ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

পাখির কৃত্রিম গান

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৩১ আগস্ট ২০১৮

পাখির কৃত্রিম গান

পাখিরা গান গায়। অনেক পাখির গান বড়ই সুমিষ্ট। কিন্তু কিভাবে তারা গান গায় তা নির্ণয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে যে বাকযন্ত্রের টিস্যুগুলোর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা বাতাসে কম্পন তোলার জন্য বাকযন্ত্রের পেশীগুলো সঞ্চালন করেই পাখিরা গান বা সুর সৃষ্টি করে। আগের গবেষণায় যেখানে বলা হয়েছে যে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিটি পেশীর একটি করে ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য থাকে সেখানে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে ধ্বনি সৃষ্টি করার জন্য এই পেশীগুলো এক ঐকতানে কাজ করে। এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল ‘ক্যাওস’ সাময়িকীতে জেব্রা ফিঞ্চ পাখি কিভাবে গান বা সুর সৃষ্টি করে, তার বর্ণনা দিয়েছেন। ধ্বনি সৃষ্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যতম প্রধান একটি পেশী সাইরিং গিয়ালিস ভেন্টালিস (ভিএস) পেশীর ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য রকার জন্য গবেষকরা ইলেকট্রো মায়োগ্রাফিক (ইএমজি) সঙ্কেতকে কাজে লাগান। তারপর এই পেশী থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করে তারা জেব্রা ফিঞ্চের কৃত্রিম গান বা সুর সৃষ্টি করে। গবেষক দলের অন্যতম জুয়ান ডপলার বলেন, এই ভিএস পেশী থেকে ধ্বনি কখন শুরু বা শেষ হয় সেই গেটিং সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে। একটা কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো এই যে পাখি ঘুমিয়ে থাকার সময় ধ্বনি সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বায়ুর প্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও এই পেশীটি সক্রিয় অবস্থায় থাকে এবং বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের পরিচয় দেয় যা গান গাওয়ার সময় প্রদর্শিত বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের ঠিক অনুরূপ। গবেষকরা পূর্ণ বয়স্ক পাঁচটি জেব্রা ফিঞ্চ পাখির ভিএস পেশীর ভেতর একাজোড়া করে বাইপোলার ইলেকট্রোড লাগিয়ে দেন। আগে ধরে নেয়া হয়েছিল যে ভিএস পেশী প্রধানত ফ্রিকোয়েন্সি মুডলেশনের কাজে যুক্ত। তবে বর্তমান গবেষক দল লক্ষ্য করেছেন যে এই পেশী শব্দ বা ধ্বনি সৃষ্টির কাজেও সংশ্লিষ্ট। ইএমজি উপাত্তকে কাজে লাগিয়ে তারা ফোনেটিক বিরতি কালগুলো চিহ্নিত করেন। এক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের হার ছিল ৭০ শতাংশের মতো। তাও আলদা আলদা পাঁচটি পাখি থেকে প্রাপ্ত এক সেট উপাত্তে শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিরতি কালগুলোর সঠিক পূর্বাভাস দানের এক সেট মানদ- উদ্ভাবন করেন। মানদ-টি ছোট ছোট সহজ শব্দাংশের ক্ষেত্রে সবিশেষ ভালভাবে কাজ করে। এ সময় শব্দ বা ধ্বনি সৃষ্টিকালে ভিএস পেশীটি মূলত নীরব থাকে। আরও জটিল শব্দাংশের বেলায় এটা সৃষ্ট হয়ে ওঠে যে জেব্রা ফিঞ্চের গানে ধ্বনির শুরু ও বন্ধের ওপর অন্য যেসব সাইরিং গিন পেশীর প্রভাব থাকে সেগুলোর ক্রিয়াকলাপকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের গেটিংয়ের পূর্বাভাস আরও ভালভাবে দেয়া যায়। তার পরও গবেষকরা একটিমাত্র পেশীর ক্রিয়াকলাপকে কাজে লাগিয়ে একটি পুরোদস্তুর গান কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। ভিএস পেশীটি ঘুমের সময় সবিশেষ সক্রিয় থাকে। তাই পাখিগুলো ঘুমিয়ে থাকার সময় গবেষকরা এই ভিএস পেশীর বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপের উপাত্তগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকে গান বা সুরে রূপায়িত করতে পেরেছেন। ডপলার বলেন এই গবেষণা থেকে বড় যে সম্ভাবনায়ময় ফলটি আশা করা যায় তা হলো ঘুমিয়ে থাকার সময় কখন পাখিরা গান গাওয়ার স্বপ্ন দেখে তা নির্ণয় করা এবং কোন্ কোন্ গান তার গায় তা শোনার কাজে এই কৌশলটি শীঘ্রই কাজে লাগাতে পারা যাবে। সূত্র : বার্ড সাইয়েন্স
×