ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কামাল হোসেনের টার্গেট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

কামাল হোসেনের টার্গেট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, বরং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে নিয়ে ঐক্য করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে নির্মিত বিআরটিএর নতুন ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ৩৬তম কমিশন সভার এজেন্ডায় নিজের ‘ব্যক্তিগত’ পর্যালোচনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ‘অপমানিত’ হয়েছেন বলে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে তা বর্জন করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার সঙ্কট তৈরি হলো কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনে এসেছেন। তিনি বলেন, যিনি নোট অব ডিসেন্ট দিলেন বা বেরিয়ে গেলেন তিনি সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছিলেন সেখানে মাহবুব তালুকদার বিএনপির মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে এসেছেন। সেটা শুধু স্মরণ করিয়ে দেই। তার সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না। তিনি বলেন, আর নোট অব ডিসেন্ট যে কেউ দিতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচজন সদস্য আছে এর মধ্যে একজন বিরোধিতা করতেই পারেন। মেজরিটি যা বলবে তাই তো বৈঠকের সিদ্ধান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আর কেউ বিরোধিতা করবে এটাই তো গণতন্ত্র। এটা কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। আর এটার জন্য নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের কোন যৌক্তিক কথা নয়। কামাল হোসেনের আসলে শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য তারেক জিয়ার নেতৃত্ব মেনে নিতেও কোন আপত্তি আছে বলে মনে করি না একথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, কারণ এই ধরনের ঐক্যটা আসলে কে চালাবে? মূল দল হচ্ছে বিএনপি। আর বিএনপি চালায় কে? তারেক রহমানের অঙ্গুলি হেলনেই চলবে এটা। লন্ডন থেকে দলেরও নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এই জোটেরও নেতৃত্ব কলকাঠি নাড়বেন তারেক রহমান। সেখানে ড. কামাল হোসেন সাহেব এটা নিজে ভাল করেই জানেন। দুই দশক আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জামায়াত, বিজেপি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করেছিল বিএনপি। ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি। পরে আরও দুটি দল তাতে যোগ দেয়। যদিও মঙ্গলবার ২০ দলের মধ্যে দুটি দল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে চলমান জোট রেখেই কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নতুন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিল বিএনপি। তাদের মধ্যে আছেন আরও কয়েকজন ব্যক্তি ও সংগঠন। জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়নি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্প ধারা। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে আরেক জোটে থাকা বিএনপিকে নিজের জোটে নিলেও জামায়াত নিয়ে আপত্তির কথা বলেছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল। ওবায়দুল কাদের বলেন, কামাল হোসেনের টার্গেট সম্ভবত ক্ষমতায় যাওয়া নয়, তার টার্গেট হল শেখ হাসিনাকে ছলে-বলে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় মঞ্চ থেকে হটানো। সেজন্য তারেক রহমানের মতো যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নেতৃত্ব মেনে নিতে তার আপত্তি আছে বলে মনে করি না। এই জোট থেকে ইতোমধ্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বের করে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, এ ধরনের ঐক্য তেলে আর জলে মেশানোর অপচেষ্টা মাত্র, এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। ড. কামাল হোসেন গণফোরাম করেও সাড়া পাননি এখানে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেও সাড়া পাবেন না। ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে কাদের বলেন, আমরা যতটুকু জানি ঐক্যফ্রন্টে বিকল্প ধারা থাকুক এটা বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। কারণ ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) বিএনপির আমলে রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন তাকে কিভাবে অপমান করা হয়েছিল। তার সঙ্গে একটা অস্বস্তির বিষয় বিএনপির বরাবরই ছিল। কাজেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই মনে করছেন বি. চৌধুরীকে যেভাবে অপমানজনক অবস্থায় বাড়িতে আমন্ত্রণ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, এরপর তিনি জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে কি করে থাকেন? কাদের বলেন, আগেও বলেছি ঐক্যে টিকে থাকার জন্য অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। শীঘ্রই সঙ্কটে পড়বে। তেলে আর পানিতে মেশানোর যে অপচেষ্টা সেটা অচিরেই ব্যর্থ হবে। বিকল্প ধারাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যে নেবেন কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু বলতে পারি না। এজন্য ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে, সেখানে নির্বাচন সম্পৃক্ত সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। এই জোট সমীকরণ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশিকল। বিকল্প ধারাকে জোটে টানার সম্ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব বিষয় নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে আলোচনা হবে এবং সিদ্ধান্ত হবে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তায় আছে কি-না? প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, আমরা একটুও চিন্তা করি না। এ নিয়ে আমাদের কোন দুশ্চিন্তা কখনই ছিল না। এখনও নেই। কিছু কিছু দল আছে যাদের প্যাড আছে তো সিল নেই, সিল আছে তো প্যাড নেই। ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর গণফোরাম করেছেন, সেখানে তিনি জনসম্পৃক্ততার দিক থেকে তেমন সাড়া পাননি। তিনি দেশের সিনিয়র রাজনীতিক হিসেবে হয়ত ভেবেছিলেন বেরিয়ে আসলে হাজার হাজার লোক তার সঙ্গে জোট বাঁধবে, জনসম্পৃক্ত হবে। কিন্তু তিনি জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিক হিসেবে নিজের অস্তিত্ব কোন রকমে বজায় রেখেছেন।
×