ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৎস্য উৎপাদনে দেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ জুলাই ২০১৮

মৎস্য উৎপাদনে দেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। চীন ও ভারতের পরেই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অবস্থান ছিল পঞ্চম। বুধবার ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮’ উপলক্ষে মৎস্য ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান এখন ৩.৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৫.৩০ শতাংশ। আর দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক লোক মৎস্য আহরণে জড়িত। ২০১৭-১৮ সালে দেশ প্রায় ৬৯ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস খাতের অবদান, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, রফতানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করে দেশের উন্নয়নের অবদান রাখার বিষয়ে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মৎস সপ্তাহ ২০১৮ পালন করা হচ্ছে। আগামী ২২-২৮ জুলাই পর্যন্ত এই মৎস্য সপ্তাহ পালন করা হবে। এর মধ্যে নানা ধরনের কর্মসূচীও রয়েছে যা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। নানা কর্মসূচীতে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চলার পর আগামী ২৮ জুলাই গণভবন লেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোনা ছাড়ার মাধ্যমে এর সমাপ্তি টানবেন বলেও জানানো হয়। মৎস্য উৎপাদন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশ মাছে সয়ম্ভরতা অর্জন করেছে, যা আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় দেশের জনগণ এখন জনপ্রতি গড়ে ৬২.৫৮ গ্রাম মৎস্যগ্রহণ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, জনপ্রতি দরকার মাত্র ৬০ গ্রাম। জাটকা নিধন রোধের কার্যকারিতার দরুণ ব্যাপক ইলিশ উৎপাদনের কারণে ২০১৭-১৮ সালে প্রায় ৫ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে, ২০০৮-০৯ সালে যা ছিল প্রায় ৩ লাখ টন। মাছের উৎপাদন নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৬-১৭ সালে ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যা ৮৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি। ইলিশ মাছের জিআই সনদপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী মৎস্য খাতের জন্য যথাযথ অবদান রাখায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলেসহ মিডিয়াকর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাটকা নিধন রোধে সহায়তা করায় ২০১৭-১৮ সালে প্রায় আড়াই লাখ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে প্রায় ৪০ হাজার টন খাদ্যসহায়তা এবং ২২ দিন পর্যন্ত মা-ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখায় বিগত ২ বছরে প্রায় ৪ লাখ জেলে পরিবারকে প্রায় ১৫ হাজার টন ভিজিএফ দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। জরিপ জাহাজ ‘আরভি-মীন সন্ধানী’র দ্বারা সমুদ্র জরিপ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইতোমধ্যে আমাদের সমুদ্রসীমায় ২৯৮ প্রজাতির মাছ, ২৩ প্রজাতির চিংড়ি মাছ, ১৬ প্রজাতির ক্রাস্টেপিয়ান ও ১২ প্রজাতির মলাস্কা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রচলিত মাছের বাইরে অপ্রচলিত মৎসপণ্যকে জনপ্রিয় করাসহ উৎপাদন ও রফতানির লক্ষ্যে বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পে গত তিন বছরে ৯৩১টি কাঁকড়া চাষ প্রদর্শনী ও ২৮২টি কুচিয়া মাছ চাষ প্রদর্শনী হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৭৩৬০ চাষিকে কাঁকরা ও কুচিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান। মন্ত্রী আরও বলেন, একজন বৈদেশিক পরামর্শকের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারে একটি আধুনিক কাঁকড়া হ্যাচারি নির্মাণ কাজ চলমান আছে। আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে হ্যাচারিতে কাঁকড়ার (পোনা ক্রাবলেট) উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। দেশের মৎসসম্পদ উন্নয়নে গবেষণা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে গবেষণা ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই মৎস চাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৬০টি লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে পাবদা, গুলশা, মহাশোল, চিতল, ফলি, গুতুম, খলিশা ইত্যাদি ১৮টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষ হচ্ছে। এছাড়াও দেশের অপ্রচলিত মৎসসম্পদ শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি নিয়েও বিএফআরআই কাজ করছে বলেও জানান। মৎস্য খাতের সফলতা ধরে রাখতে কিছু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এর মধ্যে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদের উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়েরর আবাসস্থল উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ, পরিবেশ ও সমাজবান্দব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ, সামুদ্রিক মৎস সম্পদের সহনশীল আহরণ, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মাছ সরবরাহ এবং মৎস্য ও মৎস্য জাত পণ্য রফতানিসহ অন্যান্য। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ রইছউল আলম ম-ল, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ গোলজার হোসেন, বিএফডিসির চেয়ারম্যান দিলদার আহমেদ, বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অন্য কর্মকর্তারা।
×