ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্য ও সেবা খাত থেকে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

৪৪ বিলিয়ন ডলার ॥ এবার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ আগস্ট ২০১৮

৪৪ বিলিয়ন ডলার ॥ এবার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পণ্য উৎপাদনে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। পণ্য ও সেবা খাত থেকে এ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি রফতানি আয়ের এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা দেন। এ সময় বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু ছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার ২৭টি পণ্য রফতানি খাতে বিভিন্ন হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এবার আরও নয়টি পণ্য রফতানিতে দশ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পণ্যগুলো হলো- হিমায়িত সফটসেল কাঁকড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল, সিরামিক দ্রব্য, গালভানাইজড সিট বা কয়েলস, ফটোভলটাইক মডুল, রেজার ও রেজার ব্রেডস, ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। তিনি বলেন, আগামীতে দেশের রফতানিকারকগণ পণ্য রফতানিতে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। রফতানির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে দেশের মোট রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পণ্য রফতানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। আর সেবা খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন মর্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে পণ্য রফতানি থেকে। সেবা খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল। গত অর্থবছরে রফতানি পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। একমাত্র চামড়া খাত ছাড়া সব খাতে রফতানি ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, এবার দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত থেকে ৩২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রফতানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। আমরা আশা করি তৈরি পোশাকে এবার আরও ভাল করতে পারব। আশা করছি রফতানি আরও বাড়বে। তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওভেন পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরে নিট পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত অর্থবছর তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩০ হাজার ৬১৪ কোটি ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে নিট পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার। আর ওভেন পণ্যে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৫ হাজার ১৮৮ কোটি ডলার। এবার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ১২৪ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ওষুধে ১১২ কোটি ডলার এবং ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে হোম টেক্সটাইলে ৯৪০ কোটি ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার, যা গতবারের চেয়ে ১ দশমিক ১১ শতাংশ কম। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এ রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রফতানিতে আগে ৩ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো, এখন আরও একভাগ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে তৈরি পোশাক রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে। সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পোশাক রফতানির ওপর থেকে বেরিয়ে এসে আমাদেন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতে নজর দিতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রফতানি বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসায়িক জটিলতা নিরসন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করা প্রয়োজন।
×