ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি শেফার্ড

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি শেফার্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেনি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে অর্থ হাতে পাওয়ার ১৮ মাস অর্থাৎ এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের শর্তানুসারে কারখানা সংস্কার করতে গিয়ে আইপিওর অর্থ ব্যয় পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে এরই মধ্যে কারখানায় সব যন্ত্রপাতি এসে গেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী তারা। শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও তহবিল ব্যবহার-সংক্রান্ত নিরীক্ষক আহমেদ জাকির এ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ২০ কোটি টাকার মধ্যে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অব্যবহৃত রয়েছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা ৩৫ শতাংশ অর্থ। ব্যবহৃত অর্থের মধ্যে ভবন নির্মাণকাজে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যন্ত্রপাতি আমদানি ও স্থাপন বাবদ ব্যয় হয়েছে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বা ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাছাড়া স্বল্পমেয়াদী ব্যাংকঋণ পরিশোধ বাবদ ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। নিরীক্ষকের প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে আইপিও তহবিল থেকে কোন অর্থ ব্যয় করেনি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে আগস্টে এসে ভবন নির্মাণকাজে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। এদিকে গতবছরের নবেম্বরে আইপিও অর্থ ব্যয় পরিকল্পনায় পরিবর্তনের পর যন্ত্রপাতি আমদানি ও স্থাপন বাবদ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর এ বছরের জানুয়ারিতে এসে যন্ত্রপাতি বাবদ শেফার্ডের ব্যয় দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। এরপর থেকে আর এ পর্যন্ত যন্ত্রপাতি বাবদ কোম্পানিটি কোন অর্থ ব্যয় করেনি। আইপিও তহবিল ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোঃ আতাউর রহমান বলেন, আমরা এরই মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলে বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি আমদানি করে কারখানায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংককে এলসির সব টাকা পরিশোধ না করার কারণে আইপিও তহবিলের অর্থ অব্যবহৃত রয়েছে। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আইপিও তহবিলের পুরো অর্থ ব্যয় হয়ে যাবে এবং প্রকল্পের কাজও শেষ হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব না হওয়ায় কোম্পানির আসন্ন বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনক্রমে অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা কিছুটা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গতবছরের নবেম্বরে এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের শর্তানুসারে কারখানা সংস্কারের জন্য আইপিও তহবিলে অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৩ হাজার বর্গফুটের স্থলে ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণ করার কথা জানায় কোম্পানিটি। এ খাতে তাদের ব্যয় হবে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আগের পরিকল্পনায় যা ছিল ২ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি আমদানি ও স্থাপনের কাজে ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৭ হাজার ৫৩ টাকা ব্যয় করতে চায় তারা। আগের পরিকল্পনায় এ খাতে ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের। নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে সে সময় কোম্পানিটি জানিয়েছিল, আইপিও অর্থ হাতে পাওয়ার আগে থেকেই তারা নিজেদের অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত অধিকাংশ যন্ত্রপাতিই তারা নিজেদের অর্থায়নে আমদানি করেছে। ফলে আইপিও তহবিলের অব্যবহৃত অর্থ তারা নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় করবে। তাছাড়া প্রথমে আইপিও তহবিল থেকে বর্জ্য পরিশোধনে ইটিপি নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তী সময়ে কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন থেকেই এটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহের অর্থও কোম্পানিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা। ৩০ জুন এর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৮৩ পয়সায়। পূর্ব এশীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এ কোম্পানিটি ২০০০ সালে যাত্রা করে। গতবছর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মূল ব্যবসা ডায়িং ও ওয়াশিং। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের জন্য সুতাও প্রস্তুত করে তারা। ময়মনসিংহের ভালুকায় তাদের কারখানা ও কর্পোরেট অফিস রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত।
×