ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাটহাজারী বিমানবন্দর হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 হাটহাজারী বিমানবন্দর হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

১৯৪৩ সালে জাপান ব্রিটিশ যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী জাপানকে কাবু করতে তিনটি বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে একটি তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনীতে। আর দুটি সেই সময়কার বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার চকরিয়াতে একটি এবং হাটহাজারী উপজেলায় একটি। তৎকালীন হাটহাজারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমানে হাটহাজারী পৌরসভার আলমপুর গ্রামে ৩৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বিমান বন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিমান বন্দরের জন্য প্রশাসনিক ভবন, সিগন্যাল ওয়ার ও বিমান ওঠা নামার জন্য রানওয়ে সড়ক ও নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলাকালীন বিমান বন্দরটির কার্যক্রম সচল ছিল। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এখানে বিমান বন্দরের স্থাপত্য শৈলী দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এখানে এসে ভিড় করত। সে সময় এ এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। হাটহাজারী সদর এলাকা থেকে হাসপাতাল সড়ক ও মিরেরহাটের নজব আলী চৌধুরী সড়ক দিয়ে বিমান বন্দরে যাতায়াত করা যায়। প্রতিষ্ঠার পর শুধু মিরেরহাটের সড়কই বিমানবন্দরে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ছিল। নাজিরহাট শাখা লাইনের ট্রেনে করে হাটহাজারী এবং চারিয়া রেল স্টেশনে নেমে হেঁটে বিমান বন্দরে লোকজন আসা যাওয়া করত। স্বাধীনতার পর হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হলে সেদিকে একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৩ সালে জাপান ব্রিটিশ যুদ্ধ শুরু হলে মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। লোকমুখে শোনা যায় সেসময় হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান উপজেলাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য লোক বিমান বন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হলে বিমান বন্দরের জন্য নির্মিত স্থাপনাসমূহ অযন্তে অবহেলার শিকারে পরিণত হতে থাকে। সেই সঙ্গে বিমান বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিগুলোও ক্রমে বেহাত হতে থাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সে সময়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হতে শুরু করে। বর্তমানে রানওয়ের জন্য নির্মিত কিছু সড়ক দৃশ্যমান থাকলেও প্রশাসনিক ভবন ও সিগ্যানাল ওয়ারের ঘরটি আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। দেওয়ালে শেওলা জমে গেছে। অনেক স্থানের ইটগুলো রোদ ও বৃষ্টিতে ভিজে দেয়াল থেকে খসে পড়ে গেছে। চল্লিশের দশকের বিমান বন্দর এলাকায় জনবসতি না থাকলেও দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে সেখানে জনবসতি স্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া বিশাল জায়গা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ঐ এলাকায় জেলা দুগ্ধ খামার এবং ২০০৬ সালে জেলা ছাগল খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এখানে ছাগল প্রজনন কেন্দ্র এবং ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। দুগ্ধ ও ছাগল খামারের পাশে গুচ্ছ গ্রাম, আদর্শ গ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও সরকারীভাবে এ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিমান বন্দরের রানওয়ের পাশে বর্তমানে বেশ কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গুচ্ছগ্রাম, আদর্শ গ্রাম,আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা। সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বিমান বন্দরের সন্নিহিত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শ্মশান কালীবাড়ি ও পূজা মন্ডপ। পাহাড় সমতল ভূমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এলাকাটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বিমান বন্দর এলাকায়। সম্প্রতি জেলা দুগ্ধ খামারের পাশে চট্টগ্রামের ভেটেনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম বেইস ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। তাছাড়া এখানে কৃষি ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার সেন্টার ও বিমান বন্দরের আশপাশে রয়েছে। বছর দেড়েক পূর্বে মিরেরহাটের নজব আলী চৌধুরী সড়কটি পৌরসভার অর্থায়নে সংস্কার ও উন্নয়ন করায় বিমান বন্দর বাজারে যাতায়াত একেবারে সহজ হয়ে গেছে। হাটহাজারী বাজার ও মিরেরহাট থেকে বিমান বন্দর বাজারে সিএনজি সার্ভিস চালু হওয়ায় যতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে গেছে। যতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অনেকেই এই এলাকায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছে। পরিত্যক্ত বিমান বন্দরের জায়গা উদ্ধার করে এখানে যদি পর্যটন কেন্দ্র করা যায় তাহলে প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে। বিভিন্ন স্থানের পর্যটকদের ভ্রমণ ও পর্যটনের সুবিধা সৃষ্টি হবে। বয়োজ্যেষ্ঠরা এলাকাকে এখানও জাপান ব্রিটিশের লড়াইয়ের বিমান বন্দর বলে আখ্যায়িত করেন। অবশ্য নতুন প্রজন্ম বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে এ এলাকায় বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠার গল্প শুনে থাকে। -ইউনুস মিয়া, ফটিকছড়ি থেকে
×