ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির লেনদেন হবে ওটিসি মার্কেটে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৯ জুলাই ২০১৮

তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির লেনদেন হবে ওটিসি মার্কেটে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড ও স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মের বাইরে তালিকাবহির্ভূত অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে লেনদেন করা যাবে। তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর শেয়ার হাতবদল সহজ করতে একটি স্বতন্ত্র লেনদেন প্লাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সর্বশেষ কমিশন সভায় ওটিসি রুলস ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। জনমত যাচাইয়ের জন্য শীঘ্রই খসড়াটি প্রকাশ করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, ওটিসিতে লেনদেনের জন্য পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোও আবেদন করতে পারবে। এজন্য কোম্পানি চাইলে তার পক্ষে আবেদন দাখিলের জন্য একজন মার্চেন্ট ব্যাংকার নিয়োগ করতে পারবে। আবেদন পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ আবেদন গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। স্টক এক্সচেঞ্জের অন্য কোন প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তি কিংবা পুনঃতালিকাভুক্তির তারিখ থেকে অথবা কোম্পানির অনুরোধে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ কোন কোম্পানির ওটিসি সুবিধা স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে। তাছাড়া পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থে বিএসইসি কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জ যে কোন সময় ওটিসির যে কোন কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই শুনানিতে কোম্পানির বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হবে। স্টক ব্রোকার বা ডিলারের মাধ্যমেই ওটিসিতে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রচলিত বিধি অনুসারে কার্যাদেশ নিষ্পত্তি হবে। ওটিসির কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ধরন অনুসারে এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ক্যাটাগরি করা হবে। বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে এক্সচেঞ্জ লেনদেনের ওপর বিভিন্ন ফি, কমিশন ও চার্জ নির্ধারণ করবে। তাছাড়া কমিশনের অনুমোদনক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জ ওটিসির কোম্পানিগুলোর জন্য আর্থিক তথ্য ও প্রতিবেদন সংক্রান্ত শর্তাবলি নির্ধারণ করবে। স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে ‘ওটিসি ব্যবহারিক বিধিমালা’ প্রকাশ করতে পারবে, যাতে সে আইনের বিধি-বিধানগুলো থাকবে এবং এটি এ আইনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আলোচ্য আইনের কোন বিধান সম্পর্কে কোন ধরনের অস্পষ্টতা বা সন্দেহের উদ্রেক হলে কমিশন এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদান করবে। তাছাড়া কমিশন এ আইনের আলোকে নির্দেশনা ও গাইডলাইন জারি করতে পারবে। যে কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে কমিশন বিধি-নিষেধ কিংবা শর্তারোপ করতে পারবে। এ আইনের কোন বিধান লঙ্ঘনের জন্য কমিশন সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। কমিশন এ আইনের যে কোন শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে যে কোন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে অব্যাহতি দিতে পারবে। প্রস্তাবিত রুলসটি কার্যকর হলে এর আগের ২০০১ সালের ওভার দ্য কাউন্টার রুলসটি বাতিল হয়ে যাবে। তবে আগের রুলসের আওতায় গৃহীত যে কোন কার্যক্রম নতুন আইনের আওতায় গণ্য হবে। উল্লেখ্য, স্টক এক্সচেঞ্জের মূল তালিকা থেকে ছিটকে পড়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ওভার দি কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট গঠন করা হলেও বিভিন্ন কারণে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে একটি কার্যকর ও গতিশীল ওটিসি মার্কেট প্রবর্তনের লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত বছর একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আদলে দেশের ওটিসি মার্কেটকে পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ নেয় ডিএসই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ওভার দ্য কাউন্টার বুলেটিন বোর্ড) রেগুলেশন ২০১৭ নামে একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে বিবেচনার জন্য বিএসইসির কাছে পাঠায় ডিএসই। ডিএসইর প্রণীত খসড়া বিধিমালা পর্যালোচনাসহ ওটিসি মার্কেটের উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিএসইসির পরিচালক মোঃ মনসুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিএসইসির উপপরিচালক শেখ মোঃ লুত্ফুল কবীর ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। এ কমিটি ডিএসইর খসড়া বিধিমালাসহ ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার ওটিসি মার্কেটের বিধি-বিধান পর্যালোচনা করে। সবকিছু পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে মালয়েশিয়ার ওটিসি মার্কেটের আদলটিই বাংলাদেশের জন্য বেশি উপযোগী বলে মনে হয়।
×