ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিতর্ক নিয়ে ভিয়েতনামে মাহাথির আনতারা

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিতর্ক নিয়ে ভিয়েতনামে মাহাথির আনতারা

‘হ্যানয় এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ২০১৮’ শিরোনামে এশীয় দেশগুলোর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭-১১ সেপ্টেম্বর, ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়তে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করছেন মাহাথির মাহাম্মুদ ও আনতারা ফারনাজ খান। দু’জনেই একাডেমিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি সিস্টেমে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দলে সদস্য থাকছে দু’জন করে। প্রতিটি পর্বে অংশ নেবে ৪টি টিম। পদ্ধতিগত দিক থেকে ওপেনিং গবর্নমেন্ট, ক্লেজিং গবর্নমেন্ট, ওপেনিং অপোজিশন ও ক্লোজিং অপোজিশনে অনুষ্ঠিত হবে এ বিতর্ক। ইংরেজী মাধ্যমে যারা বিতর্ক করেন তাদের মধ্যে মাহাথির-আনতারা পরিচিত মুখ। দু’জনেরই জন্ম, বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। দু’জনেই পছন্দ করেন কথা বলতে, আর তা যদি যুক্তির মাধ্যমে সত্য উপস্থাপন হয় তাহলে পছন্দের মাত্রা যায় আরও বেড়ে। শৈশব থেকেই বিতর্কে সমান আগ্রহ দু’জনের। অর্জনের ঝুলিটাও বেশ ভারি। একজন ভাল বিতার্কিক হয়ে উঠতে মাহাথির মনে করেন, প্রথমেই প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা অর্থাৎ জানা এবং নিজের বক্তব্য যৌক্তিকভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন। থাকতে হবে আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান এবং যুক্তির আলোয় আলোকিত মন। তর্কের খাতিরে তর্ক নয় আস্থা রাখতে হবে যুক্তিতে। তারা দু’জনেই বিশ্বাস করেন, যুক্তি চর্চার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা বিতার্কিকরা আলোকিত সমাজ গঠনে, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টি সারা বিশ্বেই আজ স্বীকৃত। মাহাথিরের মতে, প্রযুক্তি পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিলেও, আমাদের চিন্তার ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে। তথাকথিত সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা স্ক্রল করে যাই কিন্তু চিন্তা করা, বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করা বা নিজের আইডিয়াকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকে কম। একজন বিতার্কিক প্রথমে নিজের ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করেন তারপর যুক্তির আলোয় সত্য প্রতিষ্ঠা। আমাদের দেশে বিতর্কের অবস্থা নিয়ে আনতারা বলেন, দেশে বর্তমানে বিতর্কের অবস্থা তেমন ভাল নয়। স্কুলগুলো এ ব্যাপরে তেমন সময় দিতে চায় না। অভিভাবকরা ভাবেন দুই ঘণ্টা বিতর্ক না করে কোচিং করলে বা পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হলে তার সন্তান আরও ভাল রেজাল্ট করত। দু’দিকের চাপে বিতর্ক করার ইচ্ছাটাই হারিয়ে যায়। এর মাঝেও যারা বিতর্ক নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় তাদের নিজেদের ইচ্ছা থেকে, কষ্ট করে তা করতে হয়। আমাদের আগে বুঝতে হবে একাডেমিক শিক্ষাই সব নয়, প্রতিযোগিতার এই সময়ে টিকে থাকতে হলে অন্যান্য বিষয়েও সমান মনোযোগী হতে হবে। বাইরের দেশে বিতর্ক করার যে সব সুযোগ আছে তা আমাদের দেশে প্রচলন করতে হবে। বিতর্ক মানুষের মাঝে সহনশীলতা এবং পরমতসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তার সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক বেশি সহায়ক। তাই আরও বেশি করে বিতর্ক চর্চার ওপর জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন মাহাথির এবং আনতারা। শিক্ষার্থীদের বিতর্কমুখী করার জন্য মাহাথির বলেন স্কুল পর্যায়ে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বিতর্ক শেখানোর জন্য থাকবে শিক্ষক অথবা কোচ। থাকবে ডিবেট আয়োজক কমিটি। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। তবে সেখানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ একটি বড় সমস্যা। আমাদের অনেক মেধাবী বিতার্কিক আছেন যারা পৃথিবীর যে কোন পর্যায়ে বিতর্কে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। কিন্তু আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এ দিক থেকে আমরা ভাগ্যবান নন্দন পার্ক এবং হোটেল ওয়েস্টিনের মতো দুটি প্রতিষ্ঠান এবার আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যয় নির্বাহ করতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের দেশে অনেক দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে তারা যদি বিতার্কিকদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন তাহলে বিশ্বসভায় অনেকেই দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এ বিষয়ে আনতারা বলেন বিতর্কের ওপর আরও বেশি কর্মশালা ও সেমিনার হওয়া উচিত। দু’জনেই স্বপ্ন দেখেন ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ওয়ার্ল্ড স্কুল ডিবেটিং চ্যাম্পয়নশিপ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ ও বিজয়ী হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×