িক কোনো দলের স্থান নেই ৪ দলীয় জোটে। জোটভুক্ত হতে আগ্রহী ইসলামী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই বলে তাদের জোটে নেবার সম্ভাবনা রয়েছে ১৪ দলের একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্তমানে, নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠন অতীতেও হয়েছে, যেখানে ন্যূনতম কর্মসূচী বা মতাদর্শ গত মিল রয়েছে এমন দলগুলোই জোটে অংশ নেয়। কিন্তু এবার দেখা গেছে, নীতি আদর্শে মিল নেই, তবু ক্ষমতার লোভে জোট হচ্ছে। বাম-ডান আজ একাকার। পরগাছা বা আগাছার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোর এমনিতে নীতি আদর্শের বালাই নেই। তারা ক্ষমতায় স্বাদ যেনতেনভাবে পাবার লোভে বড় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। যত পথ তত মত বলে যে প্রবাদ রয়েছে, এখানে তা উহ্য হয়ে গেছে। ক্ষমতায় পথ ধরে এগিয়ে যাবার স্বপ্নবিলাসে জোটের রাজনীতিতে বিলীন হবার জন্য উদগ্রীব সবাই। দেখা যাচ্ছে, জয় বাংলা সেøাগান যারা দিতেন, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে যারা মান্য করেন। তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনার বাংলাদেশ জিন্দাবাদ সেøাগানধারী এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক নামক বিতর্কিত বিষয়কে মেনে নিয়ে এক মঞ্চে সমাবেশ করছেন। এমনকি দুর্নীীতর দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত রাজনীতিকদের মুক্তির দাবী করছেন ‘রাজনৈতিক বন্দি’ হিসেবে। নীতি-নৈতিকতাকে বন্ধক দিয়ে স্রেফ ক্ষমতার লোভে ঢাল, তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দাররা আজ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক দলের জোটে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার সংগ্রামে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যেন। ডক্টর কামাল হোসেন, আসম রব গংরা সব জলাঞ্জলি দিয়ে এখন রাজনৈতিক এতিম হিসেবে কোন পথ না পেয়ে ভিন্ন মতাদর্শীদের সঙ্গে এক কাতারে সামিল হয়েছেন। এরা জানেন, এদের এর বাইরে আর কোন জগত নেই। সব হারাতে হারাতে শেষতক আজ খড়কুটো ধরে টিকে থাকার জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে মিলিত হয়ে ডক্টর কামাল গংরা মরা গাঙ্গে জোয়ার আনার জন্য গলা হাঁকাচ্ছেন। দেশে-বিদেশে পরিচিত এই আইনজীবী ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে নাম কামিয়েছেন অনেক আগেই। আবার বিপদ দেখলে সটকে পড়তে কসুর করেন না। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হবার মত অবস্থা তিনি কখনও তৈরি করতে পারেন নি। জনমানুষের সঙ্গে মিশতে না পারা এই আইনজীবী গ্রন্থের ভাষায় কথা বলেন। যা সাধারণের বোধগম্য হয় না। সেই তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের সমাবেশে সরকারকে হুমকি ধামকি দিয়ে যেসব বক্তব্য রাখছেন, তা তার স্বরূপ উন্মোচন করে। অতীতের অনেক ভূমিকাকেই স্পষ্ট করে। পরস্পরের প্রয়াত স্বশিক্ষিত বিএনপি লীয় সংসদ এসএ খালেক আজ বেঁচে থাকলে খুলি হতেন বৈকি। ডক্টর কামালের সঙ্গে মীরাপুরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালে জনসমাবেশে ডক্টর কামালকে করে জনগণের উদ্দেশে। বলেছিলেন, ‘তিনি কিসের ডাকতার, আজ পর্যন্ত কোন রোগী দেখেছেন এলাকায়। আপনারা বলতে পারেন? জনতা না, না ধ্বনি দিয়েছিল। সেই কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াতের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অবশেষে চিকিৎসক পরামর্শকের ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছেন। বিএনপি পন্থী সুপ্রীমকোর্ট আইনীজীবীদের সমাবেশে বলেছেন, ‘পুরো দেশকে সরকার জঙ্গল বানিয়েছেন। জংগলিরাও এমনটা করেনা। কেন এগুলো হচ্ছে? সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাথা খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে হয়। তাদের ডাক্তার দেখাতে হবে।’ ডক্টর কামাল নিজে এই ডাক্তার সাজতে পারেন চাইলেই। মাথা খারাপ যে কার হয়েছে, তা বোঝার জন্য আইনের সুশাসনের দাবিদার থেকে সাজাপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজদের মুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের জন্য ডক্টর কামালের বর্তমান ভ’মিকার কার্যকারণ পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক গবেষকরাও এগিয়ে আসতে পারেন। বিএনপি-জাায়াতের সব অপকর্মকে সুকর্ম হিসেবে ডক্টর কামাল ক্রমশ মূল্যায়ন করবেন এমনটা ভাবা আস্বাভাবিক নয়। ক’দিন পর বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, মিয়াকে ‘ঘোষক’ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মাতম শুরু করতে পারতেন। তার আলামত দেখা যায় আইন মন্ত্রীকে হুমকি ধামকির মধ্যে। বেআইনী কাজের জন্য আইনমন্ত্রীর বিচার হতে পারে উল্লেখ করে বলেছেন তিনি, “দ্রুত তোমার বিচার হবে। দশ বছর পরে হলেও তোমার বিচার হবে। এসব কথা বলার জন্য আমাকে কী করবা? সর্বোচ্চ মেরে ফেলতে পারো, তাইতো? তোমার বিচার হবেই।” কালো টাকা সাদা করা আইনজীবী ডক্টর কামাল সবে মুখ খুলছেন। সামনে আরো যত কথাই বলবেন, সেজন্য অপেক্ষা দেশবাসীর। এটা মনে করা স্বাভাবিক বিএনপি-জামায়াতের পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রধান হিসেবে তিনি আসলে দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত খালেদা-তারেককে রাজনীতিক হিসেবে অভিধা প্রদান করেন, তাদের মুক্ত করতে তিনি ‘লড়াই’ চালাচ্ছেন। জোটের জন্য তিনি যত শ্রম দিয়েছেন, ভোটের জন্য তবে নির্বিকার থাকবেন? মনে হয় না। কামাল হোসেন আসলে এখন ‘ব্যবহৃত’ হবার পর্যায়ে রয়েছেন। জীবনানন্দের কবিতায় যেমন পাওয়া যায় ‘ব্যবহৃত হতে হতে হতে’-তেমনি কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াতের হাতে ‘ব্যবহৃত হতে হতে হতে’ রাজনৈতিক অঙ্গন হতে নির্বাণ লাভ করতে চাইছেন। ভোটারদের প্রতি বিমুখ কামাল হোসেন আশা করি নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণরায় মাথা পেতে নিতে সচেষ্ট হবেন।
×